দিগন্তের আলো ডেস্ক ঃ-
লক্ষ্মীপুরে ১০ টাকা চাওয়ায় শিশু সন্তানকে হত্যার ঘটনায় মা স্বপ্না বেগমকে (৩০) ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে আসামির পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
দণ্ডপ্রাপ্ত স্বপ্না সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়নের চররুহিতা গ্রামের হাসানুজ্জামানের মেয়ে।
বুধবার (১ মার্চ) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালত ও এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর ১০ টাকা চাওয়ায় শিশু কাউছারকে তার মা স্বপ্না গলা টিপে হত্যা করেন। এর ১০ বছর আগে বাদী রাসেল হোসেনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে স্বপ্নার বিয়ে হয়। তাদের সংসারে কাউছার (৮) ও ছাব্বির হোসেন (৬) নামে দুই সন্তান জন্ম নেয়। ২০১৭ সালে রাসেল চট্টগ্রামের এক নারীকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এ নিয়ে স্বপ্নার সঙ্গে তার কলহ সৃষ্টি হয়। এতে প্রায়ই স্বপ্না বিভিন্ন কারণে তার দুই ছেলেকে মারধর করতেন।
ঘটনার দিন স্বপ্না প্রতিবেশী সেলিনা বেগমের বাড়িতে পিঠা বানাচ্ছিলেন। কাউছার তখন সেখানে গিয়ে তার কাছে কিছু খাওয়ার জন্য ১০ টাকা চায়। টাকা না দিয়ে তিনি ছেলেকে বাড়িতে গিয়ে ভাত খাওয়ার জন্য বলেন। পরে স্বপ্না বাড়ি এসে দেখেন, কাউছার তখনো ভাত খায়নি এবং ওই ১০ টাকার জন্য বায়না করতে থাকে। এতে উত্তেজিত হয়ে তিনি ছেলের গলা টিপে ধরেন। পরে কাউসার মারা গেছে বুঝতে পেরে তিনি অন্য কেউ ছেলেকে হত্যা করেছে বলে প্রচারণা চালান। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় পরদিন রাসেল বাদী হয়ে সদর থানায় হত্যা মামলা করেন।
ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে শিশু কাউছারকে গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রমাণ মেলে। হত্যার পর তার গলায় রশি লাগানো হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২০ সালের ১০ মার্চ স্বপ্নার বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা ও সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল বাশার খন্দকার আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ১০ টাকা চাওয়ায় নিজ ছেলেকে গলাটিপে হত্যা করেন মা। আদালতে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে আসামির বয়স, আচরণ ও আরেক শিশু সন্তান থাকায় তাকে লালনপালনসহ মানবিক কারণে বিচারক প্রভিশনাল রায় দিয়েছেন। এতে আসামি তার বাড়িতেই থাকবেন। এর মধ্যে তিনি কোনো অপরাধে জড়াতে পারবেন না। এটি জেলা সমাজসেবা কার্যালয় তদারকি করবে।