দিগন্তের আলো ডেস্ক :
ফর্মহীনতা হয়ে পড়েছিল নিত্যসঙ্গী। আর চোটের সঙ্গে তো তার সখ্যতা ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই! দুয়ের ‘বন্ধুত্বে’ তাসকিন আহমেদের ক্যারিয়ারের ইতিচিহ্নও এঁকে ফেলেছিলেন অনেকে। আর সবার কথা বাদ দিন, তাসকিন নিজেই তো শেষ দেখে ফেলেছিলেন। তবে হার মানেননি। চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় ঘুরে দাঁড়ানোর সংকল্প গেঁথে নেন হৃদয়ে। যার প্রতিদান তিনি পাচ্ছেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে।
কী গতি, কী বাউন্স- এ যেন নতুন তাসকিন। মাঝেমধ্যে সুইংও পেয়েছেন ক্যান্ডির ব্যাটিং-বান্ধব উইকেটে। তাই শ্রীলঙ্কার আধিপত্য ভেঙে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। যে পিচে শুধু ব্যাটসম্যানদের দাপট চলছিল, সেখানে ‘গেম চেঞ্জারের’ ভূমিকায় আবির্ভূত হয়ে ডানহাতি পেসার দারুণ এক দিন উপহার দিয়েছেন বাংলাদেশকে। তবে আলোর স্বল্পতায় দ্বিতীয় দিনের খেলা আগেভাগে শেষ হয়ে যাওয়ায় উইকেট বাড়ানো হয়নি তার। গতকাল ক্যান্ডি টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে শ্রীলঙ্কার স্কোর ১৫৫.৫ ওভারে ৬ উইকেটে ৪৬৯ রান।
আলোর স্বল্পতায় যখন মাঠ ছেড়ে গেছেন খেলোয়াড়রা, দিনের খেলা তখনও বাকি ছিল ২৪.১ ওভার। তাই তৃতীয় দিনে খেলা শুরু হবে নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিট আগে, বাংলাদেশ সময় ১০-১৫ মিনিটে।
পাল্লেকেলের ‘মরা’ উইকেটে আগুন ঝরিয়েছেন তাসকিন। দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় ঘণ্টা থেকে বিষাক্ত পেসে ঘায়েল করেছেন শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানদের। উইকেট থেকে বাড়তি বাউন্সার আদায় করে কাঙ্খিত সাফল্য এনে দিয়েছেন তিনি। দিন শেষে তার নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ৩ উইকেট। ৩২.৫ ওভারে ১১৯ রান খরচার বোলিং ফিগারটা আরেকটু সুন্দর দেখাতো যদি নাজমুল হোসেন শান্ত আরেকটি ক্যাচ মিস না করতেন। এদিন সাফল্য পেয়েছেন দুই স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজও। দুজনই পেয়েছেন একটি করে উইকেট।
শ্রীলঙ্কা তাদের প্রথম ইনিংসের লক্ষ্য ঠিক করেছিল ৬০০ রানের। দ্বিতীয় দিনের শুরুতে সেই সম্ভাবনার পুরোটাই ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ঘণ্টায় তাসকিন এনে দিলেন ব্রেক থ্রু। দুই হাত পাখির মতো করে যেন উড়তে চাইলেন তিনি। আসলে ডানহাতি পেসারের উইকেট উদযাপনের ভঙ্গিই এমন। প্রথম দিনেই এমন দৃশ্য দেখা হয়ে যেত, যদি বল তালুবন্দি করতে পারতেন শান্ত। দ্বিতীয় দিনে শান্তর মতো ভুল করেননি লিটন দাস। লাহিরু থিরিমানের ব্যাট ছুঁয়ে আসা বল গ্লাভসে জমিয়ে তাসকিনের সঙ্গে আনন্দের উপলক্ষ এনে দিয়েছেন বাংলাদেশকে।
তাসকিনের লেগ স্টাম্পের বল খেলতে গিয়ে উইকেটকিপার লিটনের গ্লাভসবন্দি হয়েছেন লঙ্কান ওপেনার। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে খেলে গেছেন ১৪০ রানের ঝলমলে ইনিংস। ২৯৮ বলের দীর্ঘ ইনিংসটি বাঁহাতি ব্যাটসম্যান সাজান ১৫ বাউন্ডারিতে। তার বিদায়ে ভেঙেছে ওশাডা ফার্নান্ডোর সঙ্গে ১০৪ রানের জুটি।
ওই সময়ে ক্যান্ডিতে চলছে তাসকিন-শো। থিরিমানেকে ফেরানোর উৎসব তখনও শেষ হয়নি, এর মধ্যেই আবার আনন্দের উপলক্ষ এনে দিলেন অভিজ্ঞ অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজকে ফিরিয়ে। রিভিউ নিলে এই ম্যাথুজকে আগেই আউট করতে পারতেন তাসকিন। সেটা না হলেও সাবেক লঙ্কান অধিনায়ক এই পেসারেরই শিকার। তাসকিন দুই ওভার আগে থিরিমানেকে ক্যাচ বানিয়েছিলেন লিটন গ্লাভসে। ম্যাথুজকেও আউট করেছেন লিটনের সাহায্য নিয়ে। অফ স্টাম্পের বাইরে পড়া বল আউট সুইং হয়ে ম্যাথুজের ব্যাট ছুঁয়ে গেলে ঝাঁপিয়ে গ্লাভসবন্দি করেন লিটন। ফলে ৫ রানে শেষ হয় ম্যাথুজের ইনিংস।
এখানেই শেষ নয় বাংলাদেশের উইকেট উৎসবের। খানিক পর তাসকিনের সঙ্গে যোগ দেন তাইজুল। দুর্দান্ত ঘূর্ণিতে বাঁহাতি স্পিনার ফেরত পাঠিয়েছেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে। আগের ম্যাচে দেড়শ ছাড়ানো ইনিংস খেলা এই ব্যাটসম্যান দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে আউট মাত্র ২ রানে। তাইজুলের বাঁক খেয়ে লাফিয়ে ওঠা বল ধনাঞ্জয়ায় ব্যাট ছুঁয়ে গেলে গ্লাভসে নিতে পারেননি লিটন। তার হাতে লেগে যাওয়া বল স্লিপে দাঁড়ানো নাজমুল হোসেন শান্তও প্রথম চেষ্টায় তালুতে নিয়ে পারেননি। তবে দ্বিতীয় চেষ্টায় আর ভুল করেননি তিনি।
এরপর আর উইকেট পড়েনি। তবে সংখ্যা আরও বাড়তে পারতো। এই টেস্টেই প্রথম দিনের ঘটনা। তাসকিনের আনন্দ মাটি করে দিয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। দিমুথ করুণারতেœর ক্যাচ ফেলে দিয়ে নতুন ‘জীবন’ দিয়েছিলেন তিনি। আবারও তাসকিনকে হতাশায় পোড়ালেন সেই শান্ত। এবং একইভাবে সিøপে ক্যাচ ফেলে! তাতে ‘দ্বিতীয় জীবন’ পেয়ে রমেশ মেন্ডিস দিন শেষে অপরাজিত ২২ রানে। তার সঙ্গে তৃতীয় দিন শুরু করবেন ৬৪ রানে অপরাজিত থাকা নিরোশান ডিকবেলা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস : ৪৬৯/৬, ১৫৫.৫ ওভার (করুনারতেœ ১১৮, থিরিমানে ১৪০*, ফার্নান্ডো ৮১, ডিকওয়েলা ৬৪; তাসকিন ৩/১১৯, শরিফুল ১/৯১, তাইজুল ১/৮৩, মিরাজ ১/১০২) দ্বিতীয় দিন শেষে