দিগন্তের আলো ডেস্ক :
জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল এলাকা পর্যন্ত মেঘনা নদীতে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাত অর্থাৎ রবিবার থেকে ৩০ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত দুই মাস মেঘনা নদীর ১০০ কিলেমিটার এলাকায় সবধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ। এ সময় আইন অমান্যকারীদের জরিমানা ও দুই বছরের জেল এবং উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিটিউটের (নদী কেন্দ্র) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান বলেন, ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে ইলিশের পোনা জাটকাগুলোকে বড় হওয়ার সুযোগ দিতেই মূলত প্রতিবছর এ দু’ মাস মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়ে থাকে।
তিনি জানান, মার্চ-এপ্রিলে দেশের ৬টি অভয়াশ্রমে মোট ৪৩২ কিলোমিটার নদী এলাকায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ। এ ছয়টি অভয়াশ্রম হচ্ছে: মেঘনার চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার, শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর ২০ কিলোমিটার, ভোলার শাহবাজপুর চ্যানেলের ১২০ কিলোমিটার, ভোলা-পটুয়াখালীর তেতুলিয়া নদী ৮০ কিলোমিটার, পটুয়াখালীর আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটার এবং বরিশালের হিজালা-মেহেন্দিগঞ্জের মেঘনার শাখা নদীসহ ৮২ কিলোমিটার।
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্র জানায়, নদীতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা যথাযথভাবে প্রয়োগ হওয়ায় ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে। এবার শীতেও জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে।
গেল বছর লক্ষ্মীপুরে ২০ হাজার মেট্টিক টন ইলিশ উৎপাদন হয়। জাটকা সংরক্ষণে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ২ মাস মেঘনা নদীর ১ শ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে সরকার। এ সময়ে মাছ ধরা থেকে বিরত রাখতে জেলেদের নিয়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক সভা ও সেমিনার করা হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলের বরফ কারখানা বন্ধসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক দিক-নির্দেশনা নিয়ে মাইকিং করা হচ্ছে।
নিষেধাজ্ঞাকালীন লক্ষ্মীপুরের ২৪ হাজার ২৪৭ জন জেলেকে ৪০ কেজি করে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে। জেলায় ৫২ হাজার তালিকাভুক্ত জেলে থাকলেও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৬২ হাজার জেলে রয়েছে।
চাঁদপুর ইলিশ গবেষণাকেন্দ্র সূত্র জানিয়েছে, ইলিশ সংরক্ষণে বছরের ৪ মাস ২৭ দিন মেঘনা ও বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা যথাযথভাবে প্রয়োগ হওয়ায় উৎপাদন বেড়েছে।
গেল বছর চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ভোলা ও নোয়াখালীর হাতিয়া অঞ্চলে প্রায় ৫ লাখ ১৭ হাজার মেট্টিক টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার ফলে মা-ইলিশ রক্ষা পাওয়ায় বেড়েছে উৎপাদন।
একটি মা ইলিশ ২৩ লাখ পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। অক্টোবর মাসে নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন রক্ষা পাওয়া মা-ইলিশগুলো প্রচুর ডিম ছাড়তে পেরেছে। সেই ডিমগুলো জাটকায় পরিণত হয়েছে। এবার মার্চ-এপ্রিল দুই মাস সেই জাটকাগুলো সংরক্ষণের জন্য মেঘনা নদীতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। ২২ অক্টোবরের অভিযান সফল হওয়ায় জেলেদের জালে এবার শীতে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়েছে। সরকারি উদ্যোগ যথাযথভাবে সম্পন্ন হলে সারাবছরই নদীতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যাবে।
অন্যদিকে, ইলিশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে এ দুই মাস নদীতে না যাওয়ার কথা জানালেন লক্ষ্মীপুরের জেলেরা। অবশ্য এ নিষেধাজ্ঞাকালীন সরকারের নিকট খাদ্য ও পুনর্বাসন সহায়তার দাবি জানিয়েছেন তারা।
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, জেলেদের মাছ শিকারে বিরত রাখতে নদীতে কোস্ট গার্ড, মৎস্য বিভাগ ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ অভিযান চালানো হবে। এই আইন অমান্যকারীদের জেল, জরিমানা ও উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
চাঁদপুর ইলিশ গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আনিছুর রহমান বলেন, এবারের শীতে প্রচুর ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। বছরের প্রায় ৫ মাস নদী ও সাগরে নিষেধাজ্ঞার সময়টি ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা যথাযথভাবে প্রয়োগে উৎপাদন আরো বাড়বে।