দিগন্তের আলো ডেস্ক
গ্রামের চা দোকান। সাঁটার একটি বন্ধ হলেও অপরটি অর্ধেক খোলা। ভিতরে আছেন দোকানি। দোকানের বেঞ্চ ও মেঝেতে কয়েকজন লোক গাদাগাদি করে বসে রয়েছেন। খাচ্ছে চা-সিগারেট। অনেকেই গল্প করছেন। তার সামনেই জটলা বেঁধে নভেল করোনা ভাইরাস নিয়ে কথা বলছেন যুবকরা। দোকানি তড়িঘড়ি করে পণ্যসামগ্রী দিচ্ছেন ক্রেতাদের। আর আতঙ্কিত চেহারায় বারবার এদিক সেদিক তাকাচ্ছেন।
কিছুক্ষণ পর পুলিশ পুলিশ চিৎকারে দৌড়ে পালিয়েছেন সবাই। সাঁটার নামিয়ে দোকানদারও আত্মগোপন করে। নিস্তব্ধ পরিবেশ ও দোকান বন্ধ দেখে চলে যান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এরপরই দোকান খুলতে লাগলেন ব্যবসায়ীরা। পূর্বের ন্যায় মানুষগুলোও ভীড় করছেন সেখানে। চিত্রটি লক্ষ্মীপুরের বামনী ইউনিয়নের একটি গ্রামের দোকানের।
মরণব্যাধি করোনায় সারাদেশে চলছে ‘অঘোষিত লকডাউন’। অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া ও চা দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। কিন্তু সেটি মানছেনা গ্রামঞ্চলের অধিকাংশ ব্যবসায়ী। প্রশাসনিক টহল টিম নজরদারিতে রেখে কৌশলে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। আর সেখানে প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক লোকের সমাগম হচ্ছে। এতে করোনা ঝুঁকির আশঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, করোনা বিস্তার রোধে দোকানপাট ও জনসমাগম নিষিদ্ধ করেছে সরকার। দুইজনের একসঙ্গে চলাচলেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও চা-দোকানিরা। সংসার চালাতে খোলা রাখছেন দোকান। এজন্য প্রায় সময় জরিমানা সহ বিভিন্ন শাস্তি পেতে হয় তাদের। তবে তিনি মনে করেন, সরকারি সহায়তা পেলে ও প্রশাসনের কঠোর নজরদারি থাকলে দোকানগুলো বন্ধ রাখা সম্ভব হবে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন দোকানদার বলেন, চা-সিগারেট বিক্রির টাকায় পরিবার চলে তার। বিক্রি বন্ধ থাকলে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। তাই বিপজ্জনক জেনেও দোকান খোলা রাখছেন। তবে ক্রেতা ও নিজের নিরাপত্তায় দোকানে রেখেছেন জীবাণুুনাশক স্প্রে। আর শাস্তির ভয়ে নজরদারি রাখছেন প্রশাসনিক টহলে।
বামনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন মুন্সি বলেন, করোনাভাইরাস বিস্তারে জনসমাগমের কুফল সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে ঘরে থাকতে অনুরোধ করা হচ্ছে। কিন্তু কেউই তা মানছে না। চা-দোকান ও হাটবাজারের বিপুল সংখ্যক লোক জমায়েতের ঘটনা ভয়াবহ বিপদের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার ড. এ এইচ এম কামরুজ্জামান বলেন, দোকান বন্ধ ও গণজমায়েত রোধে কাজ করছে পুলিশ। শহরঞ্চল থেকে শুরু করে জেলার প্রত্যেকটি গ্রামে সার্বক্ষনিক নজরদারি করা হচ্ছে। সরকারি নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নিচ্ছেন। সকলের সচেতনতায় ভাইরাসটির সংক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করা অনেকাংশে সম্ভব বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।