দিগন্তের আলো ডেস্ক :-
কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে একটি ডাটাবেজ তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। এরই মধ্যে এই পরিকল্পনার আওতায় রাজশাহী, সিলেট, লক্ষীপুর, চাঁদপুরের মতো কয়েকটি শহরে ডাটাবেজ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। শুধু কিশোর অপরাধীরা নয়, এ তালিকায় থাকছে তাদের মদদদাতা ‘বড় ভাইদের’ নামও।
পুলিশের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র বলছে, কিশোর গ্যাং এই মুহুর্তে একটি বড় মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই মূলত এই ডাটাবেজ তৈরির কাজ করছে পুলিশ।
এ বিষয়ে পুলিশের মুখপাত্র এআইজি সোহেল রানা ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, কিশোররা যেন বড় কোন অপরাধে না জড়িয়ে পড়ে সে বিষয়ে পুলিশ সর্বদা সচেতন। এই ধরনের বিষয়গুলো বেশ যতেœর সঙ্গে ডিল করা হয়। তারপরও গত কয়েক বছরে কিশোর অপরাধীরা বড় কয়েকটি ঘটনা ঘটিয়েছে। যা নিয়ে দেশের মানুষ শংকিত হয়েছে, শংকা রয়েছে আমাদেরও।
তিনি আরো বলেন, অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে তাদের সন্তানরা যেন অপরাধপ্রবণ হয়ে না উঠে। পারিবারিকভাবে শিক্ষার গণ্ডি আরো বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো বেশি দায়িত্ব নিয়ে শেখাতে হবে। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে হবে।
জানা গেছে, রাজশাহী, সিলেট এবং চাঁদপুরে এরই মধ্যে ডাটাবেজ তৈরির কাজ শুরু করেছে পুলিশ। তিন জেলাতে পুলিশের উর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা মূলত অপরাধে জড়িত হতে পারে এমন কিশোরদের একটি বায়োডাটা নিজেদের কাছে রাখতে চায়। যাতে করে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধীকে খুঁজে বের করাটা সহজ হয়।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) বলছে, তারা তিন স্তরের অপরাধ চক্রের সদস্যদের ডাটাবেজ তৈরি করতে মাঠে নেমেছে। গত সপ্তাহ থেকে তালিকা তৈরির কাজও শুরু হয়েছে।
তালিকায় কিশোর অপরাধীদের পাশাপাশি তাদের মদদদাতা বড় ভাইদের নামও রাখা হচ্ছে। কেন কিশোর অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে, কারা দিচ্ছে মদদ এবং অপরাধ সংগঠনের জন্য প্রয়োজনীয় যোগান কোথা থেকে আসছে আপাতত এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজছে পুলিশ।
তৈরিকৃত ডাটাবেজে কিশোর অপরাধীদের অভিভাবকদের নাম-ঠিকানা, ন্যাশনাল আইডি কার্ড, টেলিফোন নম্বর ও তাদের কর্মস্থলের বিবরণও থাকবে। এছাড়াও এসব অপরাধীদের অবস্থান দ্রুত নিশ্চিত করতে যতো ধরনের তথ্য প্রয়োজন তার সবই রাখবে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, সাজা কিংবা শাস্তি নয় বরং তাদের সংশোধন করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্যই এই ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়াও অভিভাবকদের সচেতন করতে বেশকিছু মাধ্যম তৈরি করা হচ্ছে। যেখানে মাদক ও অপরাজনীতি থেকে তাদেরকে সচেতন করা হবে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার নিশারুল আরিফ ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, সিলেটে অনেক কিশোর সাইবার ক্রাইমের সঙ্গে সম্পৃক্ত। অনেক কিশোর রয়েছে যারা দল বেঁধে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ইভটিজিংয়ের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। অনেকে আবার এর চেয়েও বড় অপরাধে জড়াচ্ছে। এরই মধ্যে এদেরকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। চিহ্নিত হয়েছে ৩০ জনের বেশি বড় ভাইও। এখন প্রতিদিনই এদের তথ্য সমৃদ্ধ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, কিশোরদের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত যারা নষ্ট করছে আমরা তাদের নিয়ে ভাবছি। কারণ মানুষ কিন্তু অপরাধী হয়ে জন্মায় না। অসৎ সঙ্গ এই কাজে প্ররোচিত করে। এজন্য পারিবারিকভাবে সচেতন হতে হবে। আমরা পারিবারিক শিক্ষাকে কাজে লাগিয়েই অপরাধী কিশোরদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে চাই।
এদিকে সিলেটের মতো রাজশাহী নগরীতেও হচ্ছে ডিজিটাল ডাটাবেজ। এরই মধ্যে নগরীর ৫০০ স্পটে বসানো হয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। পুরো নগরীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) বলছে, কিশোররা যেন অপরাধে জড়িয়ে বিপথগামী না হয়- সেটি নিশ্চিত করতে চায় পুলিশ।
রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, অপরাধে জড়িয়ে পড়া কিশোরদের সংশোধন করতে চাই আমরা। এরা যেন রাষ্ট্রের আইস সম্পর্কে সচেতন হয়। এর সঙ্গে মানবিকতা ও মূল্যবোধ যদি জাগ্রত করে দেয়া যায়, তাহলে অপরাধ অনেকাংশে কমে যাবে।