লক্ষ্মীপুরে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবাধে চলছে জাটকা নিধনের মহোৎসব

অপরাদ আইন আদালত রামগতি

দিগন্তের আলো ডেস্ক ঃ

লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবাধে চলছে জাটকা নিধনের মহোৎসব। স্থানীয় অসাধু মৎস্য ব্যাসায়ীদের সঙ্গে জোট বেধে কিছু জেলে দ্রুতগামী ইঞ্জিনচালিত নৌকার সাহায্যে রূপালী ইলিশ নিধন করছেন। এ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল। এবার জাটকার মৌসুমে প্রচুর জাটকা ধরার কারণে ইলিশ উৎপাদনে ধস নামতে পারে বলে আশংকা করছেন মৎস্য বিশেষজ্ঞরা। এতে চলতি বছর কাঙ্খিত ইলিশ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশংকা রয়েছে।

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সরকারি নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন নদীতে মাছ শিকারের দায়ে কারাদন্ড বা অর্থদন্ড এবং উভয় দন্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। সেক্ষেত্রে সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি করতে মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড, পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি নদী এলাকার ইউপি প্রশাসনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এ দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছে না তারা। এতে মেঘনা নদীর আলতাফ মাস্টার ঘাট, চরভৈরবী, জালিয়ারচর, মেঘনা বাজার, বাবুর চর, হাজিমারা, কানিবগা, চরঘাসিয়া, পুরান বেড়ি, চান্দার খালসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যপক হারে জাটনা নিধন চলছে। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জেলার বিভিন্ন মাছ ঘাটের নদী এলাকায় দেখা গেছে জাটকা বিক্রির ধুম। অভিযোগ রয়েছে আলতাফ মাস্টার ঘাট ও হাজিমারা এলাকায় একটি সিন্ডিকেট মাছ শিকারে কাজ করছে।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরের রামগতি থেকে চাঁদপুরের ষাটনল পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার মেঘনা নদী এলাকা মাছের অভয়াশ্রম। মার্চ-এপ্রিল (দুই মাস) অভয়াশ্রমে জাটকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিচরণ করে, বেড়ে উঠবে। এমন পরিস্থিতিতে কোনো বাধা ছাড়াই মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সব ধরনের মাছ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ সময় জেলে পরিবারকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে ভিজিএফর চাল বিতরণ করা হবে।
জেলে আবুল ফয়েজ, আনোয়ার মাঝি, রাসেল মিয়া ও সাফয়েত উল্যা জানান, সরকারি সহায়তা না পেয়ে পেটের ক্ষুধায় মোট জেলের ৪০-৫০ শতাংশ এবার মাছ ধরছেন। প্রতিবছরের ছেয়ে এবার জাটকা শিকারের মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। রাতের আঁধারে অবৈধ জালে মেঘনা নদীতে প্রতিদিন জাটকা ধরা হচ্ছে। এসব মাছ রাতে লঞ্চ, ট্রলার, বাস, ট্রাকযোগে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্নস্থানে মোকামে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিন-চারজন আড়তদার বলেন, এসব মাছ ঢাকার মোকামে নিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হয়। দাদনের ফাঁদে ফেলে গরিব জেলেদের দিয়ে জাটকাসহ রেণুপোনা ধরানো হচ্ছে। তাঁদের সহায়তা করছেন মৎস্য বিভাগ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন।

স্থানীয় সফিক উল্যা, ফোরকান মিয়া ও নুর নবী বলেন, লক্ষ্মীপুরের মৎস্য আড়তদারের ৮০ শতাংশ ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক। বাকি ২০ শতাংশও কোনো না কোনোভাবে প্রভাবশালী। এসব প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সরকারি নিষেধাজ্ঞা এ সময় অবৈধভাবে জাটকাসহ মাছের রেণু ধরছেন। আর মৎস্য অধিদপ্তর ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো মাসিক কিস্তিতে মাসোহারা আনছে। চলতি পথে কাউকে মাছ ধরতে দেখা গেলে শুধু তাদের জন্যই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, আমরা মার্চের প্রথম দিন থেকে অভিযান চালাচ্ছি। তা এখনো চলছে। ইতিমধ্যে অভিযান চালিয়ে অনেক নৌকা, জাটকা, জেলে এবং কয়েক লাখ মিটার কারেন্টজাল আটক করা হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়েছে। তারপরও কেন জেলেরা চাল পাচ্ছেন না বলছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। জাটকা শিকার ও পাচারের বিষয়টি শিকার তিনি বলেন, এসব অনিয়ম আমাদের একার পক্ষে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তবে সরকারের ঘোঘিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রতিদিন আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *