দিগন্তের আলো ডেস্ক :
নারিকেল, সুপারি আর সয়াবিনে ভরপুর, আমাদের আবাসভূমি প্রিয় লক্ষ্মীপুর। এটি লক্ষ্মীপুরের মানুষের মাঝে প্রচলিত একটি স্লোগান। প্রচুর পরিমাণে নারিকেল, সুপারি ও সয়াবিন এ জেলায় উৎপাদিত হয় বলেই কথাটি ছোটবড় সকলেরই প্রিয়। তবে অর্থকরী ফসল হিসেবে এখানে সুপারি চাষের ব্যাপকতা ও উৎপাদন খুবই বেশি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে এবছর জেলায় উৎপাদিত সুপারির বাজার মূল্য ৩৫০ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ জেলায় কৃষিজমির পাশে কিংবা বাড়ির আঙিনায় সুপারি গাছ রোপণ করে উৎপাদিত হচ্ছে শত শত কোটি টাকার সুপারি। অর্থকরী এ ফসলকে ঘিরে এ অঞ্চলে দেখা দিয়েছে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। এবার লক্ষ্মীপুরের ৫ উপজেলায় ৬ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে সুপারি উৎপাদন হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে সাড়ে ১২ হাজার মেট্টিক টন। যার বাজার মূল্য সাড়ে ৩’শ কোটি টাকা।
সুপারি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন হাটবাজারে সুপারি কেনায় ব্যস্থ হয়ে পড়েন মওসুমের শুরু থেকেই। স্থানীয় বাজারে সুপারির চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় চাষেও আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। সুপারি কেনা-বেচার জমজমাট মোকামগুলোর মধ্যে রয়েছে, সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর শহর, দালালবাজার, চররুহিতা, ভবানীগঞ্জ, মান্দারী, দত্তপাড়া, জকসিন, রায়পুর উপজেলা শহর, হায়দরগঞ্জ বাজার, সোনাপুর, দেনায়েতপুর, খাসেরহাট, মোল্লারহাট, মীরগঞ্জ, রামগঞ্জ উপজেলা শহর, কাঞ্চনপুর বাজার, করপাড়া বাজার ইত্যাদি।
সুপারি ব্যবসায়ী মো. জামাল বলেন, মওসুমের শুরুতে প্রতি পোন (৮০টি) পাকা সুপারি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা দরে কেনা হয়েছে। বর্তমানে ৯০ থেকে ১২০ টাকা দরে কেনা হচ্ছে। তবে কাঁচা সুপারি কেনা হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। মওসুমের শুরুতে কাঁচা সুপারির কেনা হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।
সুপারি চাষী সোহাগ হোসেন বলেন, সুপারি চাষ খুবই সহজ। গাছ বড় হওয়া পর্যন্ত একটু খেয়াল রাখতে হয়। এরপর কষ্ট নেই বললেই চলে। তাছাড়া প্রতি বছরই স্থানীয় বাজারে সুপারির ভালো দাম পাওয়া যায়। এখানকার প্রায় প্রত্যেক বাড়ির আঙ্গিনায় সুপারি বাগান রয়েছে বলেও জানান তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সুপারি গাছে ফুল আসে। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে এ ফুল পাকাপোক্ত সুপারিতে পরিণত হয়। মূলত কার্তিক আর অগ্রহায়ণ মাসেই সুপারির ভরা মওসুম। এখানকার সুপারির প্রায় ৭০ ভাগ নদী-নালা, খাল-ডোবা, পুকুর ও পানিভর্তি পাকা হাউজে ভিজিয়ে রাখে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। আর ৩০ ভাগ সুপারি দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ ছাড়াও রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়।
সুপারিগাছ একবার রোপণ করলে তেমন কোনো পরিচর্যা ছাড়াই টানা ৩৫-৪০ বছর ফলন দেয়। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় অন্যান্য ফসলের চেয়ে সুপারিতে বেশি আয় করা যায়। সুপারি বাগানে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কিংবা রোগ-বালাই কম থাকায় এ অঞ্চলের কৃষকেরা সুপারি চাষের দিকে বেশি ঝুঁকেছেন। এ বছর কাঁচা-পাকা সুপারির ভালো দাম পেয়ে খুশি এখানকার চাষি, গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তবে জেলার কোথাও সুপারির প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র না থাকায় অনেক সময় কৃষকেরা সুপারির ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন বলেও জানা গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (অতিরিক্ত) কৃষিবিদ কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, এখানকার মাটি ও আবহাওয়া সুপারি চাষের জন্য বেশ উপযোগী। আধুনিক পদ্ধতিতে সুপারি বাগান করায় এখানকার কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার এ জেলায় সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক সচ্ছলতার পেছনে এর অবদান অনস্বীকার্য।