(পর্ব ১)
সাহাদাত হোসেন (দিপু) -:
লক্ষীপুর সদর উপজেলায় প্রতিনিয়ত পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জমির দাম। আর এ কারণেই ভূমি সংক্রান্ত বিরোধও বেড়েছে বহুগুণ। বিরোধে জড়িয়ে বা এ ধরনের ঝামেলা এড়াতে লক্ষীপুর সদর উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোতে নামজারি, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ, বিভিন্ন কেসসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করতে গিয়ে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। ভূমি সংক্রান্ত কাজ করতে গিয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি), তহশিলদার থেকে শুরু করে পিয়নদের পর্যন্ত ঘুষ দিতে হচ্ছে এমনটাই অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী অনেকেই।
ভূমি অফিসে আসা অধিকাংশ ভুক্তভোগীর মুখে একই কথা- হয়রানি আর ভোগান্তি কী তা এখানে না এলে বোঝা যায় না। অফিস নিয়মে প্রত্যেক ধাপে ঘুষ দিয়েই ফাইল টেবিল পর্যন্ত পৌঁছানো হয়। এতে সহযোগিতা করে অফিসের কর্মচারী-দালাল সিন্ডিকেট।
লক্ষীপুর সদর উপজেলার ইউনিয়ন তহশিল অফিসগুলোতে মাসে প্রচুর অর্থ (টাকা) ঘুষ লেনদেন হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে ভূমি সংশ্লিষ্ট সেবা নিতে আসা সরকারি এসব অফিসে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ভূমি মালিকদের।
অভিযোগ উঠেছে, সহকারী কমিশনার (ভূমি), সার্ভেয়ার, তহশিলদার, অফিস সহকারী, পিয়ন-দালাল সবাই ঘুষ বাণিজ্যের সঙ্গে কমবেশি জড়িত। অবৈধ লেনদেনকে ঘিরে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী জালিয়াত চক্র, কর্মচারী-দালাল সিন্ডিকেট। ঘুষ দিয়েই অফিসের অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করাসহ এক দাগের জায়গার মালিক অন্যজনকে করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত এক সপ্তাহ ধরে লক্ষীপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের তহশিল অফিসগুলোতে সরেজমিনে গুরুে দেখা যায়, জমির ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে ঘুষ, দুর্নীতি আর অনিয়মের বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নাম প্রস্তাব, সার্ভে রিপোর্ট, নামজারি, ডিসিআর সংগ্রহ, কেস ও খাজনা দাখিল থেকে শুরু করে সব কিছুতেই এখন ঘুষের কারবার। জমির দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের তহশিল অফিসগুলোতে ঘুষ লেনদেন কার্যক্রম। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কারও তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসা ভুক্তভোগীদের কাছে অনেকটা প্রকাশ্যেই ঘুষের অংক নির্দিষ্ট করে দিচ্ছেন। বলে দিচ্ছেন, ঘুষ না দিলে ফাইল নড়বে না। ঘুষ ছাড়া কোনও কাজই হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
লক্ষীপুর সদর উপজেলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, তার পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৯ শতাংশ জমির নামজারি করতে গেলে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আট হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় আবেদন জমা নেওয়া হয়নি।
ফারুক আহমদ নামের একজন জানান, তিনি তার এক আত্মীয়কে নিয়ে নিজেদের কেনা ও পৈতৃক জমির নামজারি ও জমাভাগ করার জন্য ১২২৯-১২৩০/১৪-১৫ নথিতে আবেদন করেন। এ কাজটি করতে অফিস খরচের নামে ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা তার কাছ থেকে মোট অঙ্কের টাকা দাবি করেন। কিন্তু, তিনি এতে রাজি না হওয়ায় তার নথি দুটি গায়েব হয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন তিনি। অনেক খোঁজাখুঁজি করে আর নথি দুটির সন্ধান পাওয়া যায়নি।
লক্ষীপুর সদর উপজেলা ভূমি অফিসসহ প্রত্যেকটি ইউনিয়ন তহশিল অফিসে রয়েছে দালালদেরও দৌরাত্ম্য।কর্মকর্তাদের নিজস্বভাবে নিয়োগ করা এই দালালরা নিয়ন্ত্রণ করেন ভূমি সংক্রান্ত কার্যক্রমসহ টাকা লেনদেন।
লক্ষীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ মামুনুর রশীদ দিগন্তের আলোকে বলেন, লক্ষীপুর সদর উপজেলার কোন ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে। তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দিগন্তের আলো ডেস্ক