সাহাদাত হোসেন দিপু ঃ-
লক্ষীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার একসময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহি গরু ও মহিষের গাড়ি প্রায় বিলুপ্তির পথে, এই গাড়ি এখন আর তেমন একটা দেখা যায় না বললেই চলে। অথচ কোন একটা সময় বিয়ে করে নতুন বউকে ডাক ডোল পিটিয়ে গরুর গাড়ি সাজিয়ে আবার ঐ গরুর গাড়িতে করে বাড়িতে নিয়ে আসা ছিল বিয়ের মূল আকর্ষন।
লক্ষীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার সবচেয়ে বয়স্ক কয়েকজন ব্যক্তি কুশাখালী ইউনিয়নের পুকুরদিয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মফিজ (৮৭), হাজিরপাড়া ইউনিয়নের নাছিরপুর গ্রামের মোঃ রহিম (৮১), ও মান্দারী ইউনিয়নের সমাসপুর গ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি ইমাম হোসেন (৮৬), বলেন অতীতে লক্ষীপুরের গ্রাম কিংবা শহরের অধিকাংশ বিয়ে কিংবা কোন অনুষ্ঠানে নতুন বউকে গরু ও মহিষের গাড়ি দিয়ে নিয়ে আসতো। গাড়ির চারপাশে নতুন কাপড় দিয়ে বেধে ফুল কিংবা জরী লাগিয়ে গ্রামের আঁকাবাকা মেঠো পথ দিয়ে চলাচল করতো। তখন (ড্রাইভার) হিসেবে থাকতো একজন কৃষক, মাথায় থাকতো বাঁশ দিয়ে তৈরী একধরনের টুপী হাতে থাকতো একটা বেতের লাঠি, শতশত গরুর ও মহিষের গাড়ি ছিল তখনকার সমাজব্যবস্থায় প্রায় সকলের কাছে স্বল্প খরচে যাতায়াতের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম ছাড়াও গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যে হিসেবে সকলে লালন করতো। তারা আরও বলেন তখনকার গরুর গাড়িতে করে যাতায়াতের যে আনন্দ ছিল বর্তমান সময়ের দ্রুত গতির যানবাহনে চড়ে আমরা সেই আনন্দ পাই না। ঐ সময়ে গরু ও মহিষের গাড়িতে যাতায়াতের সময় বেশি লাগলেও খরচ ছিল খুবই সামান্য। বর্তমান সময়ের যানবাহনের মতো ছিলনা কোন শব্দ, রাস্তায় থাকতো না কোন জ্যাম, মারা যেতো না দুর্ঘটনায় কোনো মানুষ।
চন্দ্রগঞ্জ থানার চরশাহী ইউনিয়নের বৃদ্ধা করিম উল্লাহ বলেন একটা সময় আমার গরুর গাড়ি ছিল আমি গরুর গাড়ি চালাতাম। তখন
মাঠ থেকে গরু কিংবা মহিষের গাড়িতে করে কৃষকের বাড়ি ধান পৌঁছে দেয়াসহ পুরো লক্ষীপুর জেলা জুড়ে অধিকাংশ মানুষের যাতায়াতের সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল এই গরুর ও মহিষের গাড়ি। বিশেষ করে আমন মৌসুমে মাঠের পাকা ঘোলা ভরা ধান কৃষকের বাড়িতে স্বল্প খরচে পৌঁছে দেওয়ার একমাত্র মাধ্যম ছিল এই গরুর ও মহিষের গাড়ি ।
মহিষ ও গরুর গাড়িতে করে যারা মাঠ থেকে গাড়িতে করে কৃষকের বাড়ি ধান পৌঁছে দিতেন। গাড়ি প্রতি পারিশ্রমিক হিসাবে পেতেন ৫ থেকে ১০ আটি ধান। একদিকে যেমন কৃষকরা উপকৃত হতেন, তেমনি মৌসুমী কর্মসংস্থান হয়েছে অনেকের।