দুঃসাধ্যসাধনে অনন্য শেখ হাসিনা

বাংলাদেশ

 

দিগন্তের আলো ডেস্ক :-

রাজনৈতিক তীব্র বিভাজন, দারিদ্র্য এবং বিপুল জনসংখ্যার ছোট আয়তনের একটি দেশ বাংলাদেশ। এখানে পদে পদে সমস্যা, সংকট, ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হয়, উন্নতির চাকা সচল রাখতে হয়। এ দেশে প্রধানমন্ত্রীর পথচলা কুসুমাস্তীর্ণ নয়। এই কণ্টকাকীর্ণ পথে অসামান্য দৃঢ়তায় বহু অসাধ্য সাধন করে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এইতো মাত্র বছর পনেরো আগেও এ দেশে অসম্ভব মনে করা হতো—এমন অনেক কিছুই তিনি সম্ভব করে দেখিয়েছেন নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল থেকে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং অনড় থেকে তা সফলভাবে বাস্তবায়নে শেখ হাসিনার মতো নজির এ দেশে আর নেই।

শধষবৎশধহঃযড়গত চার দশক আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে টানা তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা এর আগেও এক মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। দল ও রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুদায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন সময়ে বহু সাহসী ও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের অনেক কেন্দ্রীয় নেতাও শেখ হাসিনার ওই সব সিদ্ধান্ত ঠিক হচ্ছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহের দোলাচলে থাকতেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে, অবিচল থেকে শেখ হাসিনা ঠিকই তাঁর লক্ষ্য পূরণ করে ফেলে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দেশের মাটিকে খুব ভালোভাবেই চেনেন। উনার রাজনীতি হলো জীবনের পাঠশালার অভিজ্ঞতা। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা আজকের যে অবস্থানে এসেছেন সেই পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে তিনি আজকের ইস্পাতকঠিন নেতায় পরিণত হয়েছেন। মাঝেমধ্যে মনে হয়, তিনি ঢেউয়ের চূড়ায় খেলছেন। একটা ঢেউয়ের চূড়া থেকে আরেকটা চূড়ায় নৌকা পৌঁছে দিচ্ছেন নিপুণ দক্ষতায়। দক্ষ মাঝির মতো কঠিন বন্ধুর পথ পাড়ি দিচ্ছেন।’

প্রধানমন্ত্রীর সাহস ও দৃঢ়তার স্মৃতিচারণা করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘তখন এরশাদ ক্ষমতায় আসি আসি করছেন। শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে ২৯ মিন্টো রোডে নেওয়া হলো। সঙ্গে আমি ও সাহারা খাতুন ছিলাম। শেখ হাসিনাকে নানাভাবে সমঝোতার জন্য কঠিন চাপ দেওয়া হলো, কিন্তু তিনি কিছুতেই রাজি হলেন না। এখন থেকে প্রায় চার দশক আগেও তিনি খুবই দৃঢ়চেতা নেতা ছিলেন।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে অনেকেই বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার না করা হলে নির্বাচন করা এবং পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। প্রধানমন্ত্রী প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, কৌশল এবং সর্বোপরি সাহসের মাধ্যমে সব পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন। বিভিন্ন ইস্যুতে প্রমাণ করেছেন যে তিনিই সঠিক ছিলেন। হেফাজতের আন্দোলন, বিএনপির আগুন সন্ত্রাস মোকাবেলার মতো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন খুবই দৃঢ়তার সঙ্গে।’

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সরকারের কর্মসূচি নেওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি অনেক চাপ উপেক্ষা করেছেন। কৃষিতে ভর্তুকি না দেওয়ার জন্য বিদেশিদের অনেক চাপ ছিল। কিন্তু তিনি দৃঢ়ভাবে বলেছেন, কৃষিতে আমি ভর্তুকি দিচ্ছি না, কৃষিতে বিনিয়োগ করছি। এর ফল কিন্তু আমরা এখন পাচ্ছি। কৃষিতে আমরা এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ।’ তিনি আরো বলেন, ‘আইনবহির্ভূতভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ আঁকড়ে থাকা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সরানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অনেক কঠিন ছিল। ড. ইউনূসের পক্ষে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন কল করেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ থেকে টেলিফোন এসেছে। এই ইস্যুতে পদ্মা সেতুতে বিদেশি অর্থায়ন বন্ধ হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাঁর সিদ্ধান্তে অবিচল ছিলেন। বিশ্ব অর্থনীতির মোড়ল, শক্তিধর দেশকে মোকাবেলায় পিছপা হননি প্রধানমন্ত্রী। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে বসবাস করতে না দেওয়া, বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য মওদুদ আহমদকে তাঁর অবৈধ দখলে থাকা বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার মতো দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতেও পিছপা হননি তিনি। তিনি বিধি-বিধান ভঙ্গ করে কাউকে রাজনৈতিক সুবিধা দেওয়ার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘নেতা হিসেবে উনি এ দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য যেটা ভাবতেন, বুঝতেন, প্রয়োজন মনে করতেন সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য যত বাধা-বিপত্তিই আসুক, সেগুলো দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবেলা করতেন। উনি যেটা সঠিক মনে করেন সেটা বাস্তবায়নে কারো কথায় বা সমালোচনার ভয়ে পিছু হটেন না।’ তিনি আরো বলেন, ‘অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে উনাকে বহু ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হয়েছে। তাঁর অনেক সিদ্ধান্তের অনেকে তাত্ক্ষণিকভাবে সমালোচনা করেছেন। আমরা হয়তো অনেকে ভেবেছি যে এই কাজ উনি না করলেও পারতেন বা এই কথা উনি কেন বলতে গেলেন। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে দেখা গেছে তিনিই সঠিক ছিলেন। তিনি কারো সমালোচনা গায়ে মাখেন না। নিজের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেন। এটাই একজন সাহসী নেতার পথ। এই পথে চলেছেন বলেই তিনি আজকে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ববাসীর কাছেও একজন অনন্য নেতায় পরিণত হয়েছেন।’

বাধার পাহাড় ভাঙতে পারেনি শেখ হাসিনার দৃঢ়তা

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এ দেশেরই যে গোষ্ঠী হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটসহ নানা অপরাধে লিপ্ত হয়েছিল, এ দেশের মাটিতে একদিন তাদের বিচার হবে, এটা যেন অবিশ্বাস্য হয়ে উঠেছিল। যুদ্ধাপরাধীরা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল, মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছিল। এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা এবং বিচারের রায় বাস্তবায়ন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন শেখ হাসিনা। তিনি এই বিচার ও রায় বাস্তবায়ন না করতে দেশে ও বিদেশে ব্যাপক চাপের মুখে পড়েন। বহু প্রভাবশালী রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় কার্যকর না করতে শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করা হয়। এর পরও পিছু হটেননি তিনি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় বাস্তবায়ন করে জাতিকে দায়মুক্ত করেন তিনি।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যারা হত্যা করেছিল, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতেও নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল ছিলেন শেখ হাসিনা। নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তিনি সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেননি। খুনিদের বিচার ও রায় কার্যকর করে যাচ্ছেন।

সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সাহসী সিদ্ধান্ত ও দৃঢ়তার অসাধারণ নজির। দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায়। এরপর এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না বলে দেশ ও বিদেশের বহু বিশেষজ্ঞ মতামত দেন। কিন্তু শেখ হাসিনা লক্ষ্যে অবিচল থেকে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন। এ ঘটনা বিশ্বব্যাংকের মতো প্রভাবশালী একটি সংস্থার জন্য চপেটাঘাত স্বরূপ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *