দিগন্তের আলো ডেস্ক ঃ-
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, সরকারি মাল দড়িয়ামে ঢাল অবস্থা লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জের দেওপাড়া গ্রামে পরিত্যাক্ত ঘোষিত সরকারের প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের সাড়ে ৭ একর সম্পত্তি বেহাত হওয়ার পথে রয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, বিভিন্ন মামলা ও আইনি জটিলতার কারনে প্রায় ৩ যুগের অধিককাল সময় এলাকার প্রভাবশালী ও চন্দ্রগঞ্জ বাজারের ব্যাবসায়ী জসিম উদ্দিনের নিয়ন্ত্রনে এই সম্পত্তিটি ।
শুধু তাই নয়, রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, স্থানীয় তহসিল অফিস সহ ভুমি প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের যথাযথ তদারকির অভাব, কতিপয় অসাধু কর্তাব্যাক্তিদের যোগসাজশে বিষয়টিকে ম্যানেজ করে ঘুষ বানিজ্য, দুর্নীতি ও পক্ষপাতিত্বের কারণে সরকারি এ সম্পত্তি এখন হাতছাড়া হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ বাজারের প্রভাবশালী ব্যাবসায়ী জসিমের বড় ভাই গোফরান প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে জনৈক মুনু মিয়াকে বিক্রেতা সাজিয়ে ১৯৬৯ সালে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দেওপাড়া ১৯০ নং মৌজার ৫৬৩, ৪৪৩, ৪৫০ ও ৪৬৫ নং খতিয়ানের বেশ কয়েকটি দাগের হিন্দুদের প্রায় ৭.৪১ একর জমি দলিল ছাড়াই ভুয়া জমা-খারিজ করেন। এরপর প্রতারকরা জমিগুলো দখলে গিয়ে টিকতে না পেরে ৭৩ সালে রেকর্ডিয় প্রজা শান্তি রঞ্জন সহ কয়েকজনের কাজ থেকে বেশ কিছু জমি আবার ক্রয় দেখিয়ে ভুয়া দলিল সৃজন সহ মায়ের আগে সন্তানের জন্মের মতো ওই জমা খারিজই বহাল রাখার চেষ্টা চালায় তারা।
ওই সময় জরিপ অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন প্রভাব বিস্তার ও সুবিধার বিনিময়ে গোপনে সরকারি দাবীকে অগ্রাহ্য করে প্রতারকরা ভুয়া তথ্য দিয়ে মাঠ জরীপ করে নেয় বলে জানা যায়। কিন্তু এরপরে ও জমি ভোগদখলে তৎসময়ে প্রতারক চক্র বিভিন্ন বাধার সন্মুখিন হলে নানা কৌশল অবলম্ভন সহ গোফরান পক্ষ বাদী হয়ে আদালতে ২৬৯/৮৭ মামলা করে। এরপর ৯২ সালে মার্চে যথারীতি রায় ও পক্ষে নেয় প্রতারকচক্র। কিন্তু একই বছর ২৮ মে সরকার পক্ষ এই রায়ের বিরুদ্ধে জেলা যুগ্ন জজ ১ম আদালতে আপীল মামলা ৬৫/৯২ দাখিল করলে তা রহিত করা হয়। আপিল আদালতের বিচারক ২০০৩ সালে গোফরান পক্ষের ২৬৯/৮৭ মামলা খারিজ এবং স্বত্ব, দখল সহ সকল কিছু ভুয়া দাবী করে সম্পত্তি সরকারের নিয়ন্ত্রনে রাখার পক্ষে রায় দেন।
রায়ের বিরুদ্ধে আবার গোফরান ও প্রতারক চক্র হাইকোর্টে সিভিল রিভিশন দায়ের করে শেষ পর্যন্ত সেখানেও সুবিধা করতে না পেরে মামলাটি স্বইচ্ছায় প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু সম্পত্তি আঁকড়ে ধরে রাখেতে এখানেও থামেনি প্রতারকরা। সর্বশেষ হাইকোর্টের মামলায় প্রতিদ্বন্ধি না করেই প্রতারকরা ২০১২ সালে এবার তারা অর্পিত সঃ প্রঃ ট্রাইব্যুনালে ৭৪৬/১২ মামলা করে। যা এখন চলমান রয়েছে। অথচ উচ্ছ আদালতের রায় বা সিদ্ধান্তের ফলে ট্রাইব্যুনালে এ মামলা চলতে পারে না, যা আদালত অবমাননার শামিল বলে ডিসেম্ভর/২০ লক্ষ্মীপুর জজ কোর্টের সরকারী কৌশলী (জিপি) শ্যামল কান্তি চক্রবর্তী মত দেন।
এদিকে আদালতের রায়কে ঘিরে ১৯৫৫ সালের প্রজাসত্ব বিধিমালা ৪২(ক) মোতাবেক দেওপাড়া মৌজার স্বত্বহীন, পরিত্যাক্ত ও মালিকবিহীন ৭.৪১ ভুমি সরকারি হেফাজতে আনার জন্য ডিপি ৩৯৪ এবং ৪৮৮ খতিয়ান হতে কর্তন করে ১ নং খাস খতিয়ান করা জন্য গত ১০ সেপ্টেম্বর /২০ ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা এমও ফারুক আবেদন করেন। এরই আলোকে নোয়াখালী জোনাল সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা শুনানী সহ লক্ষ্মীপুরের সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা মু.আনোয়ারুল ইসলামকে তদন্তের দায়িত্ব দেন।
দেখা গেছে তদন্তপ্রাপ্ত প্রাপ্ত কর্মকর্তা ঘুষ বানিজ্যে মেতে উঠেন এবং সরকার ও আদালতের রায়কে আমলে না নিয়ে ২০ অক্টোবর/২০ নিজের মন গড়া তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ নিয়ে ২০ নভেম্বর/২০ জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তনুযায়ী সরকারের পক্ষে লক্ষ্মীপুর সদর সহকারী কমিশনার (ভুমি) মোঃ মামুুর রশীদ তদন্ত প্রতিবেদনে অনাস্থা/নারাজী প্রদান করেন।
স্থানীয়দের ধারনা, ভুমিদস্যুদের সহায়তায় রক্ষার দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টদের পারস্পরিক যোগসাজশ, ঘুষ বানিজ্য ও নীরব ভুমিকার কারনে এতে সরকারের বিপুল পরিমানের এই সম্পত্তি যে কোন মুহুর্তে বেহাত হতে পারে। (ধারাবাহিক চলবে)