লক্ষ্মীপুওে ছেলে ও পুত্রবধু ঘর থেকে বের করে দিল বৃদ্ধ বাবাকে

রায়পুর

দিগন্তের আলো ডেস্ক :-

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে-ঘরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদ করায় এক বৃদ্ধ বাবাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে ছেলে ও তার বউ। নিরুপায় সেই গত ২০দিন ধরে মেয়েদের শশুর বাড়ী ও স্বজনদের বাসা বাড়ীতে গিয়ে থাকতেন। শুক্রবার দুপুরে (২৮ মে) ওই বৃদ্ধ তার ঘরে ডুকে। এসময় বদমেজাজি ছেলে আবদুল খালেক ও তার স্ত্রী কহিনুর বৃদ্ধকে ঘর থেকে আবারও বের করে দেন। পরে বৃদ্ধ শুক্রবার রাতে (২৮ মে) বাড়ীর পাশে চা দোকানে ঘুমান।

শনিবার (২৯ মে) দুপুরে রাস্তায় ঘুরছিল, লাঠিভর দিয়ে। পরনে জামাও ছিল না। এমন অবস্থায় তাকে দেখতে পান স্থানীয় লোকজন। তারাই আবু মোহন মুছা নামের এক সংবাদ কর্মীকে ফোন দিলে সে বৃদ্ধ ও কয়েকজন লোকের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।এতে মুহুর্তেই ভিডিওটি ভাইরাল হলে রায়পুর থানার ওসি ও ভাইস চেয়ারম্যানের নজরে আসে।

পরে শনিবার সন্ধায় বৃদ্ধর কাছ থেকে-সব শুনে ভাইস চেয়ারম্যান স্ব-শরীরে ও ওসি একজন অফিসারকে দিয়ে বৃদ্ধকে তার বাড়িতে নিয়ে যান। অবশেষে ভাইস চেয়ারম্যান ও ওসির হস্তক্ষেপে নিজের বাড়িতে ঠাঁই মিলেছে বৃদ্ধের।

৭০ বছরের ওই বৃদ্ধের নাম হাজি মোঃ ওসমান গনি। তার বাড়ি রায়পুর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড মধুপুর গ্রামের গনি হাওলাদার বাড়ি।

জানা গেছে, বৃদ্ধ ওসমান গনি দির্ঘদিন বিদেশ ছিলেন। প্রায় ৫ বছর আগে স্ত্রী মারা যান। তার সকল সম্পদ তিন ছেলে ও তিন মেয়েকে ভাগ করে দেন। তিনি তিন ছেলের ঘরে খাওয়া খেতেন। তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ২০ দিন আগে (রমজানে) বৃদ্ধ ওসমান গনির সঙ্গে পুত্রবধূ কহিনুর আক্তারের কথা কাটাকাটি হয়। পরে স্ত্রীর পক্ষ নিয়ে ছেলে আবদুল খালেক ঘাড় ধাক্কা দেয় তার পিতা ওসমান গনিকে। প্রতিবাদ করে ওসমান গনি।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ঘর থেকে বৃদ্ধ বাবাকে বের করে দেয় ছোট ছেলে বদমেজাজি আবদুল খালেক। পরে নিরুপায় বাবা রাস্তায় ঘুরে বেড়ান। এঘটনায় বৃদ্ধ কয়েকজন গ্রামবাসীকে বলেন। পরে এক সংবাদকর্মীর মাধ্যমে জানতে পেরে ওসি ও ভাইস চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে সন্ধায় বাড়িতে ঠাঁই মিলেছে বৃদ্ধের।

বৃদ্ধ ওসমান গনি বলেন, ৬ সন্তানের মা মারা যাওয়ার পর তিনি আর বিয়ে করেননি। এরপর থেকেই তার প্রতি বদমেজাজি ছোট ছেলে আবদুল খালেক ও তার পুত্রবধুর অবহেলা শুরু হয়। অবশেষে ঘর থেকেই বের করে দেয়।

এ ব্যাপারে রায়পুর থানার ওসি আবদুল জলিল বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমি ওই বৃদ্ধর ঘটনাটি সাংবাদিকের কাছে শুনে ও ভিডিও দেখে তার বাড়িতে অফিসার পাঠাই। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে তাকে বাড়িতে রেখে আসি। ভবিষ্যতে ওই ছেলেরা ও তার স্ত্রীরা যদি তার বাবার সঙ্গে এ ধরনের কাজ আবারও করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারণ বাবা-মায়ের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব সন্তানের। কোনো সন্তান বাবা-মায়ের দায়িত্ব না নিলে আইন অনুযায়ী জেল-জরিমানা হবে।

তিনি আরও বলেন, এই করোনার উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিতে পারে। তাই শুধু এখানেই নয়, সারা দেশে সোশ্যাল ক্রাইসিস হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স হতে পারে। কারণ হল মনস্তাত্ত্বিকভাবে সংকটাপন্ন মানুষ যখন আরও বেশি সংকটে পড়ে, তখন পরিবারের একটু দুর্বল যারা তাদের ওপর মানসিক নির্যাতনের সুযোগ তৈরি হয়। তখন সংসারের বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, প্রতিবন্ধী ও কর্মহীন মানুষ উপেক্ষিত ও অবহেলিত হতে পারে। এ সব আমাদের সবারই নজর দেয়া উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *