লক্ষ্মীপুর ‘বড় ভাই গ্রুপে’র অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী ‘বড় ভাই’কে খুঁজছে পুলিশ

অপরাদ লক্ষ্মীপুর

দিগন্তের আলো ডেস্ক ঃ-
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জের বালুরটেক এলাকায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে একটি ‘কিশোর গ্যাং’, যাদের দলনেতাকে ধরতে খোদ পুলিশ সুপার অভিযানে গেছেন। প্রায় অর্ধশত কিশোর ও তরুণকে নিয়ে গড়ে তোলা এ দলের নাম ‘বড় ভাই গ্রুপ’। এর নিয়ন্ত্রণে আছেন ওই এলাকার তরুণ আরমান হোসেন (২০)। দলের সদস্যরা তাঁকে ‘বড় ভাই’ সম্বোধন করেন।

এই ‘বড় ভাইকে’ সালাম না দিলে নাজেহাল হতে হয় এলাকাবাসীকে। বৃদ্ধ থেকে শুরু করে যুবকেরা এ দলের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে শতাধিক মানুষ গত শুক্রবার ভবানীগঞ্জের বালুরটেক এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।

নিজেকে ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দেন ‘বড় ভাই’ আরমান হোসেন। তিনিসহ তাঁর অনুসারীদের খুঁজতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। গতকাল রোববার বিকেলে পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজ্জামান আশরাফ নিজেই আরমানকে আটক করতে তাঁর বাড়িতে যান। এ সময় সদর মডেল থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। আরমান পলাতক থাকায় সন্দেহভাজন মো. হাসান নামের এক যুবককে আটক করে পুলিশ।

আরমান হোসেন ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরমনসা গ্রামের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাদিরের ব্রিজ–সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা। ২০ বছর বয়সী এ তরুণের বিরুদ্ধে মাদক সেবন, চাঁদাবাজি, প্রতিপক্ষের ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। তাঁর অন্যতম সহযোগী হিসেবে মো. সাগর, মো. রাব্বি, মো. ফারুক ও মো. রাকিবের নাম বলেছেন স্থানীয় লোকজন।

লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজ্জামান আশরাফ নিজেই আরমান হোসেনকে আটক করতে রোববার তাঁর বাড়িতে যান
লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজ্জামান আশরাফ নিজেই আরমান হোসেনকে আটক করতে রোববার তাঁর বাড়িতে যানছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি আবুল কালাম নামের স্থানীয় এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ‘অনৈতিক সম্পর্কের’ অভিযোগ তুলে তাঁর কাছে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন ‘বড় ভাই গ্রুপের’ সদস্যরা। স্থানীয় দুই ভাই শরীফ উদ্দিন (২৫) ও মোহন (৩) এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করায় বুধবার তাঁদের পিটিয়ে আহত করেন আরমানের অনুসারীরা। তাঁদের অবস্থা এখনো গুরুতর।

হামলার সময় আহত দুই ভাই নুর হোসেন নামের এক ব্যক্তির টেলিকম দোকানে আশ্রয় নিলে সেখানেও হামলা চালিয়ে দোকানে থাকা নগদ টাকা লুট করেন হামলাকারীরা। এ ঘটনায় আরমান হোসেনকে প্রধান আসামি করে ১১ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন আহত ব্যক্তিদের ভাই নুরুল আলম (৪৫)।

আবুল কালাম বলেন, ‘বড় ভাই গ্রুপের অত্যাচারে আমরা এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। ভয়ে মুখ খুলতে পারতাম না, কখন কার ওপর হামলা হয়। কিন্তু এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, তাই অতিষ্ঠ হয়ে প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নেমেছি।’

স্থানীয় বাসিন্দা মো. রিপন খাঁ বলেন, ‘বড় ভাই গ্রুপের’ প্রধান হলেন আরমান হোসেন। মেসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে দ্রুতই গ্রুপের সদস্যরা এক হয়ে যান। আরমানদের বাড়ির সামনে একটি বৈঠকখানা আছে। সেখানেই সবাই মিলে এক হয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে নামেন। এলাকায় বিভিন্ন বাড়িতে মুঠোফোনসহ মূল্যবান মালামাল চুরি হচ্ছে। এ দলের সদস্যরা চুরির ঘটনার সঙ্গেও জড়িত। সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে চাঁদা আদায় করেন তাঁরা। এরপর দাবিকৃত চাঁদা না দিলে নির্যাতন করেন। এমনকি বিয়েবাড়িতেও হামলা চালিয়েছেন এ গ্রুপের সদস্যরা।

লক্ষ্মীপুর সদর থানার ওসি মোসলেহ উদ্দিন বলেন, আরমানকে নিয়ে তাঁর মা–ও অতিষ্ঠ বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। আরমান নিজেকে এলাকায় ‘বড় ভাই’ পরিচয় দিয়ে একটি গ্যাং তৈরি করেছেন। তিনি চাইছেন এলাকায় একটি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে। সেটি কখনো হতে দেওয়া হবে না। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

ওসি মোসলেহ উদ্দিন বলেন, ‘এমন অবস্থা হয়েছে যে তাকে যদি এলাকায় কেউ সালাম না দেয়, তাহলে সে তাদের নাজেহাল করে। বয়স্ক লোকদেরও ছাড়ে না। তাকে নিয়ে বহু অভিযোগ পেয়েছি আমরা। এ জন্য পুলিশ সুপার নিজেই আরমানকে আটকের জন্য ওই বাড়িতে গেছেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *