ধেয়ে আসছে ইয়াস উপকূলজুড়ে আতঙ্ক

বাংলাদেশ

দিগন্তের আলো ডেস্ক :-
প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আরো গতিবেগ বাড়িয়ে উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। শক্তিশালী এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর রয়েছে উত্তাল। বাড়ছে বাতাসের গতিবেগ। এতে উপকূলের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে থেমে থেমে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়াও বইছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের এক বছর কাটতে না কাটতেই ফের ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ধেয়ে আসার খবরে উপকূলজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে সারা দেশে সব ধরনের নৌযান বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। গতকাল বিকালে এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে গতকাল সকাল থেকে উপকূলে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হয়েছে।
এতে নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে তিন থেকে পাঁচ ফুট পর্যন্ত পানি বেড়েছে। বেশকিছু এলাকায় তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, দোকানপাট ও ফসলি ক্ষেত। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে। তবে সন্ধ্যা নাগাদ প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া, বৃষ্টি আর বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে সমুদ্র তীরে। জোয়ারের পানি ঢুকছে নিচু এলাকা এবং চরাঞ্চলে। এরইমধ্যে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বেশকিছু এলাকা। ভোলার মনপুরায় বাঁধ ভেঙে এবং জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে ১৫টি গ্রাম। এতে চর কুকরি-মুকরি, ঢালচর, চর পাতলাসহ আশপাশের ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে খাবার পানির সংকট। মোংলায় গতকাল দুপুরের পর থেকেই দেখা দিয়েছে ঝড়ো হাওয়া আর বৃষ্টিপাত। সেইসঙ্গে সাগর ও পশুর চ্যানেল বেশ উত্তাল থাকায় সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার সব জেলেকে দ্রুত নিরাপদে সরিয়ে নিতে মাইকিং করছে কোস্টগার্ড। পটুয়াখালীতে জোয়ারের তোড়ে কলাপাড়ার লালুয়া এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ ভেঙে ৯টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় সংবাদ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বাগেরহাট জেলার শরণখোলার বলেশ্বর, মোরেলগঞ্জের পানগুছি, মোংলার পশুর, ভৈরব, দড়াটানাসহ সকল নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে আড়াই ফুট উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গতকাল বিকালে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস সম্পর্কিত আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১২ নম্বর বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমের সময় খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম জেলাগুলোয় এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোয় ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিসহ ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আরো ঘনীভূত হয়ে ও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে আজ দুপুর নাগাদ উত্তর উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। গতকাল বিকাল ৩টার দিকে এটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। পৌনে ৪টার দিকে এটি উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকট সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *