লক্ষ্মীপুরে বৃষ্টি থামলেও বাড়ছে পানি, অনেকেই ঘর ছেড়ে উঠছে আশ্রয়ণ কেন্দ্র

সদর

দিগন্তের আলো ডেস্ক ঃ-
লক্ষ্মীপুরে টানা বৃষ্টি থাকলেও আজ শুক্রবার দিনব্যাপী জেলার কোথাও বৃষ্টি হয়নি। তবুও বেড়েছে পানির চাপ। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। যার ফলে মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

শুক্রবার (২৩ আগস্ট) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে পানিবন্দী মানুষের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র চোখে পড়ে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি ছিল। যার কারণে চারদিকে জলাবদ্ধতার সৃষ্ট হলেও ঘরবাড়ি ভালো ছিল। কিন্তু আজকের পানির চাপে বাড়ির আঙ্গিনায় পানি প্রবেশ করেছে। অনেকেই ঘর ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে উঠছে। কেউ বা আশ্রয়ণ কেন্দ্র উঠছে। আজকের রাত তাদের জন্য অনেক ভয়ের। এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসন অথবা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ তাদের খোঁজ খবর নেয়নি বলে জানান অনেকেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, মান্দারী ইউনিয়নের (৩-৯ ওয়ার্ড) বাজার গ্রামের বুক চিরে বয়ে গেছে এই সড়কটি । সড়কটির অধিকাংশ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ রয়েছে। মাঝেমধ্যে ঝুঁকি নিয়ে অটোরিকশা ও সিএনজি চলাচল করছে। অনেক সিএনজি অটোরিকশা মাঝপথে বিকল হয়ে পড়ে আছে। এছাড়াও আঠিয়া তলি জামে মসজিদের চারপাশে পানি টইটম্বুর। মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে পারছেন না।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. ফারুক হোসেন তার ৭ বছরের শিশুকন্যাকে কাঁধে ও দুই বছরের শিশুকে কোলে নিয়ে কোমর পানি পার হয়ে বাড়ি থেকে বের হচ্ছিলেন। এমন সময় কথা হলে তিনি জানান, তার বসতঘরে পানি ঢুকে গেছে। এখন সন্তানদের পাশের গ্রামের শ্বশুর বাড়িতে রেখে আসবেন।

কোহিনুর বেগম নামে এক নারী বলেন, ঘরে পানি ঢুকে সবকিছুই নষ্ট হয়ে গেছে। থাকা ও খাওয়ার কিছুই নেই। সখের ফ্রিজটি কয়েকজনকে নিয়ে পাশের একটি উঁচু বিল্ডিংয়ে রাখছি। অনেক দুঃখ-কষ্টে আমাদের দিনযাপন করতে হচ্ছে। রাতেই অনেক ভয়। দিনব্যাপী বিন্দুমাত্র বৃষ্টি নেই, তবুও এতো পানি। আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই এ বিপদ থেকে উদ্ধার।

প্রবাসী মো. জামাল উদ্দিন আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, রাস্তার পাশে সখ করে বাড়ি করছি। রাস্তা থেকে ১ ফুট উঁচু। এরপরও ঘরে পানি ঢুকছে। খুব কষ্ট আছি ছোট ছেলে-মেয়েদের নিয়ে। আমরা সাহায্য সহায়তা চাই না। আমরা দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।

এদিকে একই এলাকার বাসিন্দা আরিফ, ইমন, কামরুল ও ইব্রাহিম বলেন, আমাদের এলাকায় আজ বৃষ্টি নেই। তবুও চারিদিকে পানি বেড়েছে ১-২ ফুট। আমাদের ধারণা হচ্ছে যেহেতু আমাদের পাশের জেলা নোয়াখালী, ফেনী ও কুমিল্লায় ভয়াবহ বন্যা চলমান। ওইদিকের পানি এখন আমাদের এদিকে চাপ দিচ্ছে। এজন্য আমাদের চলাচলের পথঘাট ও ঘরবাড়ি আঙ্গিনায় পানি প্রবেশ করছে।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান বলেন, এ উপজেলায় প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে জীবন-যাপন করছে। আমরা ইতোমধ্যে পানিবন্দী ৬০০ পরিবারকে সাইক্লোন সেন্টারে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। তাদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। যেখানেই আমরা পানিবন্দী মানুষের সন্ধান পাচ্ছি সেখানেই ছুটে যাচ্ছি।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান ঢাকা মেইলকে জানান, যেসব এলাকায় মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। ওইসব এলাকায় আমাদের নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) কাজ করছে। আমরা পানিবন্দী মানুষকে আশ্রয়ণ কেন্দ্র নেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। নতুন করে যেসব এলাকায় মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে আমরা তাদেরও খোঁজখবর নিচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *