দিগন্তের আলো ডেস্ক ঃ-
স্বামীকে হারানোর পর থেকে আফনানকে ঘিরেই ছিল নাছিমা আক্তারের ভুবন। স্বামীর মৃত্যুর দুই মাস পর একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে দুটি কবর ধরে অঝোরে কাঁদছেন তিনি। কবরের একটু দূরে স্বজনরাও হাউমাউ করে কাঁদছেন। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন স্থানীয় লোকজন। ভাইয়ের আকস্মিক মৃত্যুর খবরে বড় বোন জান্নাতুল মাওয়াও শোকে কাতর।
অভাবের সংসারে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করেছিলেন সাদ আল আফনান (১৮)। তিনি ছিলেন লক্ষ্মীপুর ভিক্টোরিয়া কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী।
লক্ষ্মীপুর শহরে সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে গত রোববার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে সাদ আল আফনান নিহত হন। তার বাড়ি লক্ষ্মীপুর শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। তিনি সালেহ আহমদের ছেলে। শহরের ঝুমুর এলাকায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। ওই দিনই দাফন হয়েছে তার মামার বাড়িতে।
আফনানের মামা হারুনুর রশিদ শোক ভুলতে পারছেন না। চোখের পানি মুছে তিনি বলেন, ‘আমার একমাত্র ভাগনেকে কেন মরতে হইল। জোয়ান ছেলেডারে এইভাবে কবরে নামাইলাম। জীবনে ভাবতেও পারিনি। বোনটারে বাঁচানোই এখন কষ্ট হয়ে গেছে।’
হারুনুর রশিদ বলেন, দুই মাস আগে তার বোন নাছিমা সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী স্বামীকে হারিয়েছেন। গত রোববার হারিয়েছেন একমাত্র ছেলেকে। দুই মাস আগে আফনানের বাবা সালেহ আহমদ সৌদি আরবে মারা গেলেও এক মাস আগে তার লাশ দেশে এনে দাফন করা হয়েছে। আফনানকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রথমে মাথায় গুলি করেন এবং পরে পিটিয়ে হত্যা করেন।
গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য নোয়াখালীতে নেওয়ার পথে বিকাল ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয় বলে জানান তিনি।
লক্ষ্মীপুর শহরে সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে গত রোববার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২। তাদের মধ্যে ছয়জন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী রয়েছেন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা চারজন। অন্য দুজনের নাম–পরিচয় জানা যায়নি।
নিহত অন্য তিন শিক্ষার্থী হলেন— লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কাউসার ওয়াহেদ বিজয়, শিক্ষার্থী ওসমান গনি, দালাল বাজার ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মো. সাব্বির।
এ ছাড়া সদর উপজেলার টুমচর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ওই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বার) হারুনুর রশিদ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের গাড়িচালক যুবলীগের কর্মী মো. রাসেল, যুবলীগ কর্মী মো. শাহজাহান, মো. রিয়াজ, পৌর ১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আকিবুল হাসান সিফাত, ছাত্রলীগকর্মী তাওহীদ কবির রাফি নিহত হয়েছেন। ওই দিন সংঘর্ষে পুরো শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে উভয় পক্ষের শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।
সংঘর্ষের একপর্যায়ে দুপুর ১২টার দিকে শত শত আন্দোলনকারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একেএম সালাহউদ্দিন টিপুর বাসার সামনে অবস্থান নেন। এ সময় টিপুর বাসায় সামনে থেকে আওয়ামী নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। সময় শতাধিক আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হন।