সন্তানের জীবনে মা-বাবার প্রভাব

Uncategorized

শাহাদাত হোসেন দিপু :-
এখনকার শিশুরা অনেক বুদ্ধিমান। তারা ধমকও বোঝে, আদরও বোঝে। কোন কথায় দোয়া আছে আর কোন কথায় শাপ-শাপান্ত করা হচ্ছে বা অভিশাপের সুর আছে তা তারা একেবারে শিশুবয়স থেকেই বোঝে। এক শিশুর বয়স যখন আট মাস, অভিভাবকদের একজন তার কান্নাকাটিতে বিরক্ত হয়ে বললেন, দেবো এক থাপ্পড়, থাম বলছি। শিশুটি কান্না আরো বাড়িয়ে দিল। আরেকজন সাথে সাথেই তাকে খেলনা দিয়ে, কোলে তুলে ছড়া বলে বলে প্রসঙ্গ ভোলাতে শুরু করলেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই কান্না থেমে গেল। কোনটা বুলি আর কোনটা গালি সেটা শুধু শৈশবে নয়, শিশুকালেই তারা সেটা বুঝেন।

বিশিষ্ট শিশুবিশেষজ্ঞ ডা. আহমদ মরতুজা বলেন যে, একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে শত শত সিসিটিভি যেমন ছোটখাটো সবকিছুই রেকর্ড করে রাখে তেমনি নবজাতক অগণিত মস্তিষ্কের সিসিটিভি দিয়ে সবকিছু রেকর্ড করে রাখে। কচি নবজাতককে মা বিরক্তি নিয়ে দুধ খাওয়ালে, কাথা বা ডায়াপার বদলানোর সময় রাগ করলে বা বকা দিলে, তা তার ব্রেনের নিউরোনে জমা থাকে। যখন এই নবজাতক বড় হয়ে শিশু-কিশোর বয়সে পা দেয় তখন মস্তিষ্কে জমানো নেতিবাচকতা, অবহেলা, অসামাজিকতা রাগ, চিৎকার, চেঁচামেচির মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়। মা-বাবা তখন কাঁদেন আর বলেন যে, আমার ঘরে এত বেয়াদব, বেয়াড়া, অমনোযোগী, অসামাজিক সন্তান আল্লাহ কেন দিলেন? আসলে আল্লাহ দেন নি, নবজাতক ও কচি বয়সে শিশুর প্রতি অবহেলা, অসন্তুষ্টি, রাগ, দুর্ব্যবহার শতকলায় পূর্ণ হয়ে পরিণত বয়সে বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে।

একটু ভালো কথা, একটু আশা দেয়া, একটু মমতা-এগুলোই তো দোয়া বলি বা আশীর্বাদ বলি, এর বিভিন্ন রূপ। এসব পেলেই হয়তো আজকের কচি শিশু হতে পারে যুগস্রষ্টা বিজ্ঞানী, শতাব্দীর অভিযাত্রী, অমর কথাশিল্পী, সে হতে পারে মহান নেতা বা বিপ্লবী, হতে পারে আত্মজয়ী বীর বা ধর্মবেত্তা। সে তার অনন্ত মেধা আর যোগ্যতাকে বিকশিত করে হতে পারে আলোকিত মহামানব। আর মা-বাবার দোয়া।

মা-বাবা হিসেবে আমাদের স্নেহ, মমতা, দোয়ার শক্তি যেন এতটাই হয়, যাতে আমাদের সন্তানেরা তাদের ব্যর্থতা, গ্লানিকে ঝেড়ে ফেলে সামনের দিকে এগোতে পারে। সে যেন সবসময় অনুভব করে তার একটি পরিবার আছে। এই পরিবার তার সুখে-দুঃখের সঙ্গী, তার পাশে সবসময় থাকবে। পৃথিবীর আর সব দরজা বন্ধ হয়ে গেলেও মা-বাবার বুক তার জন্যে খোলা। সন্তান তখনই এটি অনুভব করবে যখন তার প্রতি আচরণ, চাহনি, তাকানোতে থাকবে মমতা, ভালবাসা, দোয়া, আশীর্বাদ। তার মাথার ওপরে যখন হাত থাকবে আমাদের।

বিজ্ঞানী আইনস্টাইন-এর ছেলেবেলার ঘটনা আমরা জানি। ক্লাস ওয়ান-এ ভর্তি হতেই তার লেগেছিল নয় বছর। তার স্মৃতিশক্তি এত দুর্বল ছিল যে কিছুই মনে রাখতে পারতেন না। শেষ পর্যন্ত মায়ের অনুপ্রেরণাতেই তিনি লেখাপড়া শিখেছিলেন। টমাস আলভা এডিসনের ছোটবেলার ঘটনা বলি-যখন স্কুল থেকে তাকে বের করে দেয়া হলো ‘পড়ালেখা না পারার’ অজুহাতে, তখন স্কুল কর্তৃপক্ষ তার মাকে একটা চিঠি দিয়েছিলেন। তার মা চিঠি লুকিয়ে এডিসনকে বলেছিলেন, ‘তুমি এতটাই ভালো ও বুদ্ধিমান যে, তোমাকে পড়ানোর মতো যোগ্যতা ওই স্কুলে নেই। মায়ের সেই কথার অনুপ্রেরণায় আমরা পরবর্তীকালে পেয়েছি বিখ্যাত বিজ্ঞানী এডিসনকে।

আসলে সন্তানের জীবন গড়তে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেন মা এবং বাবা। মা-বাবার দোয়া মানে কী? তাদের ইতিবাচক কথা, তাদের ইতিবাচক আচরণ। আর এর ওপরই নির্ভর করে সন্তানের সোনালি ভবিষ্যৎ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *