লক্ষীপুরে মুদি দোকানে মিলছে জীবনরক্ষাকারী ওষুধ

অপরাদ লক্ষ্মীপুর সদর

শাহাদাত হোসেন (দিপু) ঃ –
(আরও পড়ুন মান্দারিতে কিস্তিতে সিএনজি বিক্রি করার নামে, ব্লেংক চেক নিয়ে গাড়ির কাগজপত্র নিজের কাছে রেখে, মামলার ভয় দেখিয়ে, রাতারাতি বনে গেছেন কোটিপতি নিঃস্ব হয়ে পথের ভিখারি হয়েছে অসংখ্য মানুষ,বিটি ছাড়া হয়েছেন বহু পরিবার এমন অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে মুখোশ পরা একজন দূর্ণীতিবাজের বিরুদ্ধে )।
লক্ষীপুর সদর উপজেলায় ওষুধ বিক্রিতে জবাবদিহি না থাকায় অধিকাংশ মুদির দোকানে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে ভেজাল, মানহীন, মেয়াদোত্তীর্ণ, জীবনরক্ষাকারী ওষুধ বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি । সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দিন দিন এর প্রবণতা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা মূলত আমাদের প্রশাসনিক দুর্বলতা ও নৈতিকতার অবক্ষয়ের কারণে হয়ে আসছে বলে মনে করেন অনেকেই। বিশেষ করে গ্রাম বা মহল্লার দোকানগুলোতে এ ব্যবসা দীর্ঘদিন যাবৎ চলে আসছে। যেন দেখার কেউ নেই, ভাবার কেউ নেই। সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, সদর উপজেলার প্রায় সবক’টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ভেতরে কয়েক হাজার মুদি দোকানের মধ্যে অধিকাংশ দোকানে এ অবস্থা চলে আসছে।
লক্ষীপুর সদর উপজেলার (৬,৮৪,৪২৫) প্রায় ৭ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য একটি সদর হাসপাতাল, ১৩৫টি ক্লিনিক, ৭টি স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র, ১৪টি পরিবার কল্যান কেন্দ্র, ২টি মাতৃসদন কেন্দ্র, ৫০-৫৫টি প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতাল, এবং সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি ওষুধের দোকানসহ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান থাকার পরও, কেন এই সব জীবনরক্ষাকারী ওষুধ মুদির দোকানে বিক্রি হচ্ছে সেটির সঠিক উত্তর দিতে পারেনি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো মহল। অথচ এসব দোকানে নেশা ও যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট, দামি দামি এন্টিবায়োটিকসহ হাই প্রেসারের অনেক মূল্যবান ওষুধ তারা মজুত রেখে না বুঝেই বিক্রি করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রামের অধিকাংশ মানুষ অসচেতন, নিরক্ষর ও নিম্নবিত্ত হওয়ার কারণে মুদি দোকানদাররা এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে মানুষকে বোকা বানিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা।
মুদির দোকানের পাশাপাশি, এ চিত্র চা-দোকান, টং দোকান ও পানের দোকানেও পরিলক্ষিত হয়। ওষুধের পাশাপাশি সেসব দোকানে স্যানিটারি ন্যাপকিন, প্যাম্পাস ও ব্যান্ডেজ সামগ্রী, জন্ম নিয়ন্ত্রণের ট্যাবলেটসহ বেশকিছু পণ্য কিনতে পাওয়া যায়। এসব পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে তারা এমআরপির ধার ধারে না। নিজেদের ইচ্ছামতো বিক্রি করে। আরো জানা যায়, জীবনরক্ষাকারী ওষুধের মধ্যে মুদি
দোকানদাররা জ্বর, সর্দি-কাশি, ঠাণ্ডা, পেটের ব্যথা, মহিলাদের বিভিন্ন সমস্যা, বাতের ব্যথা ইত্যাদি রোগ থেকে শুরু করে কঠিন ও জটিল রোগের ওষুধও বিক্রি করে থাকেন। তাদের বিক্রির তালিকায় যেসব ওষুধ সাধারণত দেখা যায় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- সিপ্রোফ্লক্সাসিন, এজিথ্রোমাইসিন, টাইমোনিয়াম, ডাইক্লোফেনাক, ড্রোটাভেরিন (নো-স্পা), প্যারাসিটামল, সিটিরিজিন, রেবিপ্রাজল, ওমিপ্রাজল, ইসোমিপ্রাজল, কিটোরোলাক, এসিক্লোফেনাক, ন্যাপ্রোক্সেন, ইটোরিকক্সিব, মেট্রোনিডাজল, ডমপেরিডন, ইত্যাদি জেনেরিকে নামের বিভিন্ন গ্রুপের ওষুধ।
এ বিষয়ে কয়েকজন ওষুধ ব্যবসায়ী জানান, অধিকাংশ মুদি দোকানে শুধুমাত্র জেনেরিকের ওষুধ পাওয়া যায় না। তারা অ্যান্টিবায়োটিক, হাই প্রেসার, ডায়াবেটিক, সরকারি ওষুধসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধ বিক্রি করে থাকেন। পাশাপাশি যৌন উত্তেজক ওষুধও বিক্রি করেন। যেটা মানবদেহের জন্য চরম ক্ষতিকর। রোগীরা না জেনে তাদের থেকে ওষুধ কিনে।
(আরও পড়ুন মান্দারিতে কিস্তিতে সিএনজি বিক্রি করার নামে, ব্লেংক চেক নিয়ে সময়মতো টাকা দিতে না পারলে ৪ লক্ষ টাকার সিএনজিতে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সুধ নিয়েও ফিরিয়ে দিচ্ছে না কারও চেক এমন অসংখ্য অভিযোগের সত্যতা মিলছে, মুখোশ পরা একজন মানুষরুপি অমানুষের বিরুদ্ধে )।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা ও বিভিন্ন বাজারের ড্রাগ এন্ড কেমিস্ট সমিতির কয়েকজন দিগন্তের আলোকে বলেন, ওষুধ ব্যবসায়ীদের মধ্যে ঐক্য না থাকায় আমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছি না। তাছাড়া প্রশাসনের কাছে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ না করলেও, মৌখিক ভাবে অবহিত করেও তাদের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে এই সমস্যার সমাধান কি করে করা যায় সে ব্যাপারে অতিদ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে প্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অচিরেই সমিতির পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দায়ের বিষয়ে পদক্ষেপ নেবো। এতদিন আমরা ওষুধ ব্যবসায়ীরা জোরালো কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করিনি। ফলে, যা হবার তাই হয়েছে। এভাবে চলতে পারে না।
লক্ষীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাছুম দিগন্তের আলোকে বলেন, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ মুদি দোকানে বিক্রি করা মারাত্মক অন্যায়, তিনি আরও বলেন এই বিষয়ে ডিসি স্যারের সাথে কথা বলে দ্রুত এদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
মুদি দোকানে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ বিক্রি বিষয়ে জানতে চাইলে, লক্ষীপুর জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আব্দুল গফফার বলেন, ওষুধ সম্পর্কে কিছু না জেনে একজন মুদি দোকানি কিভাবে তার দোকানে ওষুধ বিক্রি করে, তা-ও আবার এন্টিবায়োটিক, কোনভাবেই একজন মুদি দোকানদার তাঁর দোকানে ওষুধ বিক্রি করতে পারবে না। এমন অসংগতি তুলে ধরার জন্য তিনি সাংবাদিকদের ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, আপনারাও আপনাদের জায়গা থেকে এই সমস্ত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করেন।

(আরও পড়ুন মান্দারিতে কিস্তিতে সিএনজি বিক্রি করার নামে, ব্লেংক চেক নিয়ে, যথাসময়ে টাকা পরিশোধ করতে না পারলে, প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েকটি টাকার উপরে এমন অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে মুখোশ পরা একজন মামলাবাজের বিরুদ্ধে )।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *