দিগন্তের আলো ডেস্ক :-
সীমান্ত জেলায় উদ্বেগ, ঘরে ঘরে জ্বর-কাশি
দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ভারত থেকে আসা যাত্রীরা
করোনাভাইরাসের হটস্পটে পরিণত হয়েছে সীমান্ত জেলা চাঁপাই নবাবগঞ্জ। ভারতে বিপজ্জনক করোনাভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় দেশে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় এ জেলায় দ্রুত সংক্রমণ সীমান্ত জেলাগুলোতে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। চাঁপাই নবাবগঞ্জে ক্রমেই বাড়ছে সংক্রমণ। সরকারি হিসেবে শনাক্তের হার ৫৫ ভাগের বেশি। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার হিসাবে এ হার ৬০ ভাগ ছাড়িয়েছে। জেলার অনেক এলাকায় জ্বর ও সর্দি কাশির প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। অসুস্থ অনেকে করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না।
এতে প্রকৃত সংক্রমণ চিত্র জানা যাচ্ছে না। সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় জেলা প্রশাসন সাতদিনের বিশেষ লকডাউন ঘোষণা করেছে। ১১ দফা নির্দেশনা দিয়ে জেলাজুড়ে গতকাল রাত ১২টা থেকে আগামী এক সপ্তাহের জন্য এই লকডাউন কার্যকর হবে। গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিংকালে জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ এ ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি জানান, সম্প্রতি সময়ে চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলায় করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে করোনা সংক্রমণের হার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এখানে করোনা সংক্রমণের হার শতকরা ৫০ ভাগের অধিক। এ ছাড়া সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আগত বাংলাদেশিদের যথাযথ কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হলেও ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতি চরম অবনতি হওয়ায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনাক্রমে জনগণকে সুরক্ষিত ও নিরাপদ রাখতে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে আগামী ৭ দিনের জন্য জেলাজুড়ে লকডাউন কার্যকর করা হলো। এই সময়ে সকল প্রকার যানসহ দোকানপাট, হাট বন্ধ থাকবে। তবে এ সময়ে জরুরি পরিসেবা চালু থাকবে। জরুরি পরিসেবা যেমন-কৃষি উপকরণ, খাদ্যশস্য পরিবহন, কোভিড টিকা, ত্রাণ বিতরণ, গণমাধ্যমকর্মী, ইন্টারনেট লাইন সংযোগ সংশ্লিষ্টরা লকডাউনের আওতার বাইরে থাকবেন। এম্বুলেন্স ও পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করবে। এ ছাড়া শিল্প কলকারখানার শ্রমিকরা নিজস্ব পরিবহনে যাতায়াত করবেন। আগামী ৭ দিন বাইরের জেলা থেকে চাঁপাই নবাবগঞ্জে কোনো পরিবহন ঢুকতে পারবে না এবং জেলা থেকে অন্য কোথাও যেতে পারবে না। অর্থাৎ আন্তঃজেলা পরিবহন বন্ধ থাকবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, লকডাউন চলাকালীন সব ধরনের দোকানপাট ও সাপ্তাহিক হাট বন্ধ থাকবে। তবে কাঁচাবাজার, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য এবং ফার্মেসি খোলা থাকবে। কেউ জরুরি প্রয়োজনে বাইরে গেলে অব্যশই মাস্ক পরিধান করে যেতে হবে। এমনকি জুমাসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে ২০ জনের বেশি অংশ নিতে পারবেন না। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার এ এইচ এম আবদুর রাকিব, সিভিল সার্জন জাহিদ নজরুল চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জাকিউল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
চাঁপাই নবাবগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে চাঁপাই নবাবগঞ্জ সদরে ৪৯ জন, শিবগঞ্জে তিনজন, গোমস্তাপুরে ছয়জন ও ভোলাহাটে একজন রয়েছেন।
ওদিকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর সূত্র জানিয়েছে, যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ ও সিলেটে সংক্রমণ কিছুটা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সীমান্তবর্তী এই জেলাগুলোতে সংক্রমণ বেশি হওয়ার সঙ্গে ভারতে যাতায়াতের একটি সম্পর্ক থাকতে পারে।