দিগন্তের আলো ডেস্ক ঃ-
বর্ষার বৃষ্টিতে পানি বাড়ছে লক্ষ্মীপুরের মেঘনায়। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে ভাঙন। প্রতি মুহুর্তে ভাঙছে নদী তীরের কোন না কোন অংশ। বালু ভর্তী জিও ব্যাগ ফেলেও সেটি রোধ করা যাচ্ছে না। ফলে প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে ফসলি জমি ও ভিটেমাটি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন উপকূলীয় অঞ্চলের হাজারো মানুষ। দ্রুত দীর্ঘস্থায়ী বাঁধ নির্মান করা না গেলে এখানকার বিস্তীর্ণ জনপদ তলিয়ে যাওয়ায় আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, পানি নিষ্কাশন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৭৬ সালে রামগতি, কমলনগর ও লক্ষ্মীপুর সদরের একাংশে বেড়ী বাঁধ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে সেই বাঁধটির বিভিন্ন স্থান বিলীন হয়ে যায়। এরপর থেকেই উপকূলীয় অঞ্চলে ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারন করে। বিলীন হয়ে যায়, হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি সহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রামগতি ও কমলনগর উপজেলা।
আরো জানা গেছে, ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয়রা সড়ক অবরোধ, মানববন্ধন, নদী পাড়ে দোয়া-মোনাজাত সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। তবুও কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে নদী ভাঙনে ছোট হয়ে আসছে লক্ষ্মীপুরের মানচিত্র। সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন হাজারো মানুষ। সম্প্রতি কমলনগরের উপকূলীয় বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমে জঙ্গলা বাঁধ নির্মাণ করে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, রামগতি ও কমলনগর উপজেলাকে জেলার সবচেয়ে বেশি ভাঙন কবলিত এলাকা হিসাবে চিহিৃত করা হয়। এ দুই উপজেলা রক্ষায় ‘ তীর সংরক্ষণ উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় সরকার ২০১৩ সালের শেষ দিকে ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয় তিন ধাপে ৩৭ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য। প্রথম ধাপে ২০১৪ সালে বরাদ্দ হয় ১৯৮ কোটি টাকা। এর অধীনে রামগতি মাছ ঘাট থেকে আলেকজান্ডার বাজার পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিলোমিটার ও কমলনগরের মাতাব্বর হাট এলাকায় ১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। অপর্যাপ্ত হওয়ায় তা আরো ৯০০ মিটার বাড়িয়ে ৬.৪ কিলোমিটার করা হয় প্রতিরক্ষা বাঁধটি। দ্বিতীয় ধাপে কমলনগর উপজেলায় (মতিরহাট থেকে চর ভয়া) ৮ কিলোমিটার ও রামগতি উপজেলায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার এবং বাকি ১৪ কিলোমিটার নদী তীর রক্ষা বাঁধ তৃতীয় ধাপে নির্মাণ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে বরাদ্দ না পাওয়ায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। তবে অন্য এক বরাদ্দে বালু ভর্তী জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে কয়েক হাজার বসতবাড়ি, সাত হাজার একরের বেশি ফসলি জমি, ১৫ টি হাট-বাজার, ৩৬ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ ৩৮ কিলোমিটার বেড়ীবাঁধ। এছাড়া প্রথম ধাপে কমলনগরে নির্মিত বাঁধটি কয়েকবার ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের ফলে এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাই তারা মনে করেন, দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা না হলে রামগতি ও কমলনগরের বিস্তীর্ণ জনপদ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। মানচিত্র থেকে মুছে যাবে কমলনগর ও রামগতি।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কমলনগর-রামগতি বাঁচাও মঞ্চের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার পলোয়ান বলেন, প্রতি দিন ভাঙছে নদী তীরের কোন না কোন অংশ। দীর্ঘদিন আন্দোলন করেও কাঙ্খিত সুফল মিলছে না। ফলে এ অঞ্চলের অর্ধেক এলাকা মেঘনার গর্ভে চলে গেছে। এজন্য তিনি ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর চ্যানেল পরিবর্তন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের চিহিৃত এলাকাগুলোকে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি করেন।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন, নদী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প পরিকল্পনা (ডিপিপি) তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটির অনুমোদন পেলে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তাছাড়া লক্ষ্মীপুর সদরের অংশের ১৩ কিলোমিটার বেড়ীবাঁধ সংস্কারের জন্য আরেকটি ডিপিপি প্রণয়ন করা হচ্ছে।
স্থানীয় সাংসদ মেজর (অব:) আবদুল মান্নান বলেন, বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন হলে এ অঞ্চলকে মেঘনার ভাঙন থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। এছাড়াও অতি প্রবল ভাঙন ১০ টি স্থানে বালু ভর্তী জিও ব্যাগ ডাম্পিং এর জন্য ৯ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। বরাদ্দ পেলে কাজটি শুরু করা হবে।
গত বছরের ১২ এপ্রিল মেঘনার ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। নদীপাড়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ে প্রসেসিং করতে একটু সময় লাগে। তাই প্রকল্পগুলো বরাদ্দ পেতে দেরি হয়। তবে কমলনগর-রামগতি এলাকায় প্রয়োজনে বিশেষভাবে কাজ করা হবে।