এখনই লকডাউন জরুরি

বাংলাদেশ

দিগন্তের আলো ডেস্ক :-
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে চিকিৎসা পেশাজীবী নেতৃবৃন্দের বৈঠক
দেশের খ্যাতনামা চিকিৎসক, পেশাজীবী সংগঠন, সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা সরকারকে জানিয়েছেন, দেশের সামনে কঠিন সময়। এখনই পুরো দেশ লকডাউন না করলে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে, যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। বর্তমান পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের ওপর দায় না চাপিয়ে পরীক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং জরুরি চিকিৎসাসেবা প্রদানের সুযোগ বাড়াতে হবে।

সোমবার বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) মিলনায়তনে আয়োজিত জরুরি বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সাথে দেশের খ্যাতিমান এসব চিকিৎসক ও চিকিৎসক সংগঠনের নেতারা কথা বলেন। তারা পাঁচ দফা সুপারিশ পেশ করেছেন। চিকিৎসকরা বলেন, সারা দেশে এখনই লকডাউন জারি করা জরুরি। কারণ কমিউনিটিতে করোনার সংক্রমণ ঘটছে।

তারা বলেন, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুহার ১০ শতাংশের ওপরে, যা মহামারী আক্রান্ত দেশগুলোর চেয়ে বেশি। এক দিনে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। চিকিৎসকেরা মনে করেন, বাংলাদেশকে এখন ‘উচ্চ সতর্কতা’ গ্রহণ করতে হবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী। সেভাবে প্রস্তুতি না নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে বাংলাদেশ মেডিসিন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আহমেদুল কবীর বলেন, দেশের সামনে কঠিন সময় আসছে। লকডাউন না করা হলে এই ভাইরাস আগামী ১০ দিনে ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। জাতীয় নিউরোসায়েন্সেস ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর দীন মোহাম্মদ বলেছেন, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এখনই দেশে শক্ত অবস্থান নেয়া প্রয়োজন।

চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার সংখ্যা আরো বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলেন, ছুটি ঘোষণার পর লোকজনের বাড়ি যাওয়া, গার্মেন্ট খুলে তাদের ঢাকায় ফেরা আবার বন্ধ, তাদের ফেরত যাওয়ার কারণে পরিস্থিতি জটিল হয়েছে বলে তারা মনে করেন। কিন্তু ঠিক কতটা ছড়িয়েছে তা পরীক্ষা না করলে বোঝা যাবে না।

তারা বলেন, বৈশ্বিক পরিসংখ্যান বলছে, কমপক্ষে ৪৮ শতাংশ সংক্রমণ হয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে। রোগীরা যদি চেম্বারে আসেন বা বহির্বিভাগে, তাহলে তাদের সেবাদানকারী প্রত্যেক ব্যক্তি এবং অন্যান্য রোগের রোগীরা আক্রান্ত হবেন। স্বাস্থ্যকর্মীরা একের পর এক সংক্রমিত হলে পুরো ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। এ ক্ষেত্রে তাদের সুপারিশ হলো জরুরি বিভাগের সেবা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালী করা এবং ফোনে চিকিৎসাসহায়তা দেয়ার পরিধি বাড়ানো।

বৈঠকে চিকিৎসকরা যারা এই জরুরি পরিস্থিতিতে সেবা দিচ্ছেন তাদের প্রণোদনা দেয়ারও সুপারিশ করেন। জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা: মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন নয়া দিগন্তকে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে দেশে এখনই লকডাউনের সময় হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত চিকিৎসকরা মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেবাদানকারী চিকিৎসকদের সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। এতে তারা উৎসাহিত হবেন। একটি পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরাও চিকিৎসকদের জন্য প্রণোদনার দাবি জানিয়েছি। আমরা বলেছি, তা না হলে ঝুঁকি নিয়ে তারা কাজ করতে উৎসাহিত হবেন কেন? আমরা সরকারের কাছে চিকিৎসকদের সুরক্ষাসরঞ্জাম বাড়াতে বলেছি।

বৈঠকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগের সচিব আলী নূর, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ইকবাল আর্সালান, সাধারণ সম্পাদক এম এ আজিজসহ বিভিন্ন অধিদফতরের মহাপরিচালক, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *