লক্ষীপুরের ইউপি নির্বাচনী ডামাডোল ও কিছু কথা

লক্ষ্মীপুর

(পর্ব ১)

সাহাদাত হোসেন (দিপু) ঃ-
আমাদেও দেশে নিঃসন্দেহে নির্বাচন একটি মহোৎসব। সারাদেশে ন্যায় পর্যায়ক্রমে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে লক্ষীপুর জেলা উপজেলার সকল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ইতিমধ্যে জেলা উপজেলায় কিছু সংখ্যক ইউনিয়নে নির্বাচন সম্পন্ন ও তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে । সরেজমিনে লক্ষীপুর জেলা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন গুরে স্থানীয় জনসাধারণ ও ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায় প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মিনিমাম ৬ থেকে ৭ জন, আর ওয়ার্ড ভিত্তিক পুরুষ আর মহিলা মেম্বার পদপ্রার্থী অসংখ্য জন। গুনে শেষ করা যাবেনা। তারা আরও বলেন নির্বাচন আসলে দেখা যায় মার্কেটের রেডিমেট প্রোডাক্টের মত অটোমেটিক মেশিনে প্রস্তুত হওয়া রেডিমেট প্রার্থীতে যত্রতত্র গোটা এলাকা সয়লাব। প্রার্থীরা নির্বাচনী যুদ্ধে নামে নিজের উর্বর যোগ্যতাকে খাটো করে একজন আরেক জনের প্রতি কাঁদা ছুড়াছুড়ি আর প্রতিপক্ষকে দুরমুশ করতে।

(আরও পড়ুন ইউপি নির্বাচনে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর কোন বিধি নিষেধ না থাকায় মেম্বার পদে অসংখ্য প্রার্থীর নাম শুনা যাচ্ছে তাদের জীবন বৃত্তান্ত নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেধন)।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দেখা যায়, ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের চেয়ে পক্ষ বিপক্ষের সমর্থক গোষ্ঠীর লোকজন থেকে শুরু করে অনেক সময় খোদ প্রার্থী পর্যন্ত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে একে অপরকে গায়েল করার জন্য । অনেক সময় মৌখিক বাড়াবাড়ি থেকে রুপ নেয় মারামারি, কাটাকাটি, রণক্ষেত্ত, (কিন্তু আমরা ভুলে যাই “আমরা প্রতিপক্ষ হতে পারি, কিন্তু শত্রু নয়”)।

অতীতের নির্বাচনগুলো পর্যবেক্ষন করলে দেখা যায় লক্ষীপুর জেলায় নির্বাচনে বেশিরভাগ প্রার্থীদের মনোভাব, প্রতিপক্ষ মানে তার বাড়া ভাতে ছাই দেওয়া শত্রু।
অথচ প্রার্থীরা বেমালুম ভুলে যায় যে আপনার যেমন অধিকার আছে তারও তেমন অধিকার আছে নির্বাচনের মাঠে প্রার্থী হওয়ার।

যারা নব্য প্রার্থী তারা একগাদা আশার বাণীর মোড়কে অসার বাণী শুনিয়ে যাই। তবে কিছু নব্য প্রার্থীরা কাজ করবেন বলে অনেকেই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। আগে যারা নির্বাচিত হয়েছিল তাদের থেকে শতকরা হিসাবে কিছুসংখ্যক চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা ভালো কাজের মধ্যে দিয়ে এলাকার মানুষের আস্থা কুড়িয়েছেন । কিন্তু অধিকাংশ প্রতিনিধি মানুষকে দেওয়া নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি না রাখায় অসুন্তষ্ঠ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন এলাকার ভুক্তভোগী জনসাধারণ।

তারপরেও তাদের তেল মর্দনকারী শিক্ষিত, আর্ধ শিক্ষিত, কিছু কর্তাব্যাক্তি দল লাউড স্পিকারে চিল্লায়া, চিল্লায়া কান জ্বালাপোড়া করে বলে এত, এত বারের নির্বাচিত সফল অমুক–তমুক।

আর যারা বিগত সময়ে কিংবা চলমান সময়ে চেয়ারম্যান, মেম্বার ছিলেন তারাও বলছেন আমি পাঁচ বছরে আপনাদের অমুক কাজ তমুক কাজ করেছি। সবসময় আপনাদের পাশে থেকেছি। আমার এলাকার এই কাজ ওই কাজ বাকি আছে। আমাকে আরেকবার নির্বাচিত করে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার সুযোগ দিন। টুপি পাঞ্জাবীর দাম বাড়িয়ে তারা খুব বিনয়াবনত হয়ে পাঁচ বছর আগের যে শত্রু ছিল তাকেও সমাদর করছে। গত পাঁচ বছরের ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা চাচ্ছে।

অবশ্যই অনেকেই নিজ এলাকার উন্নয়নের জন্য ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মত নিজের সর্বশ্ব উজাড় করে নিরবধি নিরলস কাজ করেছে। তাদের সংখ্যা নিতান্ত কম।

আসন্ন লক্ষীপুরের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিষয় জানতে চাইলে জেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশাজীবি অনেকেই দিগন্তের আলোকে বলেন,
আগে রাতের আঁধারে প্রার্থীর লোকজন টাকা বিলাতো। এখন দিন দুপুরে আধাঁর ছাড়াই টাকা বিলাই ।

সমাজের সচেতন ও বিবেকবান ব্যক্তিরা জানান সামান্য কটা টাকায় নিজের বিবেককে বিসর্জন দিয়ে পাঁচ বছরের জন্য গোলামের মতো বিক্রি হয়ে যায় অনেকেই, দয়া করে টাকার কাছে বিক্রি না হ’য়ে যোগ্য সৎ নিষ্ঠাবান বিচক্ষণ ব্যক্তিকে আপনার মূল্যবান ভোট দিয়ে নির্বাচন করুন তাতে অন্তত আপনার এলাকা ও সমাজের অনেক উন্নয়ন হবে।

আপনার ভোট খুশি মনে যাকে ইচ্ছা তাকে দিতে পারেন। তবে দেশ ও দশের জন্য যিনি মঙ্গলময় হবেন তাকে ভোটটা দিলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়। মানুষের বিচক্ষণতার পরিচয় দেওয়ার এটাও একটি উত্তম পন্থা বলে মনে করেন সমাজের বিশিষ্টজনেরা ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *