দিগন্তের আলো ডেস্ক ঃ-
কমলনগরে মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম ‘জামাই শাহজান’। সরকারি আশ্রায়ণকে ঘিরেই চলে তার বাহিনীর অপরাধ জগতের নানা তৎপরতা। উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের চরজাঙ্গালীয়ার সরকারি সোনার বাংলা আশ্রায়ন প্রকল্পের একটি কক্ষকে ব্যবহার করে নিরাপদ আস্তানা তৈরি করেছেন তিনি। আস্তানায় বসে নিরাপদে রাতভর মাদক সেবন, ইয়াবা কারবার, জুয়ার আসর, অপহরণসহ নানা অনৈতিক কর্মকা- করে তিনি গড়ে তুলেছেন এক অপরাধ জগত। তার ভয়ে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না কেউ।
অভিযোগ রয়েছে, জামাই শাহজান দুই সপ্তাহ আগে ‘সোনার বাংলা’ আশ্রায়ণে ঠাঁই নেওয়া হতদরিদ্র পরিবারের কিশোরী কন্যাকে জোরপূর্বক বিয়ে করেন। ওই কিশোরীর মা জানিয়েছেন, জামাই শাহজানের অপরাধ সম্পর্কে জেনেও প্রাণে রক্ষা পেতে নিজের কিশোরী মেয়েকে তার কাছে বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।
সম্প্রতি দুই যুবক ও স্থানীয় এক অটোরিকশা চালককে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে আশ্রয়ণের নিকটবর্তী একটি পরত্যিক্ত বাড়িতে রাতভর নির্যাতন চালিয়ে পরিবারের নিকট লাখ টাকা দাবি করার পর সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যস্ততায় রাতেই পরিবার তাদের ছাড়িয়ে নেয়। অপহরণের পাশাপাশি আশ্রয়ণের নিরাপদ আস্তানায় সমানতালে চলে তার ইয়াবার কারবার। সন্ধ্যা হলেই তার বাহিনীর ওসমান, মুন্না ও মিজানসহ অন্য সদস্যরা আশ্রয়ণের আস্তানায় এসে ভিড় জমান। আড্ডা চলে গভীররাত পর্যন্ত। আশ্রয়ণের এক বাসিন্দা তার এমন কর্মকা-ের বিষয়ে পুলিশকে জানালে ওই ব্যক্তির ওপর প্রকাশ্যে হামলা চালানো হয়।
সোনার বাংলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের কয়েকজন বাসিন্দা ও স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মো. সেলিম জানান, সোনার বাংলা আশ্রয়ণের ৪৭টি ঘরে প্রথমে সবাই বাস করলেও এখন জামাই শাহজানের অতঙ্কে ৮০ ভাগ ঘরের লোকজন ঘরে তালা ঝুলিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। সব সময় তার সঙ্গে অস্ত্র থাকায় কেউ ভয়ে কথাই বলতে পারে না। এমনকি ওই সাবেক ইউপি সদস্য নিজেই জামাই শাহজানের আতঙ্কে দিন পার করছেন বলে জানান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শাহজাহান এলাকায় রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। ২০০৪ সালে চন্দ্রগঞ্জের একটি ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করার সুবাদে সেখানকার মিয়াপুর চৌকিদার বাড়ির আব্দুল মোতালেবের মেয়ে বকুল বেগমকে বিয়ে করে হয়ে যান জামাই শাহজান। এরপর ইটভাটার শ্রমিক থেকে রাজনীতিতে আসেন তিনি। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে নানা অপরাধ কর্মকা- করে এলাকায় হয়ে ওঠে দুর্ধর্র্ষ ক্যাডার। এক সময় জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার আলোচিত দস্যু বাহিনী প্রধান জিসানের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। চাউর রয়েছে জেলার আলোচিত বশিকপুরের একাধিক হত্যাকা-ের সঙ্গেও সম্পৃক্ততা ছিল তার।
সূত্র জানায়, চন্দ্রগঞ্জ, বশিকপুর ও মান্দারী ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম কুমিল্লা-নোয়াখালী-ফেনী ও লক্ষ¥ীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা অপরাধ জগতের নানা বাহিনীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে এক সময় আন্তঃজেলা ডাকাত দলের প্রধান বনে যান শাহজান।
এদিকে সন্ত্রাসী কর্মকা- করার দায়ে অস্ত্র, মাদক, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও হত্যাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় শাহজানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকলেও লক্ষ¥ীপুরের ৬টি মামলার তথ্য হাতে এসেছে। যার মধ্যে কমলনগর থানার এফআইআর নম্বর-৪, লক্ষ¥ীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানার এফআইআর নম্ব ১৬, ১৯/৫৮,৩/১৮, লক্ষ¥ীপুরের সদর থানার এফআইআর নম্বর-৩৯/২০১৪, ৬৩/১৪।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শাহজান জানান, তিনি আগে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও এখন নেই। আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের তিনি কোনো নির্যাতন করছেন না।
আশ্রয়ণের এক কিশোরী মেয়েকে জোরপূর্বক বিয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, আগের স্ত্রীদের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকায় আমি এ বিয়ে করেছি।
কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান জানান, জামাই শাহজান বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তার বর্তমান অপরাধ সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।