লক্ষ্মীপুর-ভোলা আঞ্চলিক মহাসড়ক যেন মরণফাঁদ

লক্ষ্মীপুর

দিগন্তের আলো ডেস্ক ঃ-
লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়কটি প্রায় দেড় বছর ধরে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়ে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। মেঘনা নদী হয়ে এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ প্রায় ২০ টি জেলার সহজ যোগাযোগ মাধ্যম এ সড়কটি। কিন্তু একটু বৃষ্টিতে বড় বড় গর্তগুলো পানি ভর্তি হয়ে কাঁদায় পরিণত হয়। এতে যেকোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কা রয়েছে। স্থানীয়ভাবে এটি লক্ষ্মীপুর-মজুচৌধুরীর হাট সড়ক হিসেবে পরিচিত।
তবে এ ব্যাপারে জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানিয়েছেন, সরকার সড়ক সংস্কারের জন্য কোন বরাদ্ধ দিচ্ছেন না। এ কারণে সড়কটি বেহাল জেনেও সংস্কারের কাজ করা যাচ্ছে না। তবে যে পরিমাণ অর্থ তাদের কাছে বরাদ্ধ আছে তা দিয়ে, সড়কের যেসব স্থানে বেশি সমস্যা সেগুলো মেরামত করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই সড়কটির সমস্যা সাময়িকভাবে সমাধান করা হবে।
শুক্রবার (১৯ জুন) বিকালে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার শাকচর ইউনিয়নের বিইউ চৌধুরী ফিশারি এলাকায় সড়কের কাঁদা ভর্তি গর্তে চট্টগ্রামগামী যাত্রীবাহী বাস, বালুবাহী ট্রাক, লেগুনা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা আটকে যায়। এসময় বাসের সামনের দিক সড়কে কার্পেটিংয়ের সঙ্গে লেগে থাকতে দেখা যায়। পরে শ্রমিকরা চাকার নিচ থেকে কাঁদা সরিয়ে গাড়ি নিয়ে স্থান ত্যাগ করতে হয়।
এদিকে মজুচৌধুরীরহাট ফেরিঘাট ও লঞ্চঘাট হওয়ায় প্রায় ১১ কিলোমিটারের সড়কটি জেলার সবচেয়ে বেশি ব্যস্ততম সড়ক। আবার মজুচৌধুরীহাট এলাকার আশপাশে অন্তত ১২ টি বালু মহাল রয়েছে। যেখান থেকে লক্ষ্মীপুরসহ আশপাশের জেলায় বালু বিক্রি হয়। মেঘনার নদী হয়ে দেশের ২০ জেলার যোগাযোগ থাকায় যাত্রীবাহীবাস প্রতিনিয়ত আসা যাওয়া করে। আর প্রতিদিনই এমন দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গাড়ি চালক ও যাত্রীদের। প্রায়ই বিকল হয়ে পড়ে যানবাহন।
জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুর- বরিশাল ও ভোলা সড়কটি প্রশস্তসহ কার্পেটিং উল্টিয়ে নতুন করে করার জন্য প্রায় এক’শ কোটি টাকার টেন্ডার হয়েছে। প্রায় ৪ মাস আগে রি-টেন্ডারও হয়। লক্ষ্মীপুর বাস টার্মিনাল থেকে মজুচৌধুরীরহাট লঞ্চঘাট পর্যন্ত সড়কটি প্রায় ১১ কিলোমিটার। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতার কারণে সড়ক উন্নয়ন কাজটির বরাদ্দ আসছে না। এই জটিলতা শেষ হতে আরও দুই মাস সময় লাগতে পারে। অন্যদিকে সড়কটি সংস্কারের জন্য কয়েকবার অনুমতি চাইলেও কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। একই সঙ্গে আরও কয়েকটি সড়ক সংস্কার করার জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। তবে জেলা অফিসের ফান্ডে যে টাকা রয়েছে তা দিয়ে সড়কের সমস্যাগুলো সমাধান করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
শাকচর ইউনিয়নের কাদিরাগোজা গ্রামবাসী আওয়াল ও সুজন বেপারি জানান, এই সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল ও খানাখন্দে ভরপুর। সড়কটি দিয়ে বাইসাইকেলও চালানো যায় না। বড় ট্রাক, বাস, পিকআপ চলতে তো আরও বেশি বিপদ। সন্ধ্যার পরই সড়কটি পুরো অন্ধকার হয়ে পড়ে। তখন যানবাহনগুলো মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়।
ট্রাক চালক আমির হোসেন জানান, প্রায় দেড় বছর ধরে সড়কটির অবস্থা বেহাল। গত ৬ মাস থেকে সড়কের গর্তে পানি জমে কাঁদা পরিণত হয়। এতে গাড়ি আটকে যায়। এর কারণে মাঝে মাঝে গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে।
জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুব্রত দত্ত জানান, সড়কটি নতুন করে করার জন্য টেন্ডার হয়েছে। বিভিন্ন জটিলতার কারণে বরাদ্দ আসেনি। সড়ক সংস্কারের জন্যও সরকার থেকে কোন বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। তবে তাদের কার্যালয়ের ফান্ডে যে অর্থ রয়েছে, তা দিয়ে সড়কের সমস্যাগুলো সাময়িকভাবে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
প্রসঙ্গত, মেঘনা নদীর সঙ্গে ২০ টি জেলার সহজ যোগাযোগ মাধ্যম হওয়ায় লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মজুচৌধুরীর হাট এলাকায় আধুনিক নৌ-বন্দরের ঘোষণা করা হয়। ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌ-বন্দরসহ ১৭ টি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও ১০ টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত নৌ-বন্দরের কাজ শুরু হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *