দুই শর্তে কারখানা খোলার অনুমতি

বাংলাদেশ

দিগন্তের আলো ডেস্ক

আগামী ৫ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। অন্যদিকে দুই শর্তে সব কলকারখানা খোলার অনুমতি দিয়ে পৃথক আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুসারে কলকারখানা খুলতে হলে প্রথমত শ্রমিকদের নিরাপত্তা, দ্বিতীয়ত শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে কারখানা মালিকদের। এ ছাড়া জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বাইরে অন্য সবার জন্য সাধারণ ছুটি ৫ মে পর্যন্ত বহাল থাকবে। ছুটিকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে না। গতকাল বৃহস্পতিবার এসংক্রান্ত পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

ছুটিসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে মোট আটটি শর্ত দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একাধিক শর্ত একটির সঙ্গে অন্যটি সাংঘর্ষিক। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-৪ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনের ২ (ঙ) নম্বর শর্তে বলা হয়েছে, ‘ঔষধশিল্প, উৎপাদন ও রপ্তানিমুখী শিল্পসহ সকল কলকারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে চালু রাখতে পারবে।’ এরপরের শর্ত ২ (চ) অনুযায়ী, ‘পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তীতে শিল্প-কারখানা, কৃষি এবং উৎপাদন সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো ও গণপরিবহন পর্যায়ক্রমে উন্মুক্ত করা হবে।’ উল্লিখিত দুটি (ঙ ও চ) শর্তের প্রথমটিতে ‘শিল্পসহ সকল কলকারখানা’ খোলার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু পরেরটিতে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে ‘শিল্প-কলকারখানা’ এবং ‘গণপরিবহন’ পর্যায়ক্রমে উন্মুক্ত করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার যদি ধরা হয় যে মালিকপক্ষ কারখানা খুলতে চায় তাহলে গণপরিবহন উন্মুক্ত না হলে গ্রামে চলে যাওয়া অনেক শ্রমিক কিভাবে ঢাকায় আসবেন—সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে কবে থেকে কলকারখানা খোলা রাখা যাবে সে বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে কিছু বলা হয়নি। এ কারণে প্রজ্ঞাপনের শর্তে স্ববিরোধী চিত্র ফুটে উঠেছে।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হ্যাঁ, সরকার শর্ত সাপেক্ষে সব কলকারখানা খোলার সুযোগ দিয়েছে।’ উল্লিখিত অসামঞ্জস্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিবের সঙ্গে কথা বললে ভালো হয়।’

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের মোবাইলে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। প্রতিবেদকের পরিচয় দিয়ে এসএমএস পাঠালে, তাতেও সাড়া দেননি।

সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকালের প্রজ্ঞাপনের শর্ত তৈরির বিষয়টি দেখভাল করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। শুধু ছুটির বিষয় থাকলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে শর্ত নির্ধারণ করা হয়। গতকালের ছুটির শর্তগুলোতে অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিষয় জড়িত থাকায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগই অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে শর্ত নির্ধারণ করেছে।

সরকারের জারি করা গতকালের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি থাকাকালে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে না। এ সময় সীমিত আকারে ১৮টি মন্ত্রণালয় খোলা থাকবে। পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে একটিতে ছুটি বাড়ানোর সঙ্গে নতুন কিছু শর্ত যোগ করা হয়েছে। অন্যটিতে সীমিত আকারে যে ১৮টি মন্ত্রণালয় খোলা থাকবে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে জরুরি কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য অফিস ও পরিবহন ছুটির আওতামুক্ত থাকবে।

গতকাল দুপুরে প্রথম দফা জারি করা প্রজ্ঞাপনে ছুটির বিষয়ে বলা হয়েছে, সাপ্তাহিক ছুটি ও সাধারণ ছুটির ধারাবাহিকতায় আগামী ২৬ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এবং ৩ মে হতে ৫ মে পর্যন্ত ছুটি থাকবে। এই ছুটির সঙ্গে ১ ও ২ মে সাপ্তাহিক ছুটি যুক্ত হবে। তবে ছুটির সময় জরুরি পরিষেবা, যেমন-বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবা এবং এ সংশ্লিষ্ট সেবাকাজে নিয়োজিত যানবাহন, সড়ক ও নৌপথে সব ধরনের পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত যানবাহন (ট্রাক, লরি, কার্গো, ভেসেল প্রভৃতি) চলাচল করবে। এ ছাড়া কৃষিপণ্য, সার, কীটনাশক, খাদ্য, শিল্পপণ্য, রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের মালপত্র, কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের ক্ষেত্রে এ ছুটি প্রযোজ্য হবে না। একই সঙ্গে চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মী এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম বহনকারী যানবাহন ও কর্মী, গণমাধ্যমে (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া) নিয়োজিত কর্মীরা এ ছুটির আওতাবহির্ভূত থাকবে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরে শিল্প-কারখানা, কৃষি এবং উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো ও গণপরিবহন পর্যায়ক্রমে উন্মুক্ত করা হবে। আর ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে সময়ে সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।

দ্বিতীয় দফা জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে—সীমিত আকারে ১৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খোলা থাকবে। এর মধ্যে রয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, ‘দেশের অর্থনীতিকে ঠিক রাখতে হলে সংকটের মধ্যেও আমাদের কাজ করতে হবে। কারণ এরই মধ্যে আমাদের পুরো সরবরাহ লাইন ভেঙে পড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। এ পরিস্থিতিতে ধীরে ধীরে আংশিকভাবে লকডাউন তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা সংকট থেকে উত্তরণে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।’

বিজিএমইএ পরিচালক ও সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ নাসির কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। কারণ বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো ইতিমধ্যে তাদের কারখানা খুলে দিয়েছে। আমরা যদি আমাদের আগের কাজ রপ্তানি করতে না পারি কার্যাদেশ বাতিল হয়ে যাবে। একই সঙ্গে আগামী মৌসুমের কাজও হারাতে হবে।’

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকছে : সরকার আগামী ৫ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বৃদ্ধি করেছে। এই সময়ের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে না। সরকারের এই ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করেই মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আগামী ৫ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে আগামী ঈদ পর্যন্ত সব প্রাথমিক বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *