দিগন্তের আলো ডেস্ক ঃ-
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে চাঁদাবাজি ও মারধরের ঘটনায় মামলা করে বিপাকে পড়েছেন শাহানারা বেগম (৬০) নামের এক বৃদ্ধ। মামলা প্রত্যাহারে তাকে গত কয়েক দিন ধরে চাপ দিচ্ছে বলে অভিযুক্ত মো. মিরাজ ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই বাড়ির আব্দুর রব মিয়ার ছেলে মিরাজ। বাড়িটিতে ১০-১২টি পরিবারের বসবাস হলেও কেউই তার ভয়ে কথা বলতে নারাজ। তাদের কাছে তিনি মূর্তিমান আতঙ্ক। এলাকায় পরিচিতি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে। গত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সদস্য (মেম্বার) হিসেবে ভোট করে পরাজিত হয়েছেন।
ইতোমধ্যে হত্যা, চাঁদাবাজি, মারধর ও দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ বিভিন্ন ঘটনায় তার বিরুদ্ধে থানায় জিডি ও আদালতে মামলার সংখ্যা অন্তত ২০টি। চলতি বছরের ৬ মার্চ লক্ষ্মীপুরের ছায়েদ নামের এক রাজমিস্ত্রী ওই এলাকায় পাওনা টাকা নিতে আসলে তাকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। ১৬ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় কারাগারে তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় নিহতের পিতা আবুল কাশেমের দায়ের করা মামলায় মিরাজও আসামি হয়েছে। ওই যুবককে মিরাজসহ অন্যরা মারধর ও বুকের উপর উঠে হত্যারচেষ্টার অভিযোগ করা হয়েছে।
শাহানারা বেগম (৬০) বলেন, আমার স্বামী আব্দুল মান্নান প্রবাসে থাকা অবস্থায় ১৯৯২ সালে মারা যান। সন্তানদের অনেক কষ্টে মানুষ করি। এক ছেলে মুফতি হিসেবে চট্টগ্রামে কর্মরত ও অপর ছেলে প্রবাসে রয়েছে। জায়গা-জমি নিয়ে মিরাজের পরিবারের সঙ্গে আমাদের বিরোধ চলছে। এ পর্যন্ত মিরাজ, তার বাবা আব্দুর রব ও তার পক্ষের দুর্বৃত্তরা আমার ওপর অনেকবার হামলা চালিয়েছে। মারধরের আঘাত নিয়ে অসংখ্যবার হাসপাতালে গিয়েছি। এ বাড়িতে থাকতে হলে তাকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য দাবি জানায়।
আমি অপারগতা প্রকাশ করলে আমাকে মারধর করে। মামলা করলে পুলিশের তদন্তেও আমার অভিযোগের সত্যতা মেলে। মামলাটি আদালতে সাক্ষ্য পর্যায়ে রয়েছে।
শাহানারা আরও বলেন, ইতোমধ্যে তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে থানায় ২৫-৩০টি জিডি ও বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছি। প্রতিটি তদন্তেই প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু এ পর্যন্ত তাদের দৃশ্যমান কোনো শাস্তি না হওয়ায় দিন দিন তারা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। গত কয়েক দিন ধরে ওই মামলাগুলো প্রত্যাহারের জন্য আমাকে গালমন্দ, হুমকি ও চাপ দিয়ে আসছে। তা না করলে আমাকে হত্যা করে গুমের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থয় আমি আতঙ্কগ্রস্ত ও ভীতিকর অবস্থার মধ্যে আছি। আমি ও আমরা বাঁচতে চাই। শান্তিতে থাকতে চাই।
চরপাতা ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার রাজন হোসেন পাটওয়ারী রাজু বলেন, মিরাজের চলাফেরা স্বাভাবিক নয়। এলাকায় তাকে নিয়ে নানান গুঞ্জন রয়েছে। ওই এলাকাটি রায়পুর ও ফরিদগঞ্জের সীমানায় হওয়ায় অচেনা লোকজনের আনাগোনা একটু বেশিই হয়। এর আগেও সেখানে লক্ষ্মীপুরের এক যুবককে নির্যাতন করা হয়েছে। শাহানারা বেগমের পরিবারটিও তার দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছেন।
অভিযোগের বিষয়ে মিরাজ বলেন, জমি নিয়ে আমাদের দুপরিবারে বিরোধ ও মামলাও চলছে। আমাদের তারা অন্যায়ভাবে হয়রানি করছে। মিথ্যা কথা রটিয়ে সম্মানহানি করে চলেছে। তাদের মারধর ও চাঁদাবাজি এবং হুমকির ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
চরপাতা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মামুনুর রশিদ যুগান্তরকে বলেন, মিরাজ আমাদের দলের সক্রিয় কর্মী। তিনি কোনো পদে নেই। নেতা না হলেও চালচলনে তিনি নেতা। ওই গৃহবধূর পরিবারের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি আমাকে অনেক আগেই জানানো হয়েছিল। তবে ইদানীং কোনো বিষয়ে অবগত নই।
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিপন বড়ুয়া বলেন, জায়গা-জমি নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা কেউ মিরাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই নারীকে হুমকির বিষয়ে এখন পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করা হয়নি।