সাহাদাত হোসেন দিপু ঃ-
শীতকাল মানেই বাহারি সবজির পসরা। কম দামে পছন্দের সবজি কেনার সুযোগ। গরম শেষে লক্ষীপুর দেখা দিয়েছে শীতের আমেজ। তবে কম দামে সবজি মিলছে না কোথাও।
গরম শেষে শীতের আমেজ আসার পাশাপাশি বাজারে সবজির সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। তবে দাম কমেনি। উল্টো কিছু কিছু সবজির দাম নতুন করে বেড়েছে। এর সঙ্গে পেঁয়াজ ও আলুর চড়া দাম তো আছেই। সবমিলিয়ে বাজারে গিয়ে মোটেই স্বস্তি পাচ্ছেন না নিম্ন আয়ের মানুষ। স্বস্তি পাবেন কিভাবে, তাদের পকেট যে বাজারের খরচ টানতে পারছে না।
শুক্রবার জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে গাজরের দাম কিছুটা কমলেও চলতি সপ্তাহে আবার বেড়েছে। গত সপ্তাহে ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া গাজরের দাম বেড়ে ৮০ থেকে ১০০ টাকা হয়েছে। এর মাধ্যমে আবারও আগের দামে ফিরে গেল গাজর। গত সপ্তাহ বাদ দিলে তিন মাসের বেশি সময় ধরে গাজরের কেজি এক’শ টাকায় রয়েছে।
গাজরের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পাকা টমেটো, শিম, বেগুন, বরবটি। গত কয়েক মাসের মতো পাকা টমেটোর কেজি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
মাসের অধিক সময় ধরে বাজারে শীতের আগাম সবজি শিম পাওয়া গেলেও তা এখনও অনেকটাই নিম্ন আয়ের নাগালের বাইরে। অবশ্য সময়ের সঙ্গে বাজারে শিমের সরবরাহ বেড়েছে। তবে এতে দাম কিছুটা কমার সম্ভাবনা থাকলেও উল্টো বেড়েছে। বাজার ও মান ভেদে শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, তা গত সপ্তাহে ছিল ৮০ থেকে ১১০ টাকা।
স্বস্তি মিলছে না শীতের অন্যতম সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপির দামেও। ছোট একটি ফুলকপি কিনতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা গুনতে হচ্ছে। একই দাম দিতে হচ্ছে বাঁধাকপির জন্য। মাসের অধিক সময় ধরে শীতের আগাম এই দুই সবজি এমন চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া বরবটির ৮০ থেকে ১০০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ১১০ টাকা, কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে এ সবজিগুলোর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
তবে নতুন করে কিছুটা দাম বেড়েছে ঢেড়সের। গত সপ্তাহে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ঢেড়সের দাম বেড়ে ৭০ থেকে ৯০ টাকা হয়েছে।
এর সঙ্গে পটল, শসা, ঝিঙা, ধুন্দুল, কচুর লতি, কাঁকরোল কোনো সবজির দামই ক্রেতাদের স্বস্তি দিচ্ছে না। শসার কেজি গত সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়।
পটলের বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। উসি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। ঝিঙার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, একই দামে বিক্রি হচ্ছে কচুর লতি। এ সবজিগুলোর দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে।
এছাড়া লাউয়ের পিস গত সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এক হালি কাঁচা কলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
স্বস্তি মিলছে না কাঁচামরিচ ও পেঁয়াজের দামেও। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচামরিচের দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহে ৫০ থেকে ৬০ টাকা পোয়া (৩৫০ গ্রাম) বিক্রি হওয়া কাঁচামরিচ ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। আর পেঁয়াজ আগের মতো কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা।
এদিকে সরকার দুই দফায় আলুর দাম বেঁধে দিলেও বাজারে সরকারের নির্দেশনার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। সরকার প্রথমে খুচরা পর্যায়ে আলুর কেজি সর্বোচ্চ ৩০ টাকা এবং পরবর্তীতে ৩৫ টাকা বেঁধে দেয়। তবে ভোক্তারা এক কেজি আলু ৪৫ টাকার নিচে কিনতে পারছেন না। এমনকি এখন কোথাও কোথাও আলুর কেজি ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর বাজারে আসা নতুন আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকার ওপরে।
লক্ষীপুর মান্দারী বাজারের ব্যবসায়ী কামাল সরদার বলেন, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপির সরবরাহ বেড়েছে। তবে বাজারে যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে সরবরাহ তার তুলনায় কম। যে কারণে দামটা কমছে না। আমাদের ধারণা কিছুদিনের মধ্যে সবজির দাম কমে আসবে। কারণে বাজারে দেখতে দেখতে ভরপুর শীতের সবজি চলে আসবে।
রায়পুরের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, হালকা শীত পড়তে শুরু করেছে। শীতের সবজিও বাজারে বাড়ছে। তবে বন্যা ও টানা বৃষ্টির কারণে এবার সবজির অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। যে কারণে এখনও সবজির এতো দাম। তবে সামনে বন্যা বা বৃষ্টির সম্ভাবনা কম, সে কারণে কিছুদিনের মধ্যে সবজির দাম কিছুটা কমবে বলে আমাদের ধারণা।
চন্দ্রগঞ্জ থেকে বাজার করা আমিনুর রহমান বলেন, শীত এসে গেছে। বাজারেও বিভিন্ন সবজি আসছে। কিন্তু আমাদের কোনো লাভ হচ্ছে না। নামমাত্র সবজি কিনতেই পকেটের সব টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। ছয় মাসের বেশি সময় ধরে সবজির বাড়তি দামে নিয় ভুগছি। আমরা পেরে উঠছি না। দিন দিন খরচ বাড়ছে। কিন্তু করোনার পর থেকে আয় বাড়ার পর বন্ধ হয়ে গেছে।
কমলনগরের বাসিন্দা মো. ইয়াছিন বলেন, একদিকে করোনাভাইরাস সর্বনাশ করে দিয়েছে, অন্যদিকে সবজির বাড়তি দাম সর্বনাশ করছে। গত কয়েক মাস ধরে এক টাকাও জামাতে পারিনি। উল্টো আগের যা সঞ্চয় ছিল তাও শেষ হয়ে গেছে। দিন যত যাচ্ছে পরিস্থিতি ততো কঠিন হচ্ছে। এখন শুনছি শীতে করোনা বাড়তে পারে। তখন কী হবে তা নিয়েও দুশ্চিন্তা বাড়ছে।