সাহাদাত হোসেন দিপু ঃ-
করোনাভাইরাসের কারণে সরকার জুন পর্যন্ত সারাদেশের সব এনজিওর কিস্তি আদায় কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করলেও লক্ষীপুর জেলা উপজেলা থানা সহ প্রায় সবজায়গায় সেই নির্দেশনা অমান্য করে কিস্তি আদায় কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। এমনকি কিস্তি আদায়ের জন্য গ্রাহকদের বাড়িতে গিয়ে বসে থাকা ও হুমকি প্রদানের অভিযোগও পাওয়া গেছে। এদিকে আয় উপার্জন ও ব্যবসা না থাকায় কিস্তি দেওয়া নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
লক্ষীপুর জেলা উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫০-২০০ টির মতো বিভিন্ন এনজিও কার্যক্রম চালমান।
লক্ষীপুর সদর উপজেলার মান্দারী বাজারের স্কুল রোডের চা বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম দিগন্তের আলোকে বলেন, ‘বাজারে আমার একটি চায়ের দোকান রয়েছে, যেখানে আমি নিজেসহ আরও দুজন কাজ করি, সারাদিন যা চা বিক্রি হয় তাই দিয়ে কর্মচারীদের বেতন নিয়ে কোনরকমে আমাদের সংসার চলতো। করোনার কারণে ২৬ মার্চ থেকে দোকান বন্ধ। এদিকে ব্যবসার জন্য আমার বাবার নামে একটি এনজিও থেকে লোন নিয়েছিলাম। এনজিও কর্মীরা আমাদের বাড়িতে গিয়ে কিস্তির জন্য চাপ দিচ্ছেন।’
রায়পুর উপজেলার জুতা ব্যবসায়ী নাহিদ হোসেন দিগন্তের আলোকে বলেন, ‘ব্যবসার জন্য স্থানীয় গ্রামীণ ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছিলাম, যা দিয়ে দোকানের মাল উঠিয়েছি। কিন্তু করোনার কারণে শুরু থেকেই সব ধরণের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। যার কারণে আমাদের কোনও ব্যবসা নেই। এমন অবস্থায় এনজিও থেকে ফোন দিয়ে কিস্তি দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে, তারা সময়ও দিতে চাচ্ছেন না।
রামগতি উপজেলার হোটেল শ্রমিক নাজমা বেগম দিগন্তের আলোকে জানান, স্থানীয় একতা সঙ্গ নামের একটি এনজিও থেকে কিছু টাকা লোন নিয়ে টিন কিনে বাড়ি করেছিলাম। এখন সেই কিস্তির টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে, বাড়িতে পর্যন্ত আসছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে এক এনজিও ম্যানেজার দিগন্তের আলোকে বলেন, ‘আমরা আমাদের গ্রাহকদের বাড়িতে যাচ্ছি, তাদের সঙ্গে দেখা করে ভালো মন্দ খোঁজ খবর নিচ্ছি, এরপরে তাদের কিস্তি পরিশোধের জন্য বলছি। যদি কেউ কিস্তি দিতে রাজি বা আগ্রহী হন, সেক্ষেত্রে তারটা নেওয়া হচ্ছে। তবে কেউ যদি অপারগতা প্রকাশ করেন, সেক্ষেত্রে তার কিস্তি নেওয়া হচ্ছে না বা চাপপ্রয়োগ করা হচ্ছে না।’
লক্ষীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) অঞ্জন চন্দ্র পাল দিগন্তের আলোকে জানান, এনজিওগুলোর কিস্তি আদায় কার্যক্রম সরকার বন্ধ ঘোষণা করে, যা চলতি জুন মাস পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এবিষয়ে জেলার সব এনজিওকে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। এর পরেও যদি কোন এনজিও তাদের কিস্তি আদায় কার্যক্রম অব্যাহত রাখে, আমরা যদি অভিযোগ পাই, তাহলে সেই এনজিওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।