দিগন্তের আলো ডেস্ক ঃ-
শুধু চাকরির পেছনে না ছুটে স্বাবলম্বী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার দুপুরে আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এক ভিডিওবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেকোনো ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া শিখে শুধু চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেরা যদি মৎস্য খামার করে, মাছ উৎপাদন করে এবং সেটা যদি বিক্রি করে, তাহলে সে স্বাবলম্বী হতে পারে।’ তিনি বলেন, আমরা সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি, সেখানে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলার বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ শুরু করেছে। মানুষের খাদ্য-পুষ্টি নিশ্চিতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পকে। সেখানে মাছ প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাত করার সুযোগ থাকছে। যুবসমাজ বেকার না থেকে বিনা জামানতে কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে।
শেখ হাসিনা বলেন, খাল-বিলসহ দেশের জলাধারগুলো সংস্কারের কাজ চলছে। দেশে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ২৭ লাখ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্য থাকলেও এখন ৫০ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন শুরু হয়েছে। ইলিশ উৎপাদনে এক নম্বর অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশের মানুষ এখন খাদ্য ও পুষ্টিহীনতায় ভুগছে না। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করছে। আমরা সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে চাই। জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে বিশে^র বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বাংলাদেশÑ যোগ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলেই মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয় উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যখনই ক্ষমতায় এসেছে, দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে গেছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে। আমরা ’৯৬ সালে যখন সরকারে আসি, ’৯৮ সালেই বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তুলি। দ্বিতীয়বার যখন সরকারে আসি, তখনও আমাদের লক্ষ্যপূরণ করি এবং যখন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করি, সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যের সঙ্গে পুষ্টিও যাতে যোগ হয়, সে ব্যবস্থাও নিই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্য তালিকায় সবচেয়ে নিরাপদ পুষ্টি আমাদের মাছই দেয়। একটা মানুষ যদি ৬০ গ্রাম মাছ খেতে পারে, তবে তা তার জন্য যথেষ্ট। আমরা সেখানে মাথাপিছু অন্তত ৬২ গ্রাম পর্যন্ত উন্নীত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সেসঙ্গে ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হচ্ছে। মৎস্য উৎপাদন বাড়াতে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ নদী-নালা, খাল-বিলের দেশ। বাংলাদেশে শত শত নদী রয়েছে। তার ওপর আমাদের যত খাল-বিল বা জলাধার, আমরা ইতোমধ্যে সেগুলো সংস্কারে কাজ করে যাচ্ছি। সেখানে যাতে আরও বেশি পরিমাণে মাছ উৎপাদন হয়, সে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মাছের উৎপাদন যেখানে ২৭ লাখ মেট্রিক টন ছিল, সেখানে এখন প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টনের কাছাকাছি উৎপাদন করা শুরু করেছি। সে সঙ্গে ইলিশ উৎপাদনে আমরা কিন্তু এখন পৃথিবীতে এক নম্বর দেশ। যেকোনো কারণেই হোক আমরা ইলিশ উৎপাদনে ব্যাপক পদক্ষেপ নিই। তিনি বলেন, মাছের প্রজননের সময় আমরা মৎস্যজীবীদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে থাকি। তাদের খাদ্যসহায়তা দেই। প্রত্যেককে প্রতি মাসে বিনাপয়সায় খাদ্য দিয়ে থাকি। চাল দিয়ে থাকি। সেসঙ্গে ঝাঁকায় করে মাছের চাষ, সে ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি বা বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে থাকি, যেন মৎস্যজীবীরা কোনো রকম কষ্ট না পায়।
শেখ হাসিনা বলেন, মৎস্যজীবী লীগকে বলব, আমাদের এ সংগঠনটা যেন আরও সুসংগঠিত হয়। সে সঙ্গে যুবসমাজ যেন মৎস্য উৎপাদনে আরও এগিয়ে আসে, সেদিকে একটু বেশি দৃষ্টি দিতে হবে। এখানে একটা বিশাল কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়ে গেছে। কাজেই সে সুযোগটাকে কাজে লাগাতে হবে।
মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি সায়ীদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেনÑ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ।