ট্রাম্পের যেসব নীতি বদলে দিতে শুরু করলেন বাইডেন

আন্তর্জা‌তিক

 

দিগন্তের আলো ডেস্ক ঃ-

ট্রাম্পের যেসব নীতি বদলে দিতে শুরু করলেন বাইডেন –

শপথ নেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু উল্লেখযোগ্য নীতি পাল্টে দেয়ার কাজ শুরু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। শপথ নেয়ার পর হোয়াইট হাউসে যাওয়ার সময় তিনি টুইটে বলেন, ‘আমাদের সামনে যে সঙ্কট রয়েছে সেটি সামাল দিতে অপচয় করার মতো কোনো সময় নেই।’

করোনাভাইরাস সঙ্কট মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় পদক্ষেপ জোরদারসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ১৫টি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। অন্য নির্বাহী আদেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন এবং অভিবাসন বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থানকে ঠিক উল্টে দিয়েছে।

বুধবার সকালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পর বাইডেন ওভাল অফিসে কাজ করার জন্য প্রস্তুত। করোনাভাইরাসের নিষেধাজ্ঞার কারণে শপথ অনুষ্ঠান বেশ আলাদা হয়েছে। শপথ ও অন্য অনুষ্ঠানে মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসের কাছে শপথ নেয়ার পর প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।’ ট্রাম্প শাসনের অশান্ত বছরগুলোর পর একতার বার্তা দিয়ে দেয়া বক্তব্যে তিনি ‘সব আমেরিকানদের’- এমনকি যারা তাকে ভোট দেয়নি তাদেরও প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

তার তিনজন পূর্বসূরি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বারাক ওবামা, যার অধীনে আট বছর ভাইস-প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন বাইডেন, বিল ক্লিনটন, জর্জ ডাব্লিউ বুশ ও ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও উপস্থিত ছিলেন।

বাইডেনের আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন কমালা হ্যারিস। এই পদে দায়িত্ব নেয়া প্রথম নারী এবং প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ও এশিয়ান-আমেরিকান ব্যক্তিও তিনি।

গত ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের সহিংস সমর্থকরা ক্যাপিটল ভবনের দখল নেয়ার ঘটনার পর অনুষ্ঠানকে ঘিরে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন, মিস হারিস ও তার স্বামী ডো এমহফের সালে পেনসিলভেনিয়া এভিনিউ দিয়ে হেটে হোয়াইট হাউসে পৌঁছান। ওই সময় বন্ধু এবং সমর্থকদের শুভেচ্ছা জানান তারা।

শপথ অনুষ্ঠানে লেডি গাগা জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। সেই সাথে ছিলন জেনিফার লোপেজ ও গার্থ ব্রুকস।

আমেরিকার প্রথম ন্যাশনাল ইয়ুথ পয়েট লরেট অ্যামান্ডা গোরম্যান তার লেখা দ্য হিল উই ক্লাইম্ব নামে কবিতাটি আবৃত্তি করেন। লিংকন মেমোরিয়ালে সন্ধ্যায় আয়োজিত এক কনসার্টে উপস্থাপক হিসেবে ছিলেন টম হ্যাংকস, ব্রুস স্প্রিংস্টিন, জন লিজেন্ড, জন বন জোভি, জাস্টিন টিম্বারলেক ও ডেমি লোভাটো।

বাইডেন কী কী নির্বাহী আদেশে সই করেছেন?
নির্বাহী আদেশের বর্ণনা করে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ‘শুধু ট্রাম্প প্রশাসনের সবচেয়ে বড় ক্ষতিগুলোই সংশোধন করবেন না বরং তিনি দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।’

করোনাভাইরাস মহামারী সামাল দিতে ধারাবাহিক কিছু পদক্ষেপ নেয়া হবে। এতে এখনো পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে চার লাখেরও বেশি প্রাণহানি হয়েছে। সব ধরণের কেন্দ্রীয় সরকারি দফতরে মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক করা হবে।

মহামারীর বিষয়ে পদক্ষেপের সমন্বয় করতে একটি আলাদা দফতর গড়ে তোলা হবে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বেরিয়ে যেতে ট্রাম্প প্রশাসনের শুরু করা প্রক্রিয়া স্থগিত করা হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এর সাথে আবারো যুক্ত হওয়ার পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তার মুখপাত্র স্টিফানি দুজারিক জানান, মহাসচিব বলেছেন যে, সমন্বিত বৈশ্বিক পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাইডেন আরো জানিয়েছেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই হবে তার প্রশাসনের অন্যতম অগ্রাধিকার।

২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে আবার যোগ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে নির্বাহী আদেশ সই করেছেন তিনি। গত বছর আনুষ্ঠানিকভাবে এই চুক্তি থেকে বের হয়ে এসেছিলেন ট্রাম্প।

বিতর্কিত কিস্টোন এক্সএল পাইপলাইনের প্রেসিডেন্সিয়াল অনুমোদন বাতিল করেছেন বাইডেন। এই পাইপলাইনের বিরুদ্ধে পরিবেশবাদী ও নেটিভ আমেরিকান গোষ্ঠীগুলো এক দশকের বেশি সময় ধরে লড়াই করে আসছে।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেন, শুক্রবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে প্রথম বিশ্বনেতা হিসেবে ফোন করার পর এ বিষয়ে তার সাথে আলোচনা করবেন বাইডেন।

বেসরকারিভাবে অর্থায়নে থাকা পাইপলাইনটির মূল্য প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার। কোম্পানিটি কানাডার আলবার্টা থেকে নেব্রাস্কায় দৈনিক আট লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত তেল পরিবহন করতো।

২০১৫ সালে এই পাইপলাইন কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠায় আনা একটি বিলে ভেটো দিয়েছিলেন বারাক ওবামা। কিন্তু সেটি উল্টে দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

অভিবাসনের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের জারি করা জরুরি প্রস্তাবনা বাতিল করেছেন বাইডেন। এই জরুরি প্রস্তাবনার অধীনে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে অর্থায়ন এবং বেশ কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।

অন্য নির্বাহী আদেশগুলো বর্ণ এবং লৈঙ্গিক সমতা বিষয়ক।

বাইডেন প্রেসিডেন্সির আওতায় প্রথম অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, তিনি কি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের স্বার্থকে প্রচার করবেন নাকি ‘সাদামাটা সত্য’ উপস্থাপন করবেন।

এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘মুক্ত ও স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকার প্রতি গভীর শ্রদ্ধার’ সাথে তিনি ‘সরকারে স্বচ্ছতা এবং সত্য ফিরিয়ে আনতে’ প্রেসিডেন্টের সাথে কাজ করবেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রেস সেক্রেটারি প্রায় সময়ই মিডিয়ার সাথে একটি বিবাদময় সম্পর্ক ছিল।
সূত্র : বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *