সাহাদাত হোসেন (দিপু) ঃ-
আইনের তোয়াক্কা না করেই লক্ষীপুর জেলা খাদ্য ভান্ডার ক্ষেত জেলাজুড়ে প্রচুর ফসলি কৃষিজমিতে গড়ে উঠেছে অবৈধ ইটভাটা।
এসব ভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের অনুমোদন নেই। বিগত বছরগুলোর মতো এবারও নিবন্ধনহীন ভাটাগুলো উৎপাদনে হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে ইট তৈরির শেষ মুহূত্যের প্রস্তুতি চলছে আবার অনেকের ইট বেরিয়েছে। ইটভাটা মালিকরা বলছেন, নিবন্ধন না থাকলেও তারা মূল্য সংযোজন কর, আয়কর দেন এবং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছেন। প্রশাসন বলছেন, যে কোনো অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে তারা তৎপর। আর ইট উৎপাদন শুরুর আগেই অবৈধ ভাটাগুলো উচ্ছেদ করে কৃষিজমি রক্ষার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। লক্ষীপুর জেলা ,উপজেলা, ও থানার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে অসঙ্খ ইটভাটা বিশেষ করে চন্দ্রগঞ্জ থানা এলাকাতে , মান্দারী , দিঘুলী, হাজিরপাড়া, শান্তির হাট,পুকুরদিয়া, কুশাখালী ,উত্তর জয়পুরসহ বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে গড়ে উঠেছে অন্তত ১০টি ইটভাটা। এদের কারও নেই লাইসেন্স; আইনও মানছেন না কেউ। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ভাটা বন্ধে কোনোই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।উৎপাদন মৌসুমে এসব ইটভাটা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে প্রায় ১০০ বিঘা ফসলি জমি ব্যবহার করে। এ পরিমাণ জমিতে প্রত্যেক মৌসুমে চার হাজার মণ ধান উৎপাদন হবে। যার বাজারমূল্য অর্ধকোটি টাকা।
ইট তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় ফসলি জমির উপরিভাগের উর্রর মাটি (টপসয়েল)। এতে জমির শক্তি হ্রাস পাচ্ছে এবং ফসল উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। আবার কয়েকটি ভাটায় নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবাধে কাঠ পোড়ানো হয়। এর বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় ফসল, গাছ-গাছালি বিনষ্টের পাশাপাশি বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশ। সুস্থ পরিবেশের জন্য এসব ইটভাটা এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ (সংশোধিত-২০১৯) অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া কোনো ইটভাটা চালানো যাবে না। এর ব্যত্যয় হলে কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। এ ছাড়া ইটভাটা নির্মাণের আগে পরিবেশ অধিদপ্তর, বিএসটিআইসহ সরকারি কয়েকটি সংস্থার ছাড়পত্র নেয়া বাধ্যতামূলক। কাগজে-কলমে এমন নিয়ম থাকলেও তা মানতে নারাজ ইটভাটা মালিকরা। প্রশাসনের কঠোরতার অভাবকে পুঁজি করে অবৈধ ইটভাটা চলছে বছরের পর বছর। বেসরকারী এক
হিসেব মতে, একটি ইটভাটা প্রতি মৌসুমে ৩০ লাখ ইট উৎপাদন করে থাকে। গড়ে এক ফুট গভীরতায় মাটি কাটা হলে একটি ভাটার জন্য বছরে মাটির প্রয়োজন হয় ১৫-১২ একর জমির। সেই হিসেব অনুযায়ী থানার ১০ টি ইটভাটার জন্য বছরে ১৫০ একর জমির মাটি কাটা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইটভাটা পরিষ্কারের কাজ করছেন শ্রমিকরা, চলছে ইট তৈরির প্রস্তুতি। ফসলি জমিতে ইট শুকানোর (খলা) তৈরি করা হচ্ছে।
লক্ষীপুর জেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মোঃ জাকির হোসেন জানান, মাটির উপরিভাগে যে গুরুত্বপূর্ণ জৈব পদার্থ থাকে তা নীচের মাটিতে থাকে না। জমির উপরিভাগের মাটি কাটা হলে কয়েক বছরেও প্রয়োজনীয় জৈব পদার্থের ঘাটতি পুরণ হবে না। এতে ফসল উৎপাদন কমে যাবে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে লক্ষীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইমরান হোসেন জানান, অবৈধ ইটভাটা পরিচালনার সুযোগ নেই। মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করে তিনি প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।