সাহাদাত হোসেন দিপু ঃ-
বাংলাদেশ মেডিক্যাল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রেশন ও ছাড়পত্র ছাড়া কেউ ডাক্তার লিখে কোন রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার বিধান না থাকলেও, এবংকি বিন্দুমাত্ত কোন প্রশিক্ষণ না নিয়ে লক্ষীপুরে হরহামেশাই নিজের নামে প্যাড ছাপিয়ে নামের আগে “ডাক্তার” লিখে জেলার বিভিন্ন রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসা সেবা নামে প্রতারণা করে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কিছু অসাধু চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ।
প্রশাসনের তদারকি তেমন একটা না থাকার কারণে জেলা উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বর্তমান শত শত লাইসেন্সবিহীন, নামসর্বস্ব, কোন ডিগ্রি ছাড়াই নামধারী ডাক্তাররা চেম্বার দিয়েছেন। আবার অনেকে নিজেই ডাক্তার সেজে ফার্মেসী দিয়ে বসে আছেন। তারা ঔষধ নীতিমালা তোয়াক্ক না করে এবং প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জীবন রক্ষাকারী ঔষুধ এলাকার বিভিন্ন রোগীদের কাছে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে কিছু নামসর্বশ্ব চিকিৎসকের বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার পৌরসভার বাসষ্ট্যান্ড এলাকা, দক্ষিণ তেমনি , ঝুমুর, সদর হাসপাতালএলাকা, মান্দারী, দালাল বাজার , চন্দ্রগঞ্জ, দত্তপাড়া, আমিনবাজা, রসুল গজ্, মোল্লারহাট, জকসিন, দিঘলী, পুকুরদিয়া, চাদখালী, বাজারসহ, জেলা উপজেলার অধিকাংশ বাজারে শত শত লাইসেন্সবিহীন নামধারী ডাক্তাররা চেম্বার দিয়ে বসে আছেন, বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তারা ডিজিটাল ব্যানার ও চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজের নামে প্যাড ছাপিয়ে নামের আগে “ডাক্তার” লিখে বিভিন্ন ডিগ্রি দেখিয়ে এলাকার অশিক্ষিত ও নিরীহ সাদাসিধে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। এলাকার সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে বছরের পর বছর ধরে চিকিৎসা সেবার নামে প্রতারণার ব্যবসা পরিচালনা করে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা।
বিএমডিসি’র অ্যাক্ট-২০১০ সালে প্রকাশিত গেজেট এর ধারা ২২(১) ও ২৯(১) এর আওতায় বলা আছে ন্যূনতম এমবিবিএস, বিডিএস ডিগ্রীধারী ব্যতীত ও ছাড়পত্র ছাড়া কেউ “ডাক্তার” লিখতে পারবেন না। কিন্তু তারা প্রকৃত ডাক্তার না হলেও এলাকার বিভিন্ন ঔষধ বিক্রয় প্রতিনিধিদেরকে তাদের চেম্বার ডেকে ঔষধ লিখানো নাম করে এবং তাদের প্রমোশনের লোভ দেখিয়ে ওইসব বিক্রয় প্রতিনিধিদের কাছ থেকে মাসিক মোটা অংকের টাকা বা টাকার চেক, দামি গিফটসহ বিভিন্ন উপঢ়ৌকন নিয়ে থাকেন। তারা বিভিন্ন উপঢ়ৌকন নেওয়ার ফলে রোগীদে যেসব ঔষদ প্রয়োজন হয় তার চেয়ে প্রেসক্রিপশনে অধীক ঔষধ লিখে থাকেন এবং প্রেসক্রিপশনে লেখানো ঔষধগুলো কিনতেও বলেন তারা। আবার যেসব ঔষধ প্রেসক্রিপশনে লিখে থাকেন তার বেশীর ভাগ স্থানীয় বড় বড় ফার্মেসীতে পাওয়াও যায়না। এর ফলে রোগীদের অতিরিক্ত টাকা, সময় ব্যায় এবং মাত্রা অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক ঔষধ খাওয়ার ফলে রোগ নিরাময়ের চেয়ে তাদের শরীরে অনেক সমস্যায় পড়েন তারা।
অন্যদিকে জেলা উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে দিন দিন বাড়ছে লাইসেন্স বিহীন ফার্মেসীর সংখ্যা। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় কোনভাবে দুই একটা ওষুধের নাম শিখতে পারলেই একটা ফার্মেসী খুলে নিজেকে অনেক বড়ো ডক্টর দাবি করেন। এলাকাতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ফার্মেসীগুলো। লাইসেন্সবিহীন ওইসব ফামের্সীতে কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই অধিক লাভের আশায় দেদারছে বিক্রি করছেন নিম্ন মানের ঔষধসহ বিদেশি ওষুধও। এলাকার খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষেরা সামান্য অসুস্থ হলেই ওইসব ফামের্সী নিকট থেকে নিম্ন মানের ঔষধ নিয়ে খেয়ে আরো জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফার্মেসী ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে প্রেসক্রিপশন বা প্রেসক্রিপশন বিহীন ঐসব ওষুধ বিক্রি করে দ্বিগুণ মূল্যও আদায় করছেন। আবার ঐসব ফার্মেসী ব্যবসায়ীরা ডাক্তার হিসেবেও এলাকার বিভিন্ন রোগীদের সেবা দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
জেলার মান্দারী ইউনিয়নের ভুক্তভোগী একজন রুগী বলেন গত কয়েক দিন আগে সকালে হঠাৎ করে আমার পেটের ব্যথা হয়েছিল। কোন উপায় না পেয়ে স্থানীয় এক হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে ব্যথার বিষয়ে বললে তিনি তার ফামের্সী থেকে কয়েকটি ঔষধ দিয়ে খেতে বলেন। আমি সেই ঔষধগুলো খাওয়ার ফলে একটু পরে আরও বেশী করে পেটের ব্যথা শুরু হয়। পরে তিনি ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন।
লক্ষীপুর জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আব্দুল গফফার দিগন্তের আলোকে বলেন,এই জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ভুয়া ডাক্তারদের উপদ্রব বেড়ে গেছে এই কথা সত্য। আর সেইসঙ্গে লাইসেন্সবিহীন ফামের্সী ব্যবসায়ীরা প্রেসক্রিপশন ছাড়া নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি করে ক্রেতাদের কাছ থেকে দ্বিগুণ মূল্যে অর্থ আদায় করছেন বলে এমন অভিযোগ উঠেছে । আবার একই ফার্মেসীতে মানুষের ঔষধ,ভেটেনারি ঔষধ এবং শিশু খাদ্যও তারা বিক্রি করছেন। তালিকা করে এদের বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে ভ্রাম্যমান অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে তিনি হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন।লক্ষীপুর জেলার সিভিল সার্জন