সাহাদাত হোসেন দিপু ঃ-
চন্দ্রগঞ্জ, মান্দারী, দালাল বাজার, সদর হাসপাতাল সহ লক্ষীপুর সদর উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বাজারসহ সবগুলো বাজারে রয়েছে বৈধ, অবৈধ, অসংখ্য ওষুধের দোকান। কিন্তু রাত হতে না হতেই বন্ধ হয়ে যায় সমস্ত দোকান। মুমুর্ষূ রোগীর জন্য পাওয়া যাচ্ছে না জীবনদায়ী ওষুধ। ফলে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। অন্তত গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলোতে পালা করে ওষুধের দোকান খোলা থাকুক। এমনটাই আবেদন সাধারণ মানুষের।
রায়পুর থেকে লক্ষীপুর এমনকি মান্দারীতেও একই ছবি। রাত দশটা বাজলেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সমস্ত ওষুধের দোকান। এবংকি প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না অভিযোগ উঠেছে। বাধ্য হয়ে হাসপাতালের সামনেই গাড়ি রিজার্ভ করে রাখতে হচ্ছে রোগীর আত্মীয়-পরিজনদের। যাতে প্রয়োজন হলেই তাঁরা দ্রুত প্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়ে আসতে পারেন। কিন্তু কেন রাত হলেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে জীবন রক্ষাকারী সমস্ত ওষুধের দোকান?
বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্য়াসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, ‘এমন অভিযোগ আমাদের কাছেও এসেছে। রাতে আমরা ওষুধের দোকান খোলা রাখার ব্যবস্থাই রেখেছিলাম। রাতে দোকান খোলা রাখলে অনেক অসামাজিক লোকজন এসে চড়াও হওয়ায় দোকানদারদেরও আতঙ্কে থাকতে হয়। আমরাও চাই রাত বলে যেন কোনও মানুষ তাঁর প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া থেকে বঞ্চিত না হন। প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাবো যাতে রোটেশনালি ওষুধের দোকান খোলা রাখার বিষয়টা তারা দেখে। আর দোকান খোলা রাখলে যে অসুবিধাগুলোর মধ্যে দোকানদারদের পড়তে হচ্ছে, সেদিকেও যাতে তাঁরা নজর দেন।’
ই প্রসঙ্গে, মান্দারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন রুবেল পাটোয়ারী ও মান্দারী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান রাজু বলেন, ‘মান্দারী ইউনিয়নসহ আশেপাশের আরও কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষের রাতে ওষুধ পেতে সমস্যা হচ্ছে জানি। এমন অভিযোগ আমাদের কাছেও এসেছে। ন্যায্য মূল্যের দোকানগুলোতেও অনেক ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না বলে আমাদের কাছে অনেকেই অভিযোগ জানিয়েছেন। চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বলেন মান্দারী বাজার ওষুধ ব্যাবসায়ী মালিক সমিতির দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে কথা হয়েছে। ওষুধ না পেয়ে মৃত্যুর ঘটনা যাতে না ঘটে, তার জন্য রাতে ওষুধের দোকান খোলা থাকাটা জরুরি। নিয়মিত যাতে রাতে অন্তত ২ টি ওষুধের দোকান খোলা রাখা যায়, সেই ব্যাপারে দ্রুত আলোচনা করে এর সমাধান করবো।
মান্দারী ইউনিয়নের এক বাসিন্দা ইলিয়াস ইসলাম। তাঁর স্ত্রী লক্ষীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তিনি বলছেন, ‘স্ত্রীকে ডেলিভারির জন্য হাসপাতালে ভর্তি করেছি। কিন্তু রাতে এখানে কোনও ওষুধের দোকান খোলা পাচ্ছি না। রাত দশটা থেকে এগারোটা বাজলেই সমস্ত ওষুধের দোকান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে রেখেছি। কখন কী দরকার লাগে তার জন্য যাতে অন্য জায়গা থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ আনানো যায়। আর্থিক অসুবিধা থাকলেও স্ত্রীর জন্য এটা করতেই হচ্ছে।’ কমলনগর থেকে আসা আধুনিক হালপাতালের রোগীর পরিজনেরাও একই সমস্যায় পড়ছেন। তাঁদেরও বক্তব্য একই। এক রোগীর আত্মীয় জানাচ্ছেন, তাঁর রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এত বড় একটা হাসপাতাল, তার ফার্মেসি বন্ধ থাকে কিকরে। রাত এগারোটার পরে লক্ষীপুর সদর উপজেলার কোথাও একটাও ওষুধের দোকান খোলা নেই যে প্রয়োজনে সেখান থেকে ওষুধ আনা যাবে। এভাবে তো রোগী বিনা ওষুধেই মারা যাবে!’
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক, একজন চিকিৎসক জানান, কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাথে কথা বলব। তাদের অনুরোধ করব এর জন্য একটা বড় অংশের মানুষ যাতে অসুবিধায় না পড়ে, সেদিকে দেখার জন্য।