লক্ষ্মীপুরে সন্তানকে গলা কেটে হত্যা, মায়ের যাবজ্জীবন

অপরাদ আইন আদালত লক্ষ্মীপুর

দিগন্তের আলো ডেস্ক ঃ-
লক্ষ¥ীপুরে স্বামীর তালাকের হুমকিতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে একমাত্র সন্তান আয়ানুর রহমান আয়ানকে (৩) গলা কেটে হত্যার দায়ে মা সাবিনা ইয়াছমিন শিল্পীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ- দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদ- দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন।
লক্ষ¥ীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, হত্যার ঘটনা স্বীকার করে আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এজন্য আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছেন।

পিপি আরও বলেন, রায়ের সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। গ্রেফতারের পর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

দ-প্রাপ্ত সাবিনা ইয়াছমিন সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়নের মতলবপুর গ্রামের মৃত ছেরাজুল হকের মেয়ে ও লাহাকান্দি ইউনিয়নের চাঁদখালী গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী আজিমুর রহমান আজিমের স্ত্রী।

আদালত ও এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সাবিনা তার ছেলে আয়ানকে নিয়ে বড় বোন আয়েশা বেগমের বাড়িতে বেড়াতে যান। অসুস্থতার কারণে সাবিনা পরদিন ২৬ সেপ্টেম্বর বাড়িতে চলে আসেন। রাতে খাবার শেষে যে যার যার কক্ষে ঘুমাতে যান। মধ্যরাতে হঠাৎ সাবিনার ঘর থেকে বৈদ্যুতিক পাখার বিকট শব্দ শোনা যায়। এতে সবাই ঘুম থেকে উঠে তার কক্ষের সামনে গিয়ে ডাকাডাকি করেন। একপর্যায়ে বেড়ার ওপর দিয়ে পরিবারের লোকজন দেখতে পান, সাবিনা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে পাখার সঙ্গে ফাঁস দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

পাখার আঘাতে তার থুতনি কেটে যায়। এসময় খাটে আয়ানের রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে দরজা ভেঙে ছাবিনাকে আত্মহত্যার থেকে রক্ষা করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পৌঁছে আয়ানের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।

ছাবিনাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে আয়ানের দাদা হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে পরদিন সদর মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া সাবিনার জবানবন্দিতে জানা যায়, ২০১৭ সালে চাঁদখালী গ্রামের আজিমের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছরের মাথায় আজিম সৌদি আরব চলে যান। আয়ান তাদের একমাত্র সন্তান ছিল। ঘটনার আগের দিন বোনের বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন সাবিনা। তাকে মাইজদি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বড় বোন আয়েশাও তার সঙ্গে আসেন। চিকিৎসার জন্য সাবিনার শ্বশুর হুমায়ুন কবির ও শাশুড়ি নাছিমা বেগমের কাছ থেকে কিছু টাকা চান আয়েশা। কিন্তু তারা টাকা দেননি। এতে আয়েশা নিজের বাড়িতে চলে যান।

পরে শ্বশুর-শাশুড়ি ছেলেকে দিয়ে সাবিনাকে তালাক দেওয়াবেন বলে হুমকি দেন। আজিমও সৌদি থেকে শ্বশুরবাড়িতে ফোন দিয়ে সাবিনাকে তালাক দেবেন বলে জানান। এতে হতাশ হয়ে রান্নাঘর থেকে বঁটি নিয়ে ছেলেকে জবাই করে হত্যার পর নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন সাবিনা।

২০২২ সালের ২ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল মিয়া আদালতে সাবিনার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আসামির যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *