দিগন্তের আলো ডেস্ক :-
দলের তৃণমূল পর্যায় থেকে আসা অভিযোগ আমলে নিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা কমিটির শীর্ষনেতাদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। তবে এ ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তৃণমূলে দলের মধ্যে যাতে নতুন কোনো দ্বন্দ্ব তৈরি না হয়, সেদিকে লক্ষ রেখে শুদ্ধি অভিযান চালাবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। যাদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ, তাদের দল থকে বহিষ্কার করা না হলেও সম্মেলনের মাধ্যমে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন না হওয়ায় অনেক জেলায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের ইচ্ছামতো দল পরিচালনা করছেন। জেলা কমিটির অন্য নেতাদের সঙ্গে কোনো সমন্বয় ছাড়াই যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তারা। মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা কমিটির শীর্ষনেতাদের বিরুদ্ধে এমন বিস্তর অভিযোগ তৃণমূলের নেতাদের। এসব অভিযোগ পৌঁছেছে দলের শীর্ষনেতাদের কাছেও।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল রবিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, যেসব জেলায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়নি এবং কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে, সেসব জেলায় দ্রুত কাউন্সিল করার নির্দেশনা দিয়েছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। দলের জেলা শীর্ষনেতাদের হুশিয়ারি দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘চিহ্নিত অপরাধী, চাঁদাবাজ, দখলদার গোষ্ঠীর কাউকে দলে নেওয়া যাবে না। ত্যাগী নেতাকর্মীদের জন্য রাজনীতিতে টিকে থাকার এবং এগিয়ে যাওয়ার পথ সৃষ্টি করে দিতে হবে।’
যে জেলার নেতারাই অভিযুক্ত হবেন, তাদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আবদুুর রহমান। তিনি প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শুদ্ধি অভিযান চলবে। তবে চাইলেই যখন-তখন জেলা সম্মেলন করা যায় না। জেলা সম্মেলনের আগে থানা, উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠন করতে হবে। করোনা পরিস্থিতিও বিবেচনায় রেখে আমাদের সাংগঠনিক কাজ চলছে।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম অবশ্য বলেন, এগুলো দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তিনি প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘দলের সব বিষয় প্রকাশ করা ঠিক নয়। এগুলো আমাদের দলের বিষয়, অভ্যন্তরীণ কৌশল, এগুলো দলে থাকা ভালো।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলেই চলবে শুদ্ধি অভিযান। যেসব জেলা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, সেসব জেলার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা এখন তৃণমূল থেকে পাওয়া অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখছেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট জেলায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অর্থপাচারসহ নানা অভিযোগে এরই মধ্যে ফরিদপুর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নরসিংদী ও সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের মোট ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে গত বছরের ডিসেম্বরে দলের জাতীয় সম্মেলনের আগে তড়িঘড়ি করে ৩১ জেলায় সম্মেলন করা হয়। চলতি বছর সম্মেলন হয়েছে মাত্র দুটি জেলায়। বাকি যে জেলাগুলোতে এখনো দলীয় সম্মেলন হয়নি, সেসব জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের একটি বড় অংশের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের নেতারা।