লক্ষীপুরে বাড়িতে-গাড়িতে মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার বিস্ফোরণ আতঙ্কে মানুষ

লক্ষ্মীপুর

সাহাদাত হোসেন (দিপু) :-
বিক্রি ও রক্ষণাবেক্ষণে অনিয়ম এবং ব্যবহারে অসতর্কতা দায়ী *বছরে প্রায় ২০০ সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয় * গত ১ বছর বাড়ছে লক্ষীপুর জেলায় এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ, মারা গেছেন অনেকেই। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন আরো কয়েকজন। জেলায় গত এক বছরে বাসাবাড়ীতে, বাসে, সিএনজিতে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুনে পুড়ে মারা যান দুই জন। আহত হন অনেকেই ।

জেলায় বোতলজাত গ্যাস বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ও দুর্ঘটনা। বাসাবাড়িতে, যানবাহনে, পথেঘাটে কিংবা কারখানায় থেমে নেই এই দুর্ঘটনা। বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। প্রাণ যাচ্ছে আদমসন্তানের। স্বজন হারাচ্ছে বহু মানুষ। নষ্ট হচ্ছে সম্পদ। দুর্ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জেলায় সিএনজি, এলপিজি, অক্সিজেন, অ্যামোনিয়া, নাইট্রোজেন, হিলিয়ামসহ বিভিন্ন গ্যাস বোতলজাতকরণ বা পাইকারি ব্যবসা পর্যায়ে নীতিনির্ধারণী স্থান থেকে নজরদারি থাকলেও খুচরা বিক্রি পর্যায়ে নজরদারি শূন্যের কোঠায়। খুচরা ব্যবসায়ীরা এবং ব্যবহারকারীদের সিংহভাগই জানেন না সিলিন্ডার রক্ষণাবেক্ষণের নিয়ম। অনেকে এ ব্যাপারে মনোযোগীও নন।

বিস্ফোরক অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, গত এক বছরে প্রায় ২০০ সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ ঘটে। এগুলোর মধ্যে সিংহভাগ বাসাবাড়িতে এলপিজি সিলিন্ডার বিস্ফোরণজনিত দুর্ঘটনা। ২০১৯ সালে দেশে প্রায় ৮০টি এলপিজি সিলিন্ডার বিস্ফোরণ-দুর্ঘটনায় অন্তত ১০০ জন নিহত হন। এর বাইরে অনেকে গুরুতর আহতও হয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে লক্ষীপুর জেলা প্রশাসক মোঃ আনোয়ার হোসেন আকন্দ বলেন, দোকানে দোকানে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি বড় সমস্যা তৈরি করছে। এই খুচরা বিক্রেতাদের অধিকাংশই সঠিকভাবে সিলিন্ডার সংরক্ষণ করেন না। কেননা, খুচরা মুদি দোকানদারদের কাছে থাকা সিলিন্ডারগুলো মৃদু ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা তারা বুঝতে পারেন না। পরে ঐ ক্ষুদ্র লিকেজ-ত্রুটি গ্রাহক পর্যায়ে বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। তিনি বলেন, আমরা বাজার মনিটরিং করছি ,এবং সরকারি আইন অমান্যকারী কিছু অসাধু (ব্যাবসায়ী) ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনি প্রদক্ষেপ গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, এলপিসহ সিলিন্ডার যারা বিক্রি করছে, সেই কোম্পানিগুলোর উচিত এই তদারকি, সচেতনতা ও বিক্রয়-পরবর্তী সেবা প্রদান করা।

লক্ষীপুর সদরের ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা বলেন, বাসাবাড়িতে অনেকে সঠিকভাবে এলপিজি সিলিন্ডার ইনস্টল করতে পারেন না। লিকেজ হলে বুঝতে পারেন না। এ কারণে অনেকগুলো বড় দুর্ঘটনা হয়েছে। বেসরকারি কোম্পানিগুলো বিক্রয়-পরবর্তী সেবা নিশ্চিত করলে এ ধরনের দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব।

জেলার রায়পুর, মান্দারী, রামগতী, রামগঞ্জ, থানার বিভিন্ন বাজারে সরেজমীনে গেলে অনেকেই জানান, বাজারে নিম্নমানের ও পুরনো সিলিন্ডারের সংখ্যা কমবেশী প্রায় সব দোকানেই রয়েছে। তবে খুচরা বিক্রি পর্যায়ে সিলিন্ডারের বডি কিংবা মুখে ক্ষতি হচ্ছে। এটি বিপজ্জনক। এর ফলে দ্রুতই জীবনসীমা কমছে সিলিন্ডারের। এছাড়া কিছুটা কম দামে পাওয়া যায় বলে অনেক গ্রাহক নিম্নমানের সিলিন্ডারের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। আবার অনেক ক্রেতা নিরাপত্তা সিল না দেখেই নিম্নমানের সিলিন্ডার বেশি দামে কিনছেন। অথচ ব্যবহার শুরুর দুই-এক বছর পর এসব সিলিন্ডার বিস্ফোরণের আশঙ্কা আছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই মধ্যবর্তী ১০ বছরে অনেক সিলিন্ডার ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফিলিং স্টেশন, স্টোর কিংবা ডিলার পর্যায়ে অনেক সময় এগুলো এড়িয়ে যাওয়ার নজির রয়েছে। ফলে গ্রাহক পর্যায়ে ত্রুটিপূর্ণ, বা ক্ষতিগ্রস্ত সিলিন্ডার চলে যায়। আর ঐগুলো থেকেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার সূত্রপাত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *