৯ ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে গাছ চুরির অভিযোগ

অপরাদ

দিগন্তের আলো ডেস্ক ঃ-
ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে ৯ ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে থানায় গাছ চুরির কথিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নে এই ঘটনা ঘটেছে।

মেম্বার-চেয়ারম্যান পরস্পরকে দুষলেও পুলিশ বলছে, গাছের মালিক ওই গ্রামেরই একজন ব্যক্তি। অভিযোগ পেলেও ওই ঘটনায় কোনো মামলা রেকর্ড হয়নি বলে জানিয়েছেন বাঘারপাড়ার থানার অফিসার ইনচার্জ।

সরেজমিন জানা যায়, গত বুধবার (১৭ জুন) বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) আশরাফুজ্জামান পরিষদের ৯ জন ইউপি সদস্য ও একজন কাঠ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে থানায় সরকারি গাছ চুরির অভিযোগ এনে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

স্থানীয় লোকজন জানায়, সম্প্রতি নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের পাঁচবাড়িয়া রাস্তার ধারের কয়েকটি বাবলা গাছ ঝড়ে উপড়ে এবং ভেঙে যায়। স্থানীয় লোকজন ও মসজিদ কমিটির সদস্যরা সেখানকার ইউপি সদস্যকে গাছগুলো মসজিদ সংস্কারে ব্যয় করার অনুরোধ করেন।

বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্য শহিদুল ইমলাম মসজিদ কমিটি ও গ্রামবাসীকে বিবেচনা করে সেগুলো ব্যবহারের মৌখিক সম্মতি দেন। এরপর স্থানীয় বাসিন্দা ও মসজিদ কমিটির সদস্য টিপু সুলতান একজন কাঠ ব্যবসায়ীকে ডেকে চারটি বাবলা গাছ ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করে সমুদয় টাকা মসজিদ ফান্ডে জমা দেন।

টিপু সুলতান বলেন, ‘চারটি গাছ মসজিদ কমিটি ও গ্রামের মুরব্বিদের উপস্থিতিতে বিক্রি করে সেই টাকা মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ারের কাছে হস্তান্তর করি। তিনি জানান, গাছগুলো ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল’।

এদিকে, ১৭ জুন ইউনিয়ন পরিষদের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) আশরাফুজ্জামান ইউনিয়নের ৯ জন ইউপি সদস্য ও একজন কাঠ ব্যবসায়ীকে আসামি করে বাঘারপাড়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

জানতে চাইলে আশরাফুজ্জামান বলেন, ইউপি সদস্যরা পরস্পর যোগসাজসে ৫টি গাছ বিক্রি করেছেন। তাদের সরকারি সম্পত্তি বিক্রির কোনো এখতিয়ার নেই। সে কারণে মামলা করা হয়েছে। তিনি বলেন, যতদূর জানি- এখনো পর্যন্ত থানায় সেই অভিযোগ মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়নি’।

যোগাযোগ করা হলে ৩ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. শহিদুল ইমলাম বলেন, ‘চেয়ারম্যান তার কোনো কাজে পরিষদকে ডাকেন না। সেকারণে বিগত ৯ মাস আমরা কেউই কাউন্সিল অফিসে যাই না। তিনি নোংরা রাজনীতির কারণে আমাদের বিরুদ্ধে এই মিথ্যা অভিযোগ করিয়েছেন’।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি (শহিদুল ইউপি সদস্য) বলেন, সম্প্রতি ঝড়ে পাঁচবাড়িয়া এলাকায় রাস্তার ধারের কয়েকটি গাছ পড়ে যায়। তাছাড়া এমপি সাহেবের নির্দেশনায় সেখানকার রাস্তা প্রশস্ত করণের একটি কাজও আমরা করছিলাম। রাস্তার ওপর থেকে গাছ সরানোর সময় গ্রামের মুরব্বি ও মসজিদ কমিটির সদস্যরা গাছগুলো মসজিদ সংস্কারে ব্যবহারে অনুরোধ করেন। তখন মুরব্বি ও মসজিদ কমিটির সদস্যদের বলি- আপনারা যেটা ভালো মনে করেন, সেটি করেন। পরে শুনেছি, আমাদের সব ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হচ্ছে’।

এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহের আবুল সরদার বলেন, ইউপি সদস্য গত এক বছর কেউই ইউনিয়ন পরিষদে আসেন না। তারা আমার বিরুদ্ধে অনাস্থাও এনেছিলেন। সরকারি সম্পদ ৮-১০টি গাছ বিক্রির কারণে নায়েব সাহেব তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। আমি তো মামলা করতে যাইনি। তবে, সরকারি কোনো সম্পদ বিনষ্ট হলে আমি সরকারের পক্ষেই থাকব’।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঘারপাড়া থানার ওসি সৈয়দ আল মামুন বলেন, ঘটনা জানতে পেরে পুলিশ বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়েছে। সেখানকার যে গাছের কথা বলা হচ্ছে, তার মালিক মোস্তফা শিকদার নামে এক ব্যক্তি। তাছাড়া ওই এলাকায় কাবিখার যে কাজ হচ্ছে, তা বাস্তবায়ন করছেন দু’তিনজন ইউপি সদস্য।

কিন্তু অভিযোগ করা হচ্ছে ৯ জন ইউপি সদস্যসহ ব্যবসায়ীকে। বিষয়টি বেশ গোলমেলে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের বিপক্ষে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছেন সদস্যরা। সব বিষয় মাথায় রেখে আমরা এগুচ্ছি। এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *