দিগন্তের আলো ডেস্ক ঃ-
ব্যবসায়ের টাকা ও ফ্ল্যাট লিখে না দেয়ায় পারিবারিক কলহের জেরে রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে স্বামীর ধারালো বঁটির আঘাতে খুন হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেত্রী উমামা বেগম কনক (৪২)। শুক্রবার রাত ১২টায় রাজধানীর পল্লবী ডিওএইচএস ৭৪৩ নম্বর বাসার ৩/ডি ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে। কনক আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির সদস্য এবং ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী। গতকাল ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত মো. ওমর ফারুক (৫২)কে গ্রেপ্তার করেছে পল্লবী থানা পুলিশ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কনকের স্বামী ওমর ফারুক জাপান প্রবাসী ছিলেন। কয়েক বছর আগে দেশে চলে আসেন। এরপর থেকে তিনি তেমন কোনো কাজ করতেন না।
বেকার ছিলেন। যে কারণে তাদের দাম্পত্য কলহ লেগেই থাকতো। তাদের দুটি ছেলেমেয়ে রয়েছে। ছেলেমেয়েদের স্কুলের বেতন থেকে শুরু করে অন্যান্য খরচ নিয়ে প্রায়ই তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হতো। ওমর ফারুক বিদেশ থেকে আসার পরে তার কাছ থেকে নগদ টাকা নিয়ে ব্যবসায়ের কথা বলে কনক পরিচিত এক আত্মীয়কে ধার দেন। পরবর্তীতে স্বামী ওমর ফারুক পাওনা টাকা চাইলে কনক জানান, ব্যবসায়ে লোকসান হওয়ায় টাকা ফেরত দিতে পারছে না ওই আত্মীয়। তারা মিরপুরের পল্লবীতে যে ফ্ল্যাটে থাকতেন সেটি কনক এবং তার স্বামীর নামে যৌথভাবে ক্রয় করা। সম্প্রতি ওমর ফারুক স্ত্রীর নামে থাকা ফ্ল্যাট তার নামে লিখে দিতে বললে কনক সম্মত হননি। এটা নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া চলছিল।
সূত্র জানায়, ঘটনার দিন (শুক্রবার) রাতে ছেলেমেয়ে পাশের ঘরে ছিল। রাত ১২টার দিকে ঝগড়ার এক পর্যায়ে রান্নাঘর থেকে ধারালো বঁটি এনে ওমর তার স্ত্রী কনককে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এ সময় কনকের পেটে বঁটি দিয়ে কোপানোর এক পর্যায়ে নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে আসে। নিজের হাত দিয়ে পেট চেপে ধরে কনক তার মেয়েকে নানার বাসায় ফোন দিয়ে জানাতে বলেন। এ সময় পাশের কক্ষেই অবস্থান করছিলেন কনকের স্বামী ওমর ফারুক। নিহত কনকের বড় বোন রুমা মানবজমিনকে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই স্বামীর সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না কনকের। আর এর জেরেই শুক্রবার রাত ১২টার দিকে স্বামীর হাতে মারাত্মকভাবে জখম হন তিনি। এ সময় তার মেয়ে ফোন করে জানায়, তার বাবা বঁটি দিয়ে মা’কে জবাই করেছে। খবর পেয়ে বাসায় এসে দেখি কনক অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পড়ে আছে। উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে গতকাল ভোর পাঁচটায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় কনক। রুমা আরো জানান, কনককে কুপিয়ে আহত করার পর ফারুক বাসাতেই ছিলেন। তিনি সবার কাছে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা স্বীকারও করেছেন। তাদের বাড়ি নরসিংদী সদরে। উমামা বেগম কনকের মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে গ্রামের বাড়ি নরসিংদী নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
নিহতের বোন জামাই বাবুল বলেন, ওমর ফারুক দীর্ঘদিন জাপানে ছিলেন। জেনেছি দেশে এসে ব্যবসায় সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কী কারণে এ ঘটনা ঘটিয়েছে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি। এদিকে এ ঘটনার পর পর হাসপাতালে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন কনকের স্বজনরা। তারা বলেন, এরকম ঘটনা ঘটবে আমরা কখনো কল্পনাও করিনি। আমরা চাই, এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক। পল্লবী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, অভিযুক্ত ওমর ফারুক ডিওএইচএসের ওই ফ্ল্যাটটি স্ত্রীসহ তার নিজের নামে মালিকানায় ক্রয় করেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ওমর ফারুককে ইতিমধ্যে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন।