দিগন্তের আলো ডেস্ক ঃ-
লক্ষ্মীপুরে স্ত্রী শাহিনুর বেগম (৩৬) ও মেয়ে জামাই রাকিব হোসেনের (২৩) পরকীয়ায় বাধা হওয়ায় খুন হন পানবিক্রেতা জুলফিকার আলী মামুন (৪৫)। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শাহিনুর ও রাকিবকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাদের ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে এক বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রহিবুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন।
জেলা জজ আদালতে সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এতে আদালত তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। রায়ের সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্ত শাহিনুর নিহত জুলফিকার আলীর দ্বিতীয় স্ত্রী এবং রাকিব তার মেয়ে জামাই ও লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের রাজিবপুর গ্রামের হাবিবুল্লাহ চৌধুরীর ছেলে।
নিহত মামুন সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের বিরাহিমপুর গ্রামের মৃত সফি উল্যাহ পাটওয়ারীর ছেলে। তিনি ঢাকা শহরে পানবিক্রেতা ছিলেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, জুলফিকার আলীর দ্বিতীয় স্ত্রী শাহিনুর পরপুরুষে আসক্ত ছিলেন। এনিয়ে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে তার মনোমালিন্য দেখা দেয়। একপর্যায়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের হয়ে এসে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর মজুপুর গ্রামের একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন শাহিনুর। পার্শ্ববর্তী রাজিবপুর এলাকার বাসিন্দা রাকিবের সঙ্গে তার পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্ককে স্থায়ী করতে জুলফিকার আলীর অমতেই ১০ বছরের শিশু কন্যাকে রাকিবের সঙ্গে বিয়ে দেন শাহিনুর।
২০২২ সালের ৬ অক্টোবর শাহিনুরের ভাড়া বাসায় আসেন মামুন। এসময় শাহিনুর ও রাকিবকে আপত্তিকর অবস্থা দেখতে পান জুলফিকার আলী। এনিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। পরে ৯ অক্টোবর রাতে জুলফিকার আলীকে মারধরের পর শ্বাসরোধে হত্যা করেন তারা।
পরে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে জুলফিকার আলীর মরদেহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান শাহিনুর ও রাকিব। চিকিৎসক জুলফিকার আলীকে মৃত ঘোষণা করলে মরদেহ বিরাহিমপুর গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান শাহিনুর। পরে পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে বশিকপুরের পোদ্দার বাজার পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদেন্তর জন্য মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে শ্বাসরোধে হত্যার প্রমাণ পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় নিহতের মা ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে শাহিনুর ও রাকিবসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। এতে আরও তিনজনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়।
তদন্তকালে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অপর আসামি শাহ আহাম্মদকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আজ এ রায় ঘোষণা করেন আদালত।