দিগন্তের আলো ডেস্ক :-
লক্ষ্মীপুরে একটি প্রাইভেট হসপিটাল থেকে ৩ দিনের শিশুকে চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় হাতে-নাতে রিমা আক্তার (২০) নামে এক তরুণীকে আটক করেছে পুলিশ। রবিবার (০৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা শহরের ‘নোভা ট্রমা এন্ড জেনারেল হসপিটাল থেকে পুলিশ ওই তরুণীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
আটক রিমা আক্তার সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দার বাজার এলাকার ব্যাপারী বাড়ীর শাহীনুর রহমানের স্ত্রী।
পুলিশ ও হাসপাতাল কতৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার দালাল বাজার ইউনিয়ন পশ্চিম লক্ষ্মীপুর গ্রামের ব্যবসায়ী সুমন তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সাবিনা ইসলামকে শুক্রবার সকালে নোভা হসপিটালে ভর্তি করে। ওইদিন সাবিনা ইসলাম একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেয়। হসপিটালের দ্বিতীয় তলা ২১৫ নম্বর কক্ষ নবজাত শিশুকে নিয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
হঠাৎ (আজ) রবিবার বেলা ১১ টার দিকে এক নারী এসে বলে। আপনার শিশুকে ডাক্তার নার্গিস পারভীনকে দেখাতে হবে। একথা বলে অভিযুক্ত নারী নবজাত শিশুকে কোলে নিয়ে কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। কিছুক্ষণ শিশুকে কোলে নিয়ে অভিযুক্ত নারী হাসপাতালের অভ্যর্থনা সভাকক্ষে বসে ছিলেন।
শিশুকে কোলে নেওয়ার পর থেকে শিশুর নানী অভিযুক্ত নারীকে চোখে-চোখে রাখছেন। যখন (নবজাত) শিশুকে হাসপাতাল থেকে অভিযুক্ত নারী বের হয়ে একটি রিক্সা উঠেন। তখন শিশুর নানী পিছন থেকে চোর-চোর বলে চিক্কার দিলে হাসপাতালের স্টাফরা দৌড়ে অভিযুক্ত নারীকে জেলা পরিষদের সামনে থেকে আটক করে। পুলিশকে খবর দেয়।
খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিমতানুর রহমান, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ওসি) মো. আজিজুর রহমান মিয়া, সদর মডেল থানার (ওসি) তদন্ত শিপন বড়ুয়াসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়।
নোভা হাসপাতালের কতৃপক্ষ ও ডাক্তার জয়নাল আবেদীন বলেন, শিশু চুরি ঘটনায় জড়িত রিমা আক্তার নামে এক নারীকে হাতে-নাতে আটক করে স্টাফ’রা। পরে পুলিশকে খবর দিয়ে অভিযুক্ত নারীকে সোর্পদ করা হয়।
অভিযুক্ত রিমার অভিযোগ তাকে হাসপাতাল কতৃপক্ষ ফাঁসাচ্ছে। তার স্বামী ও সন্তান রয়েছে। সচেতন মানুষের দাবি বিষয়টি সঠিকভাবে তদন্ত করা হলে আসল ঘটনা জানা যাবে।
লক্ষ্মীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিমতানুর রহমান বলেন, অভিযুক্ত নারীকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনার সাথে যদি অন্য কেউ জড়িত থাকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) লক্ষ্মীপুর কার্যালয় সূত্র জানায়, গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন অগ্রাধিকার-৩ প্রকল্প (আইআরআইডিপি) এর আওতায় মান্দারী ইউনিয়নের যাদৈয়া এবং মোহাম্মদনগর গ্রামের প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিং কাজের নির্মাণ ব্যায় বরাদ্দ হয়েছে এক কোটি ৩৬ লাখ টাকা। ‘এস আর কনষ্ট্রাকশন’ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি পেলেও মূলত সড়কটির নির্মাণ কাজ করছেন ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়কটির নির্মাণ কাজে নিন্মমানের খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বিষয়টি সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এলজিইডির একজন উপসহকারী প্রকৌশলী সরেজমিনে গিয়ে অভিযোগের সতত্যা পেয়ে ঠিকাদার মজিবকে মৌখিক সতর্ক করে নিন্মমানের খোয়া অপসারণের নির্দেশ দিলেও এতে কোন কর্ণপাত করেননি ঠিকাদার মজিবুর রহমান। নিম্মমানের ওই খোয়া দিয়েই রাস্তার কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। প্রভাবশালী হওয়ায় তিনি কাজে অনিয়ম করছেন বলে অভিযোগ তাদের। সড়কটির নির্মাণ কাজে নজরদারি করে মানসম্মত কাজ করানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তারা।
এলাকাবাসী জানান, সড়টির নির্মাণ কাজ শুরু থেকেই অনিয়ম করে আসছেন ঠিকাদার মজিবুর রহমান। সাবগ্রেড করার সময় বালুর পরিমাণ কম দেওয়া হয়েছে, আর সাব বেস এবং বেসের ক্ষেত্রে যে খোয়া দেওয়া হচ্ছে তাও পরিমাণে একেবারে কম এবং নিন্মমানের।
এছাড়া সড়কের পাশের খালে যে গাইড ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে তাতেও কারচুপি করেছেন তিনি। কাজের সিডিউলে আরসিসি ডালাই দিয়ে গাইড ওয়াল নির্মাণ করার কথা থাকলেও সেখানে ইটের গাঁথুনি দিয়ে গাইড ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সড়কের ব্যবহৃত খোয়াগুলো চেয়ারম্যানের নিজস্ব মালিকানাধীন ইটভাটার।
এ ব্যাপারে সড়ক নির্মাণ কাজের দায়িত্বে থাকা ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, রাস্তায় ব্যবহৃত খোয়া ভালো মানের। নিয়ম অনুযায়ী তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।
লক্ষ্মীপুর এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহ আলম পাটওয়ারী জানান, ঠিকাদারকে একাধিকবার বলে দেওয়া হয়েছে কাজের মান ঠিক রাখার জন্য। সিডিউল অনুযায়ী কাজ না করলে কোন বিল দেওয়া হবে না। এছাড়া নিয়ম অনুযায়ী গাইড ওয়াল নির্মাণ না করায় সেটারও বিল পাবেনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।