দিগন্তের আলো ডেস্ক :
প্রেম কখনো মধুর, কখনো বেদনা বিধুর, কখনো কাঁদায়, কখনো হাসায়, কখনো কাছে, কখনো সে দূর বহুদূর….। বাংলা সিনেমার গানের এই অংশ বিশেষ আসলে বাস্তব জীবনে প্রেমের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কখনো কখনো এমনই হয়।
এরকমই একটি ঘটনা ঘটেছে, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন মান্দারী ইউনিয়নে। প্রেমিক যুগল দুই বছর ধরে তাদের ভালোবাসার গভীর সম্পর্কে হাবুডুবু খায়। অভিভাবকদের বাঁধায় কখনো তাদের ভালোবাসায় ছিড় ধরাতে পারেনি। তাই দু’জনে গোপনে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে এবং শারীরিক সম্পর্কে জড়ায়। তবে বিয়ের কথা লোকমুখে জানাজানি হলেও তাদের বিয়ের স্বপক্ষে কোনো প্রমাণপত্র পাওয়া যায়নি।
অবশেষে গত ২৭ মার্চ তারিখে বয়সের কারণে মেয়ে উপযুক্ত না হওয়ায় তার পিতার দায়েরকৃত অপহরণ ও ধর্ষণ মামলায় পিতা-পুত্রকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রেমিক সাকিব খান (২০) মান্দারী ইউনিয়নের মিয়াপুর গ্রামের চৌকিদার বাড়ির দরিদ্র কৃষক মো. আলাউদ্দিনের ছেলে। মেয়ে একই ইউনিয়নের উত্তর দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা। মেয়েটি স্থানীয় যাদৌয়া ইসলামীয়া মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্রী। কিশোরী প্রেমিকা ও প্রেমিক সাকিব দু’বছর ধরে তাদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি করে। এ দিকে মেয়ের বাবা একাধিকবার পারিবারিকভাবে বিষয়টি সমাধান করে মেয়েকে নিজেদের জিম্মায় নেওয়ার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। এনিয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে ছেলের বাড়িতে ও বিভিন্নস্থানে একাধিকবার শালিস বৈঠকও হয়েছে।
অপরদিকে, ভালোবাসার সম্পর্কে দু’জনের সম্মতিতে পালিয়ে গোপনে বিয়ে এবং শারীরিক সম্পর্কের জেরে পিতা-পুত্র ও ছেলের আরো দুই সহপাঠীসহ ৪ জনকে আসামি করে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলা দায়ের করায় এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে কিশোর ও যুবসমাজের মধ্যে। পুলিশ যখন প্রেমিক সাকিব ও তার পিতাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়, ঠিক তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রেমিক প্রেমিকার অনেকগুলো অন্তরঙ্গ ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে ধর্ষণ মামলার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় শুভাকাঙ্খীদের।
প্রেমিক সাকিবের বড় ভাই রাকিব হোসেন (২২) জানায়, তার বাবা একজন কৃষক। পারিবারিকভাবে তারা দরিদ্র হওয়ায় অর্থ সংকটের মধ্যেই তাদেরকে চলতে হয়। ছোট ভাই সাকিবের প্রেমের সম্পর্কের কারণে এখন তার বাবাকেও জেলখাটতে হচ্ছে। তাই তারা আইনের মাধ্যমে একটি ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, বিষয়টি ভালোভাবে চেষ্টা করলে বা ছেলে ও মেয়ে উভয়পক্ষের সম্মতি নিয়ে মেয়ের বয়স না হওয়া পর্যন্ত এমন শর্তে সামাজিকভাবেও বিষয়টি সমাধান করা যেত। কিন্তু একটি প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে ধর্ষণ মামলায় জড়িয়ে একটি নিরীহ পরিবারকে সর্বস্বান্ত করা হচ্ছে। ঘটনাটি দুঃখজনক বলেও তারা আপসোস করেন।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (এসআই) মো. সফিক উল্যাহ জানান, সাকিব ও তার বাবাসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে অপহরণ ও নারী শিশু নির্যাতন দমন (ধর্ষণ) আইনে মামলা দায়ের করেছেন কিশোরী কন্যার বাবা। পুলিশ ছেলে ও তার বাবাকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়েছে। পাশাপাশি মেয়েটি আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। আমরা তদন্ত করে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা ব্যবস্থা নিচ্ছি।