দিগন্তের আলো ডেস্ক ঃ-
বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে বন্যা কবলিত এলাকার পানি। তবে পানি নেমে গেলেও ভেসে উঠছে বন্যার ভয়াবহ ক্ষতচিহ্ন। স্রোতের তোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, মহাসড়ক, কালভার্ট ভেসে উঠছে। এছাড়া বীজতলা, ফসলের মাঠ, মাছের ঘের, বেড়িবাঁধ, বসতঘর যেন সে ক্ষতের চিহ্ন বহন করছে।
বন্যায় লক্ষীপুরের রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এটা এখনই অনুমান করা যায়, ঠিক কতটুকু ক্ষতি হয়েছে সেটা বলা যাবে পুরো পানি নামার পরে ।
জেলার মান্দারী ইউনিয়নের দক্ষিণ মান্দারী গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়, গেলো কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ডুবে থাকা পুরো এলাকা থেকে আস্তে আস্তে নেমে যাচ্ছে পানি। তবে এর সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন ক্ষতচিহ্ন। দেখা মিলছে বিধ্বস্ত রাস্তাঘাট, কালভার্ট; একই সঙ্গে উপড়েপড়া গাছপালাও।
এ গ্রামের বাসিন্দা আব্দু মালেক বলেন, রাস্তা থেকে কালভার্ট সরে গেছে, রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত, গাছপালা উপড়ে পড়ে বিধ্বস্ত রাস্তায় আটকে আছে। পানি নেমে যাওয়ায় আজ ৩১ আগষ্ট ঘরে ফিরতে দেখি ঘর ভেঙে তছনছ। এখন কি চলাচলের রাস্তায় আটকে থাকা গাছ সরিয়ে নেব নাকি ঘর ঠিক করব; কিছু মাথায় আসছে না। তার ওপর খাবারের চিন্তাও করতে হচ্ছে।
শুধু এটি নয়, এখন উপজেলার প্রতিটি গ্রামের একই চিত্র। পানিতে তলিয়ে গেছে বীজতলা, ফসলের মাঠ, মাছের ঘের। আর বিধ্বস্ত বসতঘরগুলোও যেন বহন করছে ক্ষতের চিহ্ন। এ অবস্থায় কিছু ঘরের পানি নেমে গেলেও, যদি বৃষ্টি না থাকে তাহলে অধিকাংশ ঘরগুলার পানি নামতে আরও ৩ থেকে ৪ দিন সময় লাগতে পারে, আবার পানি নেমে যা-ওয়া ঘরগুলোতে ফেরা মানুষগুলো পড়েছেন নতুন দুশ্চিন্তায়।
দিঘলী ইউনিয়নের বাসিন্দা গফুর উদ্দিন জানান, ৭ দিন কমপক্ষে ৪-৫ ফুট পানিতে বন্দি ছিলেন তারা। পানি ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে; এর সঙ্গে সড়কের ভাঙন, বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও মাছের ঘেরের ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই দৃশ্যমান। যাদের বাড়িঘর এখনও রয়েছে, তাদেরও বাড়িতে গিয়ে রান্না করার সুযোগ নেই, বাড়ির ভেতরের পানি বের করার চেষ্টা করছেন।
চন্দ্রগঞ্জ-ভাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের মৎস চাষি সৈয়দ আলম, ও আবদুল মান্নান বলেন, বিলে কয়েক লাখ টাকার মাছ ফেলেছিলাম; কিন্তু বন্যায় ভেসে গেছে সব। এখন ঘর নিয়ে চিন্তা করব, নাকি বীল নিয়ে চিন্তা করব – কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।
লক্ষীপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন সরকারি – বেসরকারি ও সমাজের বিশিষ্টজনেরা দিগন্তের আলোকে বলেন, এবার স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা প্রত্যক্ষ করলো লক্ষীপুরবাসী । গেলো ২৬ বছরেও এমন বন্যা তারা দেখেনি। ভয়াবহ এ বন্যায় চিংড়ির ঘের, ক্ষেত-খামার, বাগান, ঘরবাড়ি থেকে শুরু রাস্তাঘাট, সড়ক-মহাসড়কের ব্যাপক ক্ষতির চিন্হ আাস্তে আস্তে ফুটে উঠেছে । সবকিছু মিলিয়ে এ ক্ষতি সীমাহীন।
বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করতে সময় লাগবে। তবে জরুরি প্রয়োজনীয় কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে বলে জানান লক্ষীপুর জেলার দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা ।
লক্ষীপুর জেলার ডিসি সুরাইয়া জাহান দিগন্তের আলোকে বলেন বন্যার পানি এখনো পুরোপুরি নেমে যায়নি। জেলার সকল পানি নেমে গেলে তখন বলা যাবে ক্ষতির পরিমাণ কতটুকু এখন যারা ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করবেন, তারা সবাই খাদ্য বিতরণসহ নানা সহযোগিতার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। আর পুরোপুরি পানি নেমে যাওয়ার পর সবার সমন্বয়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ শুরু হবে। তবে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে সময় লাগবে। আর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের পর দুর্গতদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার কাজ শুরু হবে।