সাহাদাত হোসেন দিপু ঃ-
সেদিন হঠাৎ করেই খুব গোপনে কাউকে সঙ্গে না নিয়ে ছুটে চলেছেন চন্দ্রগঞ্জ থানার কোনো এক গ্রামে। থানা শহর থেকে বেরিয়ে শান্তিরহাট এলাকায় গিয়ে হঠাৎ গাড়ি থামালেন। একজন কৃষক জমিতে কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। তার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, চাচা আসসালামু আলাইকুম আমি আপনাদের চন্দ্রগঞ্জ থানার ওসি, কেমন আছেন আপনি? আপনার বাসার সবাই ভালো? ঘরে খাবারদাবার আছে চাচা? এই নেন (এক প্যাকেট খাবার আর কিছু টাকা)। আসি চাচা, আমার জন্য দোয়া করবেন। করোনা সংক্রমণ থেকে সাবধানে থাকবেন।
কৃষকের হাতে এক প্যাকেট খাবার দিয়ে আবার চলতে শুরু করলেন। এ যেন এক অন্যরকম যোদ্ধা। তিনি চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন। কখনও দিনে আবার কখনও রাতে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে ছুটে চলছেন। করোনা পরিস্থিতিতে নিচ্ছেন মানুষের খোঁজখবর। হাতে হাতে তুলে দিচ্ছেন ত্রাণ সামগ্রী। থানার ওসি হলেও আশপাশে নেই পুলিশ। নেই কোনো অহংকার।
হাতে খাবারের প্যাকেট দিয়ে চলে যাওয়া ওসি র দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন ওই কৃষক। বাড়িতে গিয়ে হয়তো ওই কৃষক এতক্ষণে স্ত্রী-সন্তানদের উৎফুল্ল মনে বলছেন; জানিস আজ কার সাথে দেখা হয়েছিল? এই খাবারের প্যাকেট কে দিয়েছে?
পরিবারের সদস্যদের জানার আগ্রহ বেড়ে যায়। বার বার জানতে চায় কে সেই লোক? সবশেষে নিজের আদরের সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ওই কৃষক বাবা বললেন, আমাগো চন্দ্রগঞ্জ থানার ওসি দিয়েছে বাবা। বাড়ি আসার পথে হঠাৎ গাড়ি থামিয়ে আমাকে সালাম দিল। তোদের সবার কথা জানতে চেয়েছে। এই খাবার ও টাকা দিয়ে গেছেন। করোনা প্রতিরোধে সবাইকে সাবধানে থাকতে বলেছে ওসি ।
শুনে পরিবারের সবার মুখে হাসি। স্ত্রীর মনে প্রশ্ন, একজন থানার ওসি কি এমনও হয়! ওসি এত সাধারণ? এমন নানা প্রশ্নের মাঝে মনে স্বস্তি নিয়ে জনতার ওসি র জন্য মনভরে দোয়া করে ওই কৃষকের পরিবার। অপেক্ষায় থাকে জনতার ওসিকে সুখে-দুঃখে পাশে পাওয়ার।
নিম্নআয়ের এমন অসংখ্য মানুষের বাড়ির সামনে কাউকে খাবার, কাউকে টাকা দিয়ে রাতদিন নিরলস ভাবে কাজ করে গেছেন তিনি। এসব পরিবারের আত্মসম্মানের কথা ভেবে ত্রাণ কিংবা সহযোগিতা দেয়ার ছবি তুলতে নিষেধ করেছেন ওসি।
চন্দ্রগঞ্জ থানার পুলিশ সদস্য আশিক বলেন আমি প্রায় সময় স্যারের সাথেই থাকি, স্যার প্রতিদিন রাতে বেরিয়ে সাধারণ মানুষের খোঁজ খবর নেন, এবং যে কোন সমস্যায় নিজের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করেন সমাধান করার জন্য। স্যার সবসময় বলেন চন্দ্রগঞ্জ থানার সর্বস্তরের জনগণের সেবক হিসেবে চন্দ্রগঞ্জ থানাবাসীকে যদি ভালো রাখতে পারি তাহলে ভালো থাকবো আমি।
রাত দিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা প্রতিরোধে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে, চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন দিগন্তের আলোকে বলেন। আমার অবিভাবক শ্রদ্ধেয় লক্ষীপুর জেলার মাননীয় পুলিশ সুপার স্যার, ২৪ ঘন্টা নিরলস ভাবে লক্ষীপুরের জনসাধারণের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। স্যারের নির্দেশনা মোতাবেক মাননীয় পুলিশ সুপার মহোদয়ের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করে যাচ্ছি।