লক্ষীপুরে অনলাইন গেম ও ফেসবুকে আসক্তির কারণে” বিপথগামী স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা

লক্ষ্মীপুর

সাহাদাত হোসেন (দিপু) ঃ-

‘আসক্তি’ সবার কাছে একটি সুপরিচিত শব্দ। আসক্তি হলো কোন কিছুর প্রতি এমন তীব্র নেশা, টান বা মোহ যা থেকে সামান্য সময়ের জন্য বিচ্যুত হলে মানসিকভাবে কেউ চরম অসুস্থ অনুভব করে। যেমন মদ বা মাদক জাতীয় দ্রব্যাদির প্রতি কারোর নেশা থাকলে তাকে আমরা মাদকাসক্ত বলে থাকি। কেহ ধুমপানে নেশাগ্রস্থ হলে তাকে বলি ধুমপানাসক্ত। এ ধরণের আসক্তি সম্পর্কে আমরা সচরাচর শুনে থাকি, কিন্তু অনলাইন গেম ও ফেসবুকে আসক্তি বর্তমানে লক্ষীপুর জেলার স্কুল শীক্ষার্থীদের জন্য এক মারাত্মক আসক্তি, যে ব্যাপারে আমরা অনেকেই জানিনা বা অহর্নিশ শুনতেও পাইনা। সাম্প্রতি লক্ষীপুর জেলার অধিকাংশ হাইস্কুল গুরে দেখা যায় স্কুল পড়ুয়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর হাতে স্মার্টফোন, বলাছলে কমবেশি প্রায় সকলের নিজস্ব ফেসবুক আইডি আছে, বিশেষ করে (৭ম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণি) শিক্ষার্থীরা। ক্লাসের মধ্যেই সুযোগ পেলে পড়াশোনা বাধ দিয়ে অনলাইন গেম ফেসবুক নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে তারা।

বর্তমানে শিক্ষাধারা অব্যাহত রাখতে অনলাইন শিক্ষার প্লাটফর্মই একমাত্র অবলম্বন। কারণে-অকারণে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে বসতে হয়। দীর্ঘ সময় ধরে অনলাইন শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা ক্লাসের অন্তরালে ঝুকে পড়ছে নানা ধরনের অপ্রাসংগিক বিনোদনে যা তাদেরকে মারত্মকভাবে আসক্ত করে তুলছে। অনলাইন গেম ও ফেসবুক এদের মধ্যে অন্যতম। সুযোগ পেলেই শিক্ষার্থীরা ক্লাস চলাকালীন সময়ে ফেসবুক ও অনলাইন গেমসের দিকে ঝুঁকছে। অনলাইনে পড়ানোর সময় ইন্টারনেটে শিক্ষকদের তেমন কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় শিক্ষার্থীরা ফোন গেমিংয়ে জড়িয়ে পড়ে, ইউটিউবে অশ্লীল ছবি ও গানের প্রতি তাদের আসক্তি বাড়ে এবং কখনো কখনো ফেসবুক চ্যাটিং-এ যুক্ত হয়ে যায়। যা অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সোশাল মিডিয়ায় আসক্তি বলতে ডিজিটাল ডিভাইসের প্রতি এমন মোহ বা টান যা ব্যবহারকারী স্কুলশিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন করে তোলে, তথা ভিডিও গেম, অনলাইন বিনোদন, মোবাইল অপারেশন, এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্ক প্ল্যাটফর্মগুলিতে নেশাগ্রস্থ করে রাখে। এককথায়, সোশাল মিডিয়ায় আসক্তিতে আক্রান্ত কোমলমতি শীক্ষার্থীরা অনলাইন কার্যক্রমে এমনভাবে ঝুকে পড়ে যা তার দৈনন্দিন আবশ্যকীয় পড়াশোনাসহ গুরুত্বপূর্ণ কর্মকান্ড সম্পন্ন করা থেকে বিরত রাখে এবং তার স্বাভাবিক আচার-আচরণেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে । সব বয়সের মানুষের মধ্যে এ আসক্তি দেখা দিলেও কচিকাঁচা স্কুল শিক্ষার্থীরা এ আসক্তিতে বেশি আক্রান্ত। অনলাইন গেম, সোশাল মিডিয়া ও ফেসবুকে আসক্তি স্কুল পড়ুয়া ছাত্র – ছাত্রীদের মাঝে সম্পর্কের সূক্ষ্ম দিকগুলো দুর্বল করে দেয় এবং সামাজিকভাবে একে অন্যের মধ্যে দুরত্ব তৈরি করে। বাংলাদেশে ইন্টারনেট এবং তথ্যপ্রযুক্তির
ব্যবহার বিষ্ময়করহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার সত্তর ভাগ স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ।

ফেসবুকের সোশাল মিডিয়া, ও ইন্টারনেট ব্যবহার বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনের জন্য বড় ধরনের হুমকি। সারা বিশ্বে ফেচবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বিবেচনায় ঢাকা দ্বিতীয় যার সংখ্যা ২২ মিলিয়ন বা ২ কোটি ২০ লাখ। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সারাবিশ্বে গড়ে ২৭০ কোটি ব্যবহারকারী কোনো না কোনোভাবে ফেসবুক পরিবারের যে কোন সেবার সঙ্গে যুক্ত।

সময়ের আবর্তে সবকিছুই পরিবর্তন হচ্ছে। জীবনের রূপ ও বর্ণে পরিবর্তন এসেছে। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে নতুন চিন্তাগুলি আসছে এবং পুরানো চিন্তার জগতকে গ্রাস করছে। বিকেলে মাঠে খেলতে যাওয়া, বন্ধুদের সাথে একসাথে বাইরে বেরোনো, পরিবারের সাথে বসে গল্প করা, সহপাঠীদের সাথে বিনোদন করা – এসব এই ডিজিটাল যুগে নতুন প্রজন্মকে যেন কেবল আড়ষ্ঠ করে চলেছে। কখোনও বা কয়েকজন বন্ধু একসাথে বসে গল্প করলেও সেখানে দেখা যায় সবার নজর ফোনের চার-কোণার স্ক্রিনে। এখন কেউ কাউকে সময় দেয় না। ফলস্বরূপ, শিক্ষার্থীদের মাঝে এ গেমাসক্তি দিন দিন বেড়েই চলছে।

এখন, শিক্ষার্থীরা বিনোদনের জন্য অনলাইন গেমস, পাবজি এবং ফ্রি ফায়ার বেছে নেয়। যদিও সরকার এই গেমগুলো বিপদজনক হওয়ায় ইতিমধ্যে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করেছে, কিন্তু বিপিএনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এই গেমগুলো খেলা অব্যাহত রেখেছে, ঘরের এক কোণে বসে মাতাল হয়ে অনলাইনে ভিডিও গেম খেলছে। তারা ঘন্টার পর ঘন্টা স্ক্রিনের চার কোণে তাদের সময় পার করছে। শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের জন্য সর্বাধিক জনপ্রিয় অনলাইন ভিডিও গেমগুলি হ’ল পাবজি এবং ফ্রি ফায়ার, যা আজকাল অত্যধিক খেলতে দেখা যায়।

পাবজি গেমের বিশ্লেষণে দেখা যায়,এটি চার গ্রুপে খেলা যায়। এই চারজন খেলোয়াড় ১০০ জনকে হত্যার বড় লড়াইয়ে লিপ্ত হয়ে হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। এই গেমের মূল ভিত্তি হ’ল ‘হত্যা করো, বেঁচে থাকো’। এককথায় ‘টিকে থাকার জন্য, হত্যা করো’ এটি এ গেমটির মূল লক্ষ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *