দিগন্তের আলো ডেস্ক :-
আগামী ২৮ জুলাই অনুষ্ঠেয় ঢাকা-১৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ চলছে। মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্তত ৩৪ জন নানাভাবে চেষ্টা-তদ্বির করছেন। এর মধ্যে অনেকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে চান। একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী ইতিমধ্যে শতকরা আট ভাগ কমিশন দিয়ে হুন্ডিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে মালয়েশিয়া থেকে বড় অঙ্কের টাকা এনেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থা এই ধরনের তথ্য পেয়েছে। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
এদিকে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আগামীকাল শনিবার সকাল ১০টায় গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। জানা গেছে, বিএনপির দুই জন নেতাও আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র কিনতে গিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ না থাকায় তাদের কাছে আবেদনপত্র বিক্রি করা হয়নি। এই দুই নেতা হলেন এখলাস উদ্দিন মোল্লা ও মনোয়ার হোসেন ডিপজল।
নানা সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর এই আসনে প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি টাকার চাঁদা উঠে। পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মাদক ব্যবসা, গরুরহাট, গাবতলী বাস-টার্মিনাল, মিরপুর শাহ আলী মাজার, মাজারের সামনে ও বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের দেওয়াল ঘেঁসে গড়ে তোলা কাঁচামালের আড়ত, বুড়িগঙ্গা তীরের কয়লাঘাট, পাথরঘাট, সিমেন্টঘাট, বালুঘাট ও সারঘাট; শাহ আলী মাজারের বিপণিবিতান, বেসরকারি স্কুল-কলেজ, একাধিক বাসস্ট্যান্ড, ট্রাক টার্মিনাল, টেম্পুস্ট্যান্ড ও ফুটপাতের দোকান, বড় বড় শপিংমল, তুরাগ নদীর বেড়ি বাঁধে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বিনোদন কেন্দ্র, বোটানিক্যাল গার্ডেন-মিরপুর চিড়িয়াখানার ইজারা প্রভৃতির দখল ও আধিপত্য ঠিক রাখতে এসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকে নৌকার মনোনয়ন পেতে তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই সব স্থান থেকেই প্রতিদিন দুই কোটি টাকার চাঁদা আসে।
সূত্র জানায়, নৌকার মনোনয়ন কিনতে আগ্রহী এক নেতার মালয়েশিয়ায় অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট-গাড়িসহ বিপুল অর্থ-সম্পদ আছে। বিভিন্ন সময় টাকা পাচার করে মালয়েশিয়ায় তিনি সেকেন্ড হোম করেছেন। ঢাকা-১৪ আসনের মনোনয়ন পেতে তিনি এখন মরিয়া। এ জন্য বিদেশ থেকে অবৈধ পথে টাকা এনেছেন। সেই টাকা নিয়ে বিভিন্নভাবে দৌড়ঝাঁপ করছেন। জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় অবস্থিত শতাধিক বাঙালি হুন্ডি ব্যবসায় জড়িত। এদের মধ্যে হুন্ডি ব্যবসার শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। তাদের মাধ্যমেই টাকা এসেছে বলে জানা গেছে।
ঢাকা-১৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আসলামুল হক, কুমিল্লা-৫ এ দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু এবং সিলেট-৩ এ মাহমুদুস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে আসন ৩টি শূন্য হয়। গত ৪ জুন থেকে ১০ জুন পর্যন্ত ছয় দিন মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র বিতরণ করে আওয়ামী লীগ। একই সময়ে জমাও নেওয়া হয়। তিন আসনের মধ্যে ঢাকা-১৪ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন ৩৪ জন।
এছাড়া কুমিল্লা-৫ আসনে ৩৫ জন এবং সিলেট-৩ আসনে ২৫ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। প্রয়াত তিন সংসদ সদস্যের সহধর্মিনীরা মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র ক্রয় করে জমা দিয়েছেন। ঢাকা-১৪ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, দারুস সালাম থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা কাজী ফরিদুল হক হ্যাপী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের চৌধুরী, ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক এ বি এম মাজহারুল আনাম, সদস্য দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের এক নেতার আত্মীয় আছেন একজন, যিনি মনোনয়ন পেতে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন।
মাইনুল হোসেন খান নিখিল গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঢাকা-১৫ আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। এস এম মান্নান কচি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছিলেন। মনোনয়ন প্রত্যাশী আরেক নেতার নাম পাপিয়াকান্ডে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে এলে তিনি এক সময় রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। তিনিও মনোনয়ন পেতে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন। আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী নারী নির্যাতনের অভিযোগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কয়েকদিন আগে মুক্তি পান। তিনি দৌড়াচ্ছেন টাকা নিয়ে। একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী একজন সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা। তদবির ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে মোটা টাকা কামিয়েছেন এবং সেই টাকা দিয়ে মনোনয়ন পাবেন বলে বিভিন্ন মহলে বলে বেড়াচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, ঢাকার মিরপুর, শাহআলী ও দারুস সালাম থানা, রূপনগর থানার আংশিক এবং সাভার উপজেলার কাউন্দিয়া ইউনিয়ন নিয়ে ঢাকা-১৪ আসন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ নং ওয়ার্ড এ আসনের অন্তর্ভুক্ত। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এসব এলাকা ঢাকা-১১ আসনভুক্ত ছিল। ২০০৮ সালে সীমানা পুনর্বিন্যাস করে ঢাকা-১১ ভেঙে ঢাকা-১৪, ১৫ ও ১৬ আসন গঠন করা হয়। ওই বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রথমবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান আসলামুল হক। প্রথমবার প্রার্থী হয়েই বিএনপির এস এ খালেককে পরাজিত করেন তিনি। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে এমপি নির্বাচিত হন তিনি।