দিগন্তের আলো ডেস্ক :-
করোনা চিকিৎসা
ইনসেপটার ৩০ লাখ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন হাতে নিয়েছে সরকার
করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় এখনো কোথাও সুনির্দিষ্ট কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। তবে অন্য কিছু রোগে কার্যকর পুরনো কিছু ওষুধ নিয়ে বিশ্বব্যাপী অনেক বিজ্ঞানীই আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন তেমনই একটি আলোচিত ওষুধ, যা প্রধানত ম্যালেরিয়ার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হলেও পরে এটি আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায়ও ব্যবহার করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে। করোনা পরিস্থিতিতে কোনো কোনো দেশের সরকার ওষুধটির দিকে নজর দিচ্ছে এবং এর ব্যবহার ও মজুদ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
বাংলাদেশে এই হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন আগে থেকেই উৎপাদিত হচ্ছে। সরকার এই সুযোগ কাজে লাগাতে এরই মধ্যে দেশীয় কম্পানিগুলোকে এ ওষুধের উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে এবং একই সঙ্গে এ ওষুধ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তা সত্ত্বেও কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের একটি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানকে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ওষুধের চাহিদা পাঠিয়েছে। অন্যদিকে সরকার ওষুধটি প্রয়োজনমতো সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতরণের সুবিধার জন্য দেশীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ইনসেপটা লিমিটেডের কাছ থেকে আগাম ৩০ লাখ এই ওষুধ কিনে সরকারি ঔষধাগারে মজুদ রেখেছে। এ ছাড়া ওই প্রতিষ্ঠান আরো তিন লাখ ওষুধ বিনা মূল্যে সরকারকে দিয়েছে জনস্বার্থে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজির অধ্যাপক ডা. সাইদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসটি একেবারেই নতুন। অনেক পুরনো ভাইরাসের চিকিৎসারও এখন পর্যন্ত পুরোপুরি সুরাহা হচ্ছে না। তবে তুলনামূলক বিবেচনায় কিছু আন্তর্জাতিক গবেষণায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের সাফল্যের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেদিক থেকে বলাই যায় আমাদের কিছুটা হলেও ওষুধের দিক থেকে এই হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন আশা জাগাচ্ছে।’
ইনসেপটা লিমিটেডের উপমহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, চায়না এবং আরো কিছু দেশে প্রাথমিকভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন বেশ সফলতা দেখিয়েছে। দেশে ইনসেপটাসহ মাত্র দুটি কম্পানি এ ওষুধ উৎপাদন এবং বাজারজাত করে। ইনসেপটা ফার্মা এটি বাজারজাত করে আসছে ১৫ বছর ধরে, যা বাজারে ‘রিকোলিন’ নামে পরিচিত। করোনাভাইরাস মোকাবেলার জন্য প্রণীত জাতীয় কর্মকৌশলের মধ্যে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে কভিড-১৯ রোগীর জন্য হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতও আক্রান্ত রোগীদের পাশাপাশি যাঁরা ক্রমাগত করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে আসছেন বা সেবা দিচ্ছেন, তাঁদের জন্যও প্রতিরোধক হিসেবে ওষুধটি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইনসেপটা থেকে ওষুধটি আমদানি করতে চাচ্ছে; কিন্তু দেশের স্বার্থ বিবেচনায়, দেশের মানুষের কথা মাথায় রেখে ইনসেপটা বর্তমানে এই ওষুধের রপ্তানি বন্ধ রেখেছে। এমনকি আমরা আগে থেকে ব্রিটেনে এ ওষুধ রপ্তানি করে এলেও এখন বন্ধ রেখেছি। পাশাপাশি দেশের সব ওষুধের দোকানে পর্যাপ্ত পরিমাণে এর সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে।’
বীকনের অ্যান্টি-ফ্লু ড্রাগ : এদিকে দেশের আরেকটি প্রতিষ্ঠান বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ ফেভিপিরাভি তৈরি করেছে ফেভিপিরা নামে। ওষুধটি ২০১৪ সালে প্রথম জাপানে তৈরি করেছিল ফুজি ফিল্ম তোয়ামা কেমিক্যাল কম্পানি, যা ইবোলা চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়েছে। ব্রড স্পেকট্রাম অ্যান্টিভাইরাল কার্যকারিতার জন্য এটি কভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসায় চীনা কর্তৃপক্ষ পরীক্ষামূলকভাবে উহান ও শেনজেনে ব্যবহার করেছে। অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ ফেভিপিরা করোনাভাইরাস চিকিৎসার সময় কমাতে এবং ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে।
বীকন ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ এবাদুল করীম এমপি জানান, ফেভিপিরার প্রথম ব্যাচ তৈরি হয়েছে, যা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে কভিড-১৯-এ ট্রায়ালের জন্য হস্তান্তর করা হয়েছে। গত ২৮ মার্চ জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে কভিড-১৯ চিকিৎসায় জাপানের স্ট্যান্ডার্ড ট্রিটমেন্টে ওষুধটি অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেন। আরো কয়েকটি দেশ পরীক্ষামূলক ব্যবহারে ইতিবাচক ফল পেয়েছে। ফলে ওষুধটি আশার আলো জাগিয়েছে।