দিগন্তের আলো ডেস্ক ঃ-
নিহত সুমাইয়ার স্বজনদের আহাজারি। ছবি: স্টার মেইল
আরমানিটোলায় অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ আশিকুজ্জামান খান ও ইসরাত জাহান মুনা সরকার দম্পতিসহ চারজন আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে আশিকুজ্জামানকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। ১৬ জনকে পোস্ট অপারেটিভ ইউনিটে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের মোট ২০ জন ভর্তি রয়েছে। সকালের দিকে মোস্তফা নামের এক ব্যক্তি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।
বার্ন ইউনিটের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন জানিয়েছেন, আইসিইউতে ভর্তি ৪ জন ১২ থেকে ২৫ শতাংশ পুড়েছে। তাদের শ্বাসনালী পোড়া রয়েছে। তারা শঙ্কামুক্ত নয়। বাকি ১৬ জন দগ্ধ হয়নি। তবে শ্বাসনালী দিয়ে ধোঁয়া প্রবেশ করায় তাদের ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাদেরও শঙ্কামুক্ত বলা যাবে না।
ইসরাত জাহান মুনা সরকার ও আশিকুজ্জামান খানের স্বজন মো. ফারুক জানান, মুনার প্রায় ২০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। আশিকুজ্জামানের অবস্থা ভালো নয়।তাকে লাইফ সার্পোটে রাখা হয়েছে। আশিকুজ্জামান খান বুয়েট থেকে পাশ করা ইঞ্জিনিয়ার।
কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, মুনা এবং আশিকুজ্জামানের শরীর দগ্ধ হওয়ার সঙ্গে শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। আশিকুজ্জামানের শ্বাসনালীতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
আইসিইউতে থাকা মুনা সরকারের ছোটবোন সুমাইয়া সরকার এ অগ্নিকাণ্ডে ঘটনায় মারা গেছেন। মুনা সরকারের বাবা ইব্রাহিম সরকার আল্লাহর কাছে আকুতি জানিয়ে বলেন, ‘আল্লাহ ছাড়া আমার পরিবারকে কে বাঁচাবেন। আল্লাহ, আমার পরিবারের সদস্যদের বাঁচিয়ে দেন’।
তিনি জানান, আশিকুজ্জামান খানের সঙ্গে তার বড় মেয়ে মুনা সরকারকে বিয়ে দেন দেড়মাস আগে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সময় ওই বাসায় ছিলেন তার ছোট মেয়ে সুমাইয়া সরকার (২০)। অগ্নিদগ্ধ হয়ে তিনি মারা গেছেন। স্ত্রী সুফিয়া সরকার ও ছেলে জুনায়েদ সরকারও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।তাদের শরীর দগ্ধ না হলেও সবার শ্বাসনালী পুড়েছে।
মুনা সরকারের আত্মীয় আমেনা বেগম জানান, তাদের পুরো পরিবার হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। নিহত সুমাইয়ার লাশ ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে সোনারগাঁওয়ে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হবে। নিহত সুমাইয়ার লাশ তার বাবা ইব্রাহিম সরকারসহ পরিবারের কেউ দেখতে পারেননি।তারা সবাই বার্ন ইউনিটে ভর্তি। সুমাইয়া ইডেন মহিলা কলেজে ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। আর আইসিইউতে থাকা মুনা সরকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আর আশিকুজ্জামান বুয়েটে পড়াশোনা করেছেন।
আশিকুজ্জামানের বাবা আবুল কাশেম খান জানান, ছেলেকে মাসখানের আগে বিয়ে করিয়েছেন।পুত্রবধূকে এখনো তুলে আনা হয়নি। এখন ছেলে ও পুত্রবধূ মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। ছেলে ঢাকায় খালার বাসায় থাকতো। শ্বশুরের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিল পরশু রাতে। শুক্রবার রাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ছেলে ও পুত্রবধূসহ পরিবারের প্রায় সবাই এখন বার্ন ইউনিটে। দুর্ঘটনার কথা শোনে সকালেই ময়মনসিংহ থেকে ছুটে এসেছেন তিনি।
শুক্রবার ভোররাতে আরমানিটোলা খেলার মাঠ সংলগ্ন হাজী মুসা ম্যানশনের ছয়তলা ভবনের নিচতলায় কেমিক্যাল গোডাউনে আগুন লেগে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এতে দগ্ধ ও ধোঁয়ার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়া ২০ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।