সাহাদাত হোসেন (দিপু) ঃ-
বর্তমানে মাদক আসক্তির চেয়েও ভয়াবহ রুপ নিয়েছে পরকীয়া প্রেমের আসক্তি। সর্বনাশা পরকীয়া প্রেমের বলি বেড়েই চলছে। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ছে পরকীয়া প্রেমিক-প্রেমিকা। ছারখার হয়ে যাচ্ছে সোনার সংসার। খান খান করে ভেঙ্গে যাচ্ছে রঙিন স্বপ্ন
স্বামীকে খুন-গুম করছেন স্ত্রী, কোথাও স্ত্রীকে স্বামী। মায়ের প্রেমিককে দশ টুকরো করে নদীতে ফেলেছেন পুত্র। ক্ষোভে-অপমানে গলায় দড়ি দিচ্ছেন কেউ। কেউ আবার সবকিছু জেনেই সামাজিক মর্যদা আর সংসার টিকিয়ে রাখতে নীরব থাকছেন। এসবের মূলেই রয়েছে পরকীয়া। দাম্পত্য সম্পর্কগুলোকে তাসের ঘরের মতো ভেঙে খান খান করে দিচ্ছে এই অনৈতিক সম্পর্ক। উচ্চ বিত্ত থেকে শুরু করে দরিদ্র পরিবারেও আঘাত হানছে সর্বনাশা পরকীয়া। লক্ষীপুর জেলায় প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে পরকীয়ার কারণে সংসার ভাঙ্গা। এর বিরাট একটি অংশের নেপথ্যে রয়েছে পরকীয়া।
ধার্মিক জেলা ও আলেম পীর আওলীয়া ক্ষেত রক্ষণশীল সমাজে এমন অনৈতিকতা ভাবিয়ে তুলেছে সচেতন মহলকে। সমাজের বিশিষ্টজনেরা মনে করেন , মূলত ইসলামি শিক্ষার অভাব ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ে এমন হচ্ছে। পারিবারিক বন্ধন শিথিল হয়ে পড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার এবং আকাশ সংস্কৃতিও এজন্য দায়ী। অনৈতিক সম্পর্কের ফলে পরিবার ও সমাজে কলহ-বিরোধ বাড়ছে। সমাজের সচেতন মহলের মতে পিতামাতার পরকীয়া সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা সন্তানের মানসিক বিষন্নতার ও আগ্রাসী মনোভাবের জন্ম দেয়।
লক্ষীপুর জেলায় পরকীয়ার জেরে প্রায় খুনের ঘটনা ঘটছে। নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে এধরনের অপরাধ বাড়ছে বলেও জানান লক্ষীপুর জেলার বিভিন্ন থানার ওসি বৃন্দ।
এর আগেও জেলায় পরকীয়ার জেরে বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। জেলার রামগতী থানায় নিজের খালুর সাথে অনৈতিক সম্পর্কের জেরে স্ত্রী আসমা ও খালু মাকসুদকে হত্যা করে প্রবাস ফেরত রফিকুল ইসলাম হৃদয়। বিয়ের পর বিদেশ চলে যান হৃদয়। তিন বছর পর দেশে ফিরে এই সম্পর্কের কথা জানতে পেরে স্ত্রীকে গলাটিপে আর খালুকে দোকানে ডুকে কুপিয়ে হত্যা করেন হৃদয়।
মায়ের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি কিশোর আরিফ হোসেন (১৯) প্রতিনিয়তই এমন খুনের ঘটনা ঘটছে পরকীয়ার জেরে। খুনের পাশপাাশি আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে।
বেশ কয়েকটি কারণে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। তবে এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পরকীয়ার জেরে সংসারে অশান্তি। সালিশ আদালতে আবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ছেলেদের আবেদনের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে পর পুরুষের সঙ্গে স্ত্রীর সম্পর্ক, সংসারে মানিয়ে না চলা, স্বামীর কথা না শোনা। আর মেয়েদের বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনের প্রধান কারণগুলো হচ্ছে যৌতুকের জন্য নির্যাতন, অন্য নারীর সঙ্গে স্বামীর সম্পর্ক বা দ্বিতীয় বিয়ে, স্বামীর নেশা কিংবা জুয়ায় আসক্ত ।
জেলা পরিসংখ্যানে বলছে, বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তি এবং আইনি সহযোগিতা দিতে কাজ করে এমন একটি সংগঠনের দায়িত্বশীল কয়েকজন বলেন, আমাদের কাছে যেসব ঘটনা আসছে তার মধ্যে পারিবারিক বিরোধের প্রধান কারণ পরকীয়া। প্রায় সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে পরকীয়া সংসার ভাঙ্গার প্রবণতা বাড়ছে। জানা যায়, এমন অনেক পরিবার রয়েছে যারা লোকলজ্জা এবং সামাজিক মর্যাদার কথা বিবেচনা করে স্বামী বা স্ত্রীর পরকীয়ার বিষয়টি জেনেও নিরবে সহ্য করে চলেছেন। এসব পরিবারে নিয়মিতই ঝগড়া বিবাদ লেগে আছে। এর প্রভাব পড়ছে সন্তানদের উপর।
সামাজিক, রাজনৈতিক , ও দায়িত্বশীলদের মতে ধর্মীয় ও পারিবারিক অনুশাসন মেনে না চলায় নৈতিক অবক্ষয় হচ্ছে। আর এ কারণে সমাজে পরকীয়ার মতো অনৈতিক সম্পর্ক বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহারের কারণে এ ধরনের অনৈতিকতার বিস্তার ঘটছে।