দিগন্তের আলো ডেস্ক :
লক্ষ্মীপুরে নিবন্ধনহীন একটি এনজিও’র ফাঁদে পড়ে ৪ শতাধিক গ্রাহক প্রতারণার শিকার হয়েছেন। গ্রাহকদের সহজ শর্তে অধিক টাকা ঋণ দেওয়ার কথা বলে সঞ্চয় সংগ্রহ করার পর প্রতিষ্ঠানটি পালিয়ে যায়। ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগ, ‘পল্লী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন’ নামের এনজিওটি গ্রাহকের সঞ্চিত প্রায় ১ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়। এনজিওটির সাইনবোর্ডে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত’ কথাটি উল্লেখ করা থাকলেও এটি নিবন্ধনহীন একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জেলা শহরের মেহেরখা সড়কের একটি আবাসিক ভবনে ‘পল্লী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন’-এর কার্যালয়। একটি সাইনবোর্ড ও গ্রাহকদের মন্তব্যের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। এই অফিসের কর্মকর্তা মো. রুবেল, হিসাবরক্ষক জামাল সিকদার এবং একজন মহিলা মাঠকর্মী ছিলেন। রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঋণ নিতে গিয়ে সংস্থাটির অফিসে তালা ঝুলতে দেখেন গ্রাহকরা। এসময় ঘটনাস্থলে ২০ জনের অধিক গ্রাহক উপস্থিত ছিলেন। তারা এনজিও কর্তৃপক্ষের মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ভুক্তভোগী গ্রাহকদের ধারণা, ঋণ দেওয়ার ভয়ে রাতের আঁধারে ‘পল্লী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন’ উধাও হয়।
‘পল্লী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন’ এর অফিসের সামনে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রকল্পের নামে দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্মীপুরের গ্রামাঞ্চলে গ্রাহক সৃষ্টি করে সঞ্চয় আদায় করছিল ‘পল্লী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন’। নিবন্ধনহীন প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কেন্দ্র স্থাপন করে বিভিন্ন সময় নানা কর্মসূচি পালন করে, যাতে গ্রাহকরা আকৃষ্ট হয়। তারা প্রতিটি বাড়িতে এক একটি কেন্দ্র ঘোষণা করেন। এরপর এনজিওটির কর্মীরা পাশ বই ব্যবহার করে সঞ্চয় আদায় শুরু করেন। সম্প্রতি সহজ শর্তে ১-৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার কথা বলে প্রায় ৪ শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে এককালীন ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় আদায় করেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে এসব গ্রাহককে ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। বিভিন্ন অজুহাতে গত ১৫ দিন অতিবাহিত করা হয়। এখন এনজিওটির হদিস পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর, দত্তপাড়া ও হাজিরপাড়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে এনজিওটি কার্যক্রম পরিচালনা করে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।
প্রতারণার শিকার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের নুরুল হুদা, শিপন ও লোকমান জানান, ১ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা বলে পল্লী উন্নয়ন ফাউন্ডেনের কর্মকর্তা রুবেল ও কোষাধ্যক্ষ জামাল সিকদার ও মাঠকর্মী একজন মহিলা তাদের কাছ থেকে ১০ হাজার ১৫০ টাকা হারে জামানত নেন। যা ৫ হাজার টাকা হারে ৫ মাসে ২২ কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। রবিবার ঋণের টাকা প্রদান করার কথা ছিল। কিন্তু টাকা নিতে এসে দেখি কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। পরে যোগাযোগের জন্য কর্মকর্তা রুবেলের মোবাইল নম্বরে (০১৪০৮১৫১৬৪২) কল করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন পাওয়া যায়।
বটতলী গ্রামের আবদুর রহমান জানান, পল্লী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের লোকজন বটতলী কোটাবাড়ি এলাকার ৪টি পরিবারকে ঋণ দেওয়ার কথা বলে ৪০ হাজার টাকা জামানত নেয়। কিন্তু এখন ঋণের টাকা নিতে এসে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ ঘটনায় তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে পল্লী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন কার্যালয় অবস্থিত আবাসিক ভবনটির মালিক মো. ফারুক বলেন, দু’দিন আগে অগ্রিম ১০ হাজার টাকা দিয়ে অফিস ভাড়া নেয় এনজিওটি। এখন পর্যন্ত ভাড়া চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়নি বলেও জানান তিনি।
জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বশির আহমেদ পাটওয়ারী বলেন, পল্লী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন নামে আমাদের তালিকাভুক্ত কোন এনজিও বা ঋণদান সংস্থা নেই। তবে গ্রহকরা অভিযোগ করলে এসব প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্যদিকে গ্রাহকের অসচেতনতা আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তার কারণে প্রতারক চক্র গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার সুযোগ পেয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।