দিগন্তের আলো ডেস্ক :-
দালালের দৌরাত্ম্েয নাজেহাল লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগী ও স্বজনরা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ওয়ার্ডবয়দের বখসিস ও নার্সদের দুর্ব্যবহারের আখড়া যেন এই হাসপাতাল। দালালরা প্রতিনিয়তই হাসপাতাল থেকে রোগী বাগিয়ে নিয়ে অন্য ক্লিনিকে ভর্তি করানোর প্ররোচনা দেন রোগীর স্বজনদের। অন্যদিকে, বর্হিবিভাগে রোগিদের জন্য ৩ টাকা টিকেট নেয়ার নির্দেশনা থাকলেও গত ৬ মাস ধরে রোগী প্রতি ৫ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। সরেজমিনে পরিদর্শনের সময় এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানতে চাইলে, মাষ্টাররোলে নিয়োগপ্রাপ্ত মোঃ সাইফুল বলেন, কর্তৃপক্ষ রোগী প্রতি ৫ টাকা কারে আদায়ের নির্দেশ দিলে আমার করার কিছু নেই বলে জানান। তাছাড়া রোগীরাও টাকা দিচ্ছে।।
হাসপাতালে দেখা গেছে, জরুরি বিভাগ, স্বাস্থ কর্মকর্তার কক্ষ ও মূল গেটের সামনে দালাল ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা দাঁড়িয়ে আছেন । সেখানে মাস্ক ও গ্লাভস পরে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েজন যুবক। কেউ কেউ পায়চারী করছেন। তাদের কাজ হাসপাতালে আসা রোগীদের সিএনজি অথবা অ্যাম্বুলেন্স থামার পর কাঁধে করে ভর্তির জন্য নিয়ে যাওয়া। তবে, রোগী এলে স্বজনদের সঙ্গে তারা বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন। এরপর রোগীকে কাঁদে তুলে ওয়ার্ডে রেখে আগের জায়গায় ফিরে যান তারা। তবে
এদিকে, জরুরি বিভাগের ভেতরে দেখা গেছে ৪-৫ জন যুবককে। তাদের হাতেও গ্লাভস। জরুরি বিভাগে রোগী ও স্বজনরা যাওয়া মাত্রই এই যুবকদের তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। রোগীর স্বজনদের পেছনে ঘুরতে থাকেন তারা। তারা কী রোগ, কী করবে—তা জানার পরপরই সুযোগ বুঝে স্বজনদের বাগিয়ে নিতে চেষ্টা করেন। স্বজনদের বলেন, ‘ক্লিনিকে ভালো চিকিৎসা হবে। স্যার ভালো করে দেখবেন। এখানে চিকিৎসা হয় না।’
শিশু সন্তানকে চিকিৎসার জন্য সিমু আক্তার নামের চরপাতা গ্রামের একজন নারী ৫ টাকায় টিকেট নিয়ে তার অসুস্থ্য দুই মিশুকে নিয়ে এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে আছেন ডাক্তারের অপেক্ষায়। -তার সাথে চরমোহনা গ্রামের বিথি আক্তার নামের আরেক নারীও ডাক্তারের অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু ডাক্তার কোথায় আছেন কেও বলতে পারছেন না।-এসম দু’জন ব্যক্তি এসে রোগী সম্পর্কে জানার পর তাকে বারবার অন্য হাসপাতালে যাওয়ার রোগী নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। আর রোগী অন্য হাসপাতালে ভর্তি করাতে ডাক্তারের জন্য ৪০০ ও নিজের জন্য ৫০ টাকা দাবি করেন। তবে, গরিব রোগী সিমু এই দালালের কথায় রাজি হননি। এতে ক্ষেপে যান ওই দালাল। তিনি সিমুকে আর জরুরি বিভাগের রিসিপশনেও যেতে দেননি।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, রোগী ভর্তি করার পর পরীক্ষা ও অপারেশনের জন্য ড্রেসিং করতে প্রতিবার সিজার অপারেশান করালেই ওয়ার্ডবয়কে দিতে হয় টাকা। এক্ষেত্রে সিজার অপরেশন করালেই ২’শ থেকে ৫’শ দিতে হয়।
এই হাসপাতালের ১০০ মিটারের সামনেই রয়েছে ৪টি প্রাইভেট হাসপাতাল। তার ২০০ মিটার দুরেই রয়েছে আরো তিনটি হাসপাতাল। জরুরি বিভাগের সামনে সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরা না থাকা ও অভিযোগ পেলেও দালালের তৎপরতা বন্ধে ও ৩টাকার পরিবর্তে রোগীদের কাছ থেকে ৫টাকা করে নেয়ার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ উদাসীন। অভিযোগ রয়েছে, দালালদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও বা হাসপাতাল থেকে অন্য ক্লিনিকে নিয়ে গেলেও তারা নির্বিকার থাকছেন। ‘ডাক্তারদের ম্যানেজ’ করেই দালালরা হাসপাতালে নিজেদের তৎপরতা চালান বলেও অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কেরোয়া ইউপির লুধুয়া গ্রামের গৃহবধু শারমিন আক্তার বলেন, সকাল ৯ টায় কঠিন এলার্জি রোগ নিয়ে হাসপাতালে এসে যন্ত্রনায় ছটপট করি। কিন্তু কোন ডাক্তার না থাকায় নারী ডাক্তারে কাছে গেলেও তিনি না দেখে চলে গেছেন। পরে জরুরী বিভাগে গিয়ে ইনজেকশান দিলে তখন শান্ত হই।-
সকাল ১১টায় ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করা কয়েকজন বৃদ্ধ নারী রোগী বলেন, ডাক্তার ঠিকমতো আসেন না। হাসপাতালের প্রায় সব বিভাগের সবার আচরণই খারাপ। কাউকে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করে ঠিকমতো উত্তর পাওয়া যায় না। ভর্তিরত রোগীদের সাথেও নার্সদের ব্যবহার আরও খারাপ। স্যালাইন বা ব্যাগের রক্ত শেষ হয়ে গেলে খুলে দিতে বা রোগীর প্রয়োজনে তাদের ডেকেও পাওয়া যায় না। আবার বার বার ডাকতে গেলে তারা দুর্ব্যবহার করেন।’’
দালালের দৌরাত্ম্য বিষয়ে ইউএনও সাবরীন চৌধুরী সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।।
এসব বিষয়ে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার জাকির হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এমন ঘটনা ঘটে। উপজেলা আইনশৃংখলা সভায়ও দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সহযোগিতা চাওয়া হয়ে নার্সদের নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যেন তারা রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার না করেন। হাসপাতালের ভিতরে ওষুধ কোম্পানির লোকদের নিষেধ করা হয়েছে। শুধু সরকারি হাসপাতাল নয়। বেসরকারি হাসপাতালেও একই অবস্থা। এটা দুঃখজনক।